ডেস্ক নিউজ:

ইলিশের প্রজনন মৌসুমে স্বাচ্ছন্দ্যে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে আজ বুধবার (৯ অক্টোবর) ভোর থেকে ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। দেশের ছয়টি ইলিশ অভয়ারণ্যসহ ইলিশ অধ্যুষিত নদ-নদীতে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ইলিশ মাছ ধরা। একই সঙ্গে এই ২২ দিন ইলিশ পরিবহন, মজুত ও বিনিময় বন্ধ থাকবে।

জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরের ১৫ দিন ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রকৃত সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। প্রতিবছর এই সময় নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। কিন্তু এই সময়ের পরেও দেশের ইলিশ অধ্যুষিত নদীগুলোতে ডিমওয়ালা প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। সময়ের তারতম্য হওয়ায় পরবর্তীতে সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ইলিশের ডিম ছাড়ার এই সময়কে আরও সাতদিন বাড়িয়ে মোট ২২ দিন ডিম ছাড়ার সময় নির্ধারণ করে।

এ বিষয়ে মৎস্য প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু সোমবার (৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পদ্মা, মেঘনা, ঊর্ধ্বাঞ্চল ও নিম্ন অববাহিকায় কালাবদর, আন্দারমানিক ও তেঁতুলিয়াসহ অন্যান্য উপকূলীয় নদীতে ছয়টি ইলিশ অভয়াশ্রম স্থাপন ও অংশীদারিত্বমূলক ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে। কারণ এখানেই ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য আসবে।’ মৎস্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ ২২ দিন উপকূলীয় ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রের আওতায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাসহ দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।’

আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, ‘ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ এই ২২ দিন স্থানীয় জেলা-উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী , বাংলাদেশ বিমান বাহিনী , বাংলাদেশে কোস্ট গার্ড, র‌্যাব, পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং মৎস্য অধিদফতর সম্মিলিতভাবে মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করবে। দেশের মোট ৩৬টি জেলায় সব নদ-নদীতে দিনে ও রাতে অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশের মাছঘাট, আড়ৎ, হাটবাজার, চেইন শপ ও অন্যান্য বিক্রয় কেন্দ্রে ইলিশ ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন মজুত ও বিনিময় বন্ধে ব্যাপক অভিযান বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া ইলিশের প্রজননকালে অভিযান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য মৎস্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট এলাকার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।’

ইলিশের জন্য সরকারের ঘোষণা করা মোট ছয়টি অভয়াশ্রম হচ্ছে—ভোলার চর ইলিশার মদনপুর থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার ১০০ কিলোমিটার, শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মার ২০ কিলোমিটার, বরিশাল সদরের কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এবং হিজলায় মেঘনার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার।

এছাড়া, আড়িয়াল খাঁ, নয়নভাঙগুলী ও কীর্তনখোলা নদীর আংশিক অভয়াশ্রমের অন্তর্ভুক্ত। বরিশালের আশপাশের ৮২ কিলোমিটার নদীপথ নিয়ে নতুন অভায়শ্রম ঘোষণা করেছে সরকার। এই ছয়টি অভয়াশ্রমের বাইরে দেশের উল্লেখযোগ্য নদীতে এ সময় কেবল ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্য মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।