ডেস্ক নিউজ:

সংকট কাটাতে মিয়ানমারের পাশাপাশি এবার মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে সরকার। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে এলসিও খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। সব প্রক্রিয়া শেষ করে এক সপ্তাহের মধ্যে এই দুটি দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসবে। মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে নোঙর করেছে। ইতোমধ্যে ওই পেঁয়াজ জরুরি ভিত্তিতে খালাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রথম দিকে দেড় থেকে দুই লাখ টন পেঁয়াজ আসবে মিসর ও তুরস্ক থেকে। পরবর্তী সময়ে চাহিদা দেখে আরও পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেবেন ব্যবসায়ীরা।

জানতে চাইলে শ্যামবাজারের আমদানিকারক সোনালী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘মিসর ও তুরস্কের পেঁয়াজ সাইজে বড়। ঝাঁঝ কম। অনেকটা সবজির স্বাদ পাওয়া যায়। তাই বাংলাদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ কিছুটা কম। এ কারণে ক্রেতাদের চাহিদা দেখে পরবর্তী সময় আরও আমদানি করবো কিনা, সেই উদ্যোগ নেবো।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মিসর ও তুরস্কের দূরত্ব বেশি হওয়ায় আমদানি করা পেঁয়াজ একমাত্র নদীপথে পরিবহনের কোনও বিকল্প নেই। যা স্থলপথের তুলনায় বেশি ব্যয়সাপেক্ষ।’

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলেও আমরা মিয়ানমারের পাশাপাশি মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। ২৯ সেপ্টেম্বরের পর প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসছে। আজও (বুধবার) মিয়ানমার থেকে ৪৮৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসেছে। সন্ধ্যার আগে আরও ৫শ মেট্রিক টন পেঁয়াজ টেকনাফে আসবে বলে কক্সবাজারের ডিসি জানিয়েছেন।’

মিসর ও তুরস্কের পেঁয়াজ আসতে হয়তো আরও ২-৪ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। কী পরিমাণ পেঁয়াজ মিসর ও তুরস্ক থেকে আসছে—জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আলাদা আলাদা কয়েকটি এলসির মাধ্যমে মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। মোট কত মেট্রিক টন পেঁয়াজের এলসি খোলা হয়েছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো বলতে পারবে। আমরা এখনও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ হিসাব নেইনি।’

এদিকে মিসরে উৎপাদিত পেঁয়াজে কীটনাশকের পরিমাণ বেশি হওয়ায় চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি দেশটি থেকে পেঁয়াজ কেনা সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে সৌদি আরব। মিসরের কায়রো থেকে প্রকাশিত ইজিপ্ট টুডে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, লাইভস্টক রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের মহাপরিচালক সানাদ আল হারবি এক বিবৃতিতে বলেন, মিসরের পেঁয়াজের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এতে পেঁয়াজে যে হারে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ রয়েছে, তা বৈশ্বিকভাবে অনুমোদিত হারের চেয়ে বেশি। ফলে সাউদি ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি (এসএফডিএ) জনস্বার্থে এই পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ যে পেঁয়াজ আমদানি করছে, তাতে মাত্রারিক্ত কোনও কীটনাশক নেই। কারণ, এ বিষয়টি অনেক আগেই ফয়সালা করেছে মিসর কর্তৃপক্ষ। এটা মিসরের কৃষি মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে। আর এই বছর যে পরিমাণ পেঁয়াজ মিসর থেকে আমদানি করা হচ্ছে, তা খুবই সামান্য। তাই অতটা বিচলিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।’

সরকারি হিসাব মতে, দেশে বছরে মোট পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ২৩ দশমিক ৩০ লাখ মেট্রিক টন। এর ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ স্বাভাবিকভাবেই নষ্ট হয়। যার পরিমাণ সাড়ে সাত লাখ টন।

পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বছরে আমদানি হয়ে থাকে ৮ থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন। হিসাব অনুযায়ী দেশে পেঁয়াজের কোনও সংকট নেই। দেশের পেঁয়াজ সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর পাইকারি হাট-বাজারে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ কেনাবেছা হচ্ছে। ফলে সারা দেশের হাট-বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যাপ্ত। বাজারে দেশি ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের সরবরাহের কোনও ঘাটতি নেই।
উল্লেখ্য, সহজে পরিবহনের কারণে সারা বছরই ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ভারতের বিহার, পাটনা, মহারাষ্ট্রসহ কয়েকটি এলাকায় বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কিছু দিন আগে রফতানির ক্ষেত্রে ভারত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস (এমইপি) নির্ধারণ করে দিয়েছে। আগে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ছিল কম-বেশি ২৫০ মার্কিন ডলার। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত তা ৮৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দেয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে ভারত কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। বিকল্প হিসেবে মিয়ানমার থেকে এলসি এবং বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে বাংলাদেশ। মিসর ও তুরস্ক থেকেও এলসি’র মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। ওই পেঁয়াজ দেশে পৌঁছাতে শুরু করেছে। অল্প সময়ের মধ্যে এই পেঁয়াজ দেশের বাজারে স্বল্পমূল্যে পাওয়া যাবে।