নিউজ ডেস্ক :
প্রথমবার কোনো সমস্যায় ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েছিল। তখন কমেছিল রোগ। আবারও একই সমস্যা দেখা গেলে যে ওই একই অ্যান্টিবায়োটিক নিজের মতো করে খেয়ে নেবেন, তা কিন্তু নয়। এতে বড় বিপদ হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) বলছে, এভাবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রবণতাই ঠেলে দিচ্ছে রোগের দিকে।

বিজ্ঞানীরাও গবেষণার পর শিউরে উঠেছেন। সচেতনতার ডাক ইতোমধ্যেই দিয়েছেন অনেক চিকিৎসক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সংগঠন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ‘অকারণ ও অত্যধিক অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে মেদ তো বাড়ছেই, তার সঙ্গে শরীরে সুপারবাগসের উপস্থিতি সমস্যায় ফেলছে রোগী ও চিকিৎসককে। যখন-তখন ইচ্ছামতো অ্যান্টিবায়োটিক নিতে নিতে শরীরে তৈরি হচ্ছে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ বা ‘অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’ (এএমআর)। এটাই ডেকে আনছে আগামী দিনের গুরুতর বিপদ।

সুপারবাগস কী?

ঘন ঘন কোনও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে শরীর নিজের মধ্যেই সেই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ তৈরি করে। ফলে দিনের পর দিন সেই ওষুধ নেয়ার ফলে একটা সময়ের পর তা আর শরীরে কাজ করে না। কারণ শরীরে উপস্থিত ব্যাকটিরিয়া ওষুধের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে তত দিনে, হয়ে উঠেছে আরও শক্তিশালী। অতিরিক্ত ক্ষমতাসম্পন্ন সেই জীবাণুদেরই চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘সুপারবাগস’।

চিকিৎসকদের আশঙ্কা, সতর্ক না হলে এমন একটা সময় আসবে যখন অধিকাংশ সুপারবাগের সঙ্গে লড়ার মতো কোনও ওষুধই পাওয়া যাবে না। ফলে বহু রোগের চিকিৎসা মিলবে না।

এএমআর-এর ক্ষতির নিরিখে বিশ্বের প্রথম পাঁচের মধ্যে রয়েছে ভারত। ডাব্লিউএইচও’র সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে পাঁচ বছরের নীচের শিশুদের মৃত্যুর ২৫ শতাংশ ঘটছে নিউমোনিয়া থেকে, যা সারানো যাচ্ছে না এএমআর-এর কারণেই।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ শঙ্কর দাসের মতে, ‘এমন অবস্থা যে সাধারণ ভাইরাল ফিভারও সারছে না সহজে। কিছু অসুখের চিকিৎসা করতে গেলে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স পরীক্ষা করতে হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে বাতিল অ্যান্টিবায়োটিকের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।’

অ্যান্টিবায়োটিক ও ফ্যাট

ফ্যাট, খিদে এসব সামলায় ঘ্রেনিল নামের হরমোন। শরীরের ভালো কিছু জীবাণুর উপস্থিতিতে এর কাজকর্মের গতি বাড়ে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের ঘন ঘন ব্যবহার এই ভালো জীবাণুগুলোকে মেরে ফেলে। ফলে ওজন বাড়ে। এদের মৃত্যুতে পাকস্থলীতে ইস্ট সংক্রমণ বেড়ে শরীরে জল যেমন জমে, তেমনই থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যও নষ্ট করে।

কাজেই বিজ্ঞানীদের পরামর্শ হলো, কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে ভালো খাওয়া–দাওয়া করে, পরিমিত ব্যায়াম করে ও নিয়ম মেনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান। তাতে রোগ যেমন কম হবে, বশে থাকবে ওজনও।