বিশেষ সংবাদদাতা :
সেগুনবাগান মাদরাসা ও মসজিদ উচ্ছেদ ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন কওমি মাদরাসা সংরক্ষণ পরিষদ চট্টগ্রাম। মহানগরীর উদ্যোগে খুলশী থানাধীন ‘সেগুনবাগান তা’লীমুল কুরআন মাদরাসা ও মসজিদ উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আজ (৩ অক্টোবর) সকাল ১১ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত বিশাল মানববন্ধনে শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, মসজিদ মাদরাসা উচ্ছেদের কোন চক্রান্ত বরদাশত করা হবেনা।

রেলওয়ের কতিপয় ইসলামবিদ্বেষী কর্মকর্তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে দীর্ঘ দুই যুগের একটি প্রসিদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ জোরপূর্বক তুলে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা রেলের ভূ’মিতে হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে মসজিদ মাদরাসা ধ্বংস করার উদ্যোগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলার গভীর ষড়যনান্ত্র বলে তারা মন্তব্য করেন।

তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে মসজিদ মাদরাসার উন্নয়নে আন্তরিক সেখানে কোন নাস্তিকদের দোসর মন্ত্রী, নেতা বা আমলা যদি আল্লাহর ঘর পবিত্র মসজিদ বা কোরআন হাদীসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নগ্ন হস্তক্ষেপ চালাতে চায় দেশের আলেমসমাজ ও ধর্মপ্রিয় তাওহিদী জনতা গণআন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করবে-ইনশাআল্লাহ। তারা বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যদি অবিলম্বে এই অবৈধ নোটিশ প্রত্যাহার না করে তাহলে রেলভবন ঘেরাওসহ বৃহত্তর আন্দোলনে কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে তারা হুশিয়ারি দেন।

হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর ও কওমি মাদরাসা সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলামের (পীর সাহেব ফিরোজশাহ) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মুজাহের উুলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা লোকমান হাকীম, দারুল মাআরিফের সহকারী পরিচালক মাওলানা ফোরকানুল্লাহ খলিল, ইসলামী আন্দোলনের মহানগরী সভাপতি মাওলানা জান্নাতুল ইসলাম, হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ নেতৃবৃন্দ ও শত শত ওলামায়ে কেরাম।

বক্তারা আরো বলেন, ১৯৯৬ইং সালে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছেলে-মেয়ে এবং এতিম-অসহায়, হতদরিদ্র ও পথশিশুদের নিরক্ষরতা দূরীকরণ, দ্বীনি শিক্ষাপ্রদান ও নৈতিক গুনাবলীসম্পন্ন আদর্শবান নাগরিক সৃষ্ঠির লক্ষ্যে পাহাড়তলী সেগুনবাগানস্থ বাংলাদেশ রেলওয়ের পতিত ভূমিতে উপরস্থ কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সেগুনবাগান তা’লীমুল কুরআন মাদরাসা কমপ্লেক্স’। যা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ প্রসিদ্ধ হিফজুল কুরআন মাদরাসা। যার শতাধিক শাখা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করে। কিন্তু মসজিদ না থাকায় হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনসাধারণ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর অবস্থায় নামায আদায় করে থাকে।
তারা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের বহু শিক্ষার্থী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে একাধিকবার দেশের সুনাম, খ্যাতি ও পুরস্কার অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া অত্র মাদরাসার শিক্ষার্থী ভারতের বিখ্যাত দারুল উলূম দেওবন্দ, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়, মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্বসবচাইতে বিদ্যালয়সহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃতিত্বের সাথে অধ্যয়ন-অধ্যাপনা করে যাচ্ছে। হাজার হাজার ছাত্র হাফেজ-আলেম হয়ে দেশ-বিদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসার ও মানবতার সেবায় নিয়োজিত।

উল্লেখ্য যে, নিজস্ব ভূমি না থাকায় সরকারের নিকট ভূমির সকল নিয়ম কানুন মেনে মাদরাসা-মসজিদের অনুকূলে লীজ পাওয়ার জন্য ০৮-০৮-১৯৯৯ইং তারিখে বাংলাদেশ রেলওয়ে বরাবরে একটি আবেদন করা হয়। যাতে চট্টগ্রামের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন, স্থানীয় এমপি ডা. আফছারুল আমীন, ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি, সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান এমপিসহ অনেকে সুপারিশ করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের তৎকালীন প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সরেজমিন তদন্তপূর্বক মহাপরিচালক বরাবরে ২৬-০৬-২০১৬ইং তারিখে লীজের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদন জমা দেন। সর্বশেষ বিগত ২৪-০৩-২০১৭ ইং তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবওে আবেদন করা হয়। যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এমতাবস্থায় বিগত ২৯/০৯/২০১৯ ইং তারিখ দীর্ঘ ২৪ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা উচ্ছেদের নোটিশ দিয়ে মসলমানদের অন্তরে আঘাত করেছে। যা এদেশের আলেমসমাজ ও ছাত্র-ছাত্র অভিভাবক ও ধর্মপ্রাণ কোন মানুষ মেনে নিতে পারে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী মসজিদ-মাদরাসার উন্নয়ন ও অগ্রগতির ব্যাপারে আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছেন, সেখানে এ ভাবে উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া সরকার প্রধানকে অবমাননার শামিল।