যুগান্তর :
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অনিক সরকার বলেন, শিবির সম্পর্কে আবরার মুখ না খোলায় আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। তখনই তাকে বেধড়ক পেটাতে থাকি।

শনিবার এভাবেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন অনিক সরকার।

জবানবন্দিতে অনিক বলেন, আগে থেকেই অর্থাৎ ঘটনার ৪-৫ দিন আগে আবরার আমাদের টার্গেটে ছিল। ঘটনার দিন সে (আবরার) গ্রামের বাড়ি থেকে আসায় আমাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয় সন্ধ্যার পর তাকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডাকা হবে। এরপর রাত ৮টার পর আবরারকে ওই কক্ষে ডাকা হয়।

সে সময় সঙ্গে তার মোবাইল ল্যাপটপ আনা হয়। তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই সময় আবরার চুপ ছিল। একপর্যায়ে তার মোবাইল ও ল্যাপটপ ঘেটে উস্কানিমূলক কিছু তথ্য পাই আমরা। এরপর মারধর শুরু হয়। এরপরই আবরারকে প্রথম চর-থাপ্পড় মারে মেহেদি। এরপর আমি তাকে কিল-ঘুষি দেই। বলি যে, ক্যাম্পাসে কারা কারা শিবির করে। তখন ইফতিও চর-থাপ্পড় মারতে থাকে। একপর্যায়ে সামসুল আরেফিন ক্রিকেট স্ট্যাম্প নিয়ে আসে।

এরপর আমি (অনিক) ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পায়ে পেটাতে থাকি। তারপর দু’হাত টান টান করে স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করি আবরারকে। আবরার তখন চিৎকার করে কাঁদতেও পারেনি। কারণ অন্যরা আবরারের মুখ চেপে ধরে রেখেছিল। এভাবে থেমে থেমে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটাতে থাকে ইফতি, মেফতাহুল জিয়ন। একই কায়দায় সেও পেটায় আবরারকে।

এভাবে মার চলছিল রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। এরপর আবরারকে কক্ষে রেখে দিয়ে ইফতি, জিয়ন ও সেসহ অন্যরা ক্যান্টিনে খেতে যায়। খাবার খেয়ে ফিরে এসে দেখতে পায় আবরার মেঝেতে পড়ে আছে। তখন আবরার বমি করেছে। আমি ভাবি সে ভান করেছে। আবারও স্ট্যাম্প দিয়ে আমি তাকে পেটাই। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে মেঝের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা আবরারের পিঠে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

সে আবরারকে গোসল করিয়ে হাতে-পায়ে মলম লাগিয়ে দিতে বলে। এ সময় আবরার দ্বিতীয়বার বমি করে। তখন আবরারের কক্ষ থেকে তার কাপড়-চোপড় নিয়ে আসে অন্যজন। আবরারকে ওই কক্ষ থেকে বের করে পাশের ২০০৫ নম্বর কক্ষে নেয়া হয়। ওই কক্ষে আবরার বমি করে। মেহেদী তখন আবরারকে পুলিশের হাতে দেয়ার জন্য নিচে নামাতে বলেন।

এরপর সে, জেমি, মোয়াজ ও শামীমসহ ৩-৪ জন তাকে কোলে করে সিঁড়ি ঘরের পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পুলিশ ও চিকিৎসকদের খবর দেয়া হয়। এরপর চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অনিক স্বীকারোক্তিতে আরও বলেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল শিবির শনাক্ত করা। তার কাছ থেকে হলের কিছু শিবিরের নাম জানার চেষ্টা ছিল তাদের। প্রথম দিকে আবরার নামগুলো বলছিলেন না। ওই সময় তিনি এবং শিবির কারা করে তা জানতে তারা আবরারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।

এর পরও আবরার মুখ খোলেননি। আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। স্ট্যাম্প দিয়ে আবরারের পায়ের পাতা, হাঁটু, হাতে পেটাই। আবরার মারা গেছে- আমরা বুঝতে পারিনি। এ ঘটনায় আমি অনুতপ্ত।

গত ৬ জুন আবরার খুন হওয়ার পরপরই ওই রাতে বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে যে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের একজন অনিক। বুয়েট ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পঞ্চদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী। গ্রেফতারের পর এই ১০ জনের সঙ্গে অনিককেও পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ।