বলরাম দাশ অনুপম:

পর্যটন শহর কক্সবাজারে যোগাযোগ ব্যবস্থার কাহিল অবস্থা বিরাজ করছে। এখানকার প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে সড়ক, উপ-সড়ক ও এলাকার অলি-গলির সড়কগুলোর অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। তার মাঝে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দিনভর এবং শুক্রবার সকাল থেকে দেয়া বৃষ্টি যেন মরার উপর খরার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামান্য বৃষ্টির পরই মনে হয় রাস্তাগুলো যেন ধান বোনার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সবমিলিয়ে পর্যটন শহর কক্সবাজারের প্রতিটি ক্ষত-বিক্ষত সড়ক যেন বর্তমানে মরন ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সড়ক দিয়ে যানবাহনতো দূরের কথা সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে পর্যন্ত চলাচল করতে দু:সাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই বললেই চলে। পর্যটন শহরের সড়কগুলোর অবস্থা দেখে পর্যটকসহ স্থানীয়রা কোমড়ে হাত দিয়ে দীর্ঘ নি:শ^াস পেলে সিদ্ধান্ত নেয় কোন পাশ দিয়ে চলা যাবে বা হাঁটা যাবে।

সরেজমিনে শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকার সড়ক পরিদর্শন করে দেখা গেছে- প্রতিটি সড়কে এখন ক্ষত চিহৃ দৃশ্যমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে সড়ক, উপ-সড়কগুলোর অধিকাংশই। প্রথম শ্রেণীর কক্সবাজার পৌরসভার সড়ক, উপ-সড়কের দৈন্যতা দেখার জন্য তীক্ষè দৃষ্টি সম্পন্ন চোখ থাকতে হবে না। অন্ধ লোকজনও পৌরসভার দৈন্যতা দেখতে পান অনেক বেশী। আর এজন্য শহরের ব্যস্ততম বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, বড় বাজার, আইবিপি রোড, সার্কিট হাউস সড়ক, কলাতলী সড়ক (হোটেল-মোটেল জোন এলাকা), বার্মিজ স্কুল-মার্কেট সড়ক, টেকপাড়া সড়ক, মাছ বাজার সড়ক, বাহারছড়া বাজার সড়ক, হাসপাতাল সড়ক, স্টেডিয়াম সড়কে গেলেই হবে। এর মধ্যে অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থা বিরাজ করছে সমুদ্র সৈকতের সী-গাল থেকে সুগন্ধা পয়েন্টের সড়ক, হাসপাতাল সড়ক, বার্মিজ স্কুল সড়ক, বিকেপাল সড়ক, আইবিপি মাঠ সড়কের। এর মধ্যে কয়েকটা সড়কের বুক চিরে দু’ভাগ হয়ে গেছে। সে সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে লোকজন। এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। যানবাহন চালকদের দুর্ভোগতো রয়েছেই।

অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে দুর্ভোগের কথা জানালেন কাসেম, আবদু সালাম, বাবুল, শম্ভু, রফিক, দিদারসহ শহরের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন লোক। তারা বলেন-এটা পর্যটন শহর নাকি নরক যন্ত্রণার স্থান। আমরা কোথায় বাস করছি। এটি যদি পর্যটন শহর বলে তাহলে বাকী পর্যটন শহরগুলোকে অপমান করা হবে। আমরা নিয়মিত পৌর কর প্রদান করলেও যোগাযোগ্য ব্যবস্থার কোন উন্নতিই হচ্ছে না। শুধু প্রধান সড়ক কিংবা পৌর শহরের সড়ক, উপ-সড়ক কিংবা অলিগলির সড়ক নয় খোদ পর্যটন এলাকার সড়কগুলোর মারাত্মক অবস্থা দেখে চরম হতাশা বিরাজ করছে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকদের মাঝে।

ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থেকে আগত রফিকুল ইসলাম, সাহেদুল ইসলাম, মনির হোসেনসহ কয়েকজন পর্যটক জানান, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বরত লোকজনদের অযোগ্যতার কারনে পর্যটন শহরের প্রধান সড়ক ও উপ-সড়কসহ পর্যটন এলাকার প্রত্যেকটি সড়ক মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে।

কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সু-শৃঙ্খল পরিকল্পনার দরকার রয়েছে। পরিকল্পনা ছাড়া যত্রতত্র বহুতল ভবনসহ নানা স্থাপনা তৈরি হওয়ার কারনে এ শহরের সৌর্ন্দয্য দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি রাস্তার বেহাল অবস্থা সারা দেশে কক্সবাজারের সুনাম একেবারেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান সড়কের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যেই বদলে যাবে কক্সবাজার পৌরসভার চেহারা। যেসব সড়কের অবস্থা শোচনীয় সেসব সড়ককে সংস্কার করে মানুষের চলাচলের উপযোগি করে তোলা হবে। আর সেজন্য পৌরবাসিকে দৈর্য্য ধরার পাশাপাশি সহযোগিতা করারও অনুরোধ জানান পৌর মেয়র।