নুরুল কবির, বান্দরবান:
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঘুমধুমে একাধিক আর সদর ও সোনাইছড়িতে আওয়ামীনলীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগ। ফলে নির্বাচনী ইমেজ সংকটে পড়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৩টি ইউপি নির্বাচন। নির্বাচনী ক্যাম্প গুলোতে সমর্থকদের উৎসবমূখর উপস্থিতি তেমন একটা দেখা মিলছে না। সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন কোন উৎসাহ, উদ্দীপনা বা আমেজ এখনো ফুটে উঠেনি। যার কারণে ভোটারদের মন গলাতে প্রার্থীদের ঘাম ঝরছে। বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে প্রার্থী ও ভোটারদের সাথে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

এদিকে উপজেলা সদরের একাধিক ব্যবসায়ী জানান- সরকারী কোন অনুষ্ঠান ছাড়া উপজেলা সদরে নির্বাচন কেন্দ্রিক তেমন মানুষের সমাগম হয় না। যার কারনে চায়ের টেবিলে নির্বাচনী আলোচনা নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে এই আমেজ বাড়তে পারে বলে তাদের ধারনা।

চাকঢালা এলাকার ভোটার নুরুজ্জামান, নুরুল আলম, আবদুল গফুর জানান- বিগত নির্বাচন সমূহের তুলনায় এবার ইউপি নির্বাচনী প্রচারণায় তেমন কোন উত্তাপ নেই। স্থানীয় রাজনীতির কৌশলগত কারনে সাধারণ ভোটাররাও আগের মতো প্রকাশ্যে নিজেদের মত প্রকাশ করতে চান না।

জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর প্রতিপক্ষ খোদ আওয়ামীলীগ নেতা। এ ২টি ইউনিয়নে বিএনপি বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নেই। ফলে নির্বাচনী কোন উত্তাপও নেই। এ ২টি ইউপিতে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে দ্বিমুখী লড়াই চলছে। আর এই কারনে সাধারণ ভোটাররাও মুখ খুলছেন না। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী তার প্রতিপক্ষ বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আবছার ইমন আনারস প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে অবর্তীণ হয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা নুরুল আবছার ইমন হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের আপন খালাতো ভাই। যুবলীগ নেতা নুরুল আবছার ইমন অভিযোগ করে বলেন, তার কর্মী সমর্থকদের নানা ধরনের হুমকি ধমকি দিচ্ছেন প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন। এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনকে অভিহিত করেছেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে প্রত্যাশা করেন। অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামীলীগ প্রার্থী তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, তার দলের কোন কর্মী সমর্থক কাউকে কোন ধরনের হুমকি ধমকি দেয়নি। এটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। শান্তি উন্নয়ন লক্ষে আগামী ১৪ অক্টোম্বর নৌকা মার্কাকে ভোট দিয়ে জয় যুক্ত করবেন এলাকার ভোটারা।

অপরদিকে সোনাইছড়ি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতিক নিয়ে লড়ছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যানিং মার্মা। তার বিপরীতে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি বতমান চেয়ারম্যান বাহান মার্মা। তরুণ ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব হিসেবে এ্যানিং মার্মা সাধারণ ভোটারদের নজর কেড়েছেন।

তবে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত এক প্রার্থীকে নিয়ে প্রকাশ্য ও গোপনে তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা চলছে ভোটের মাঠে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বিএনপি’র প্রার্থী পক্ষে গোপনে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ। ওই ইউনিয়নে তিনজন প্রার্থী থাকলেও মূলত বিএনপি সমর্থিত রশিদ আহমদের ঘোড়া প্রতিকের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা হবে নৌকার। পারিবারিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে এই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মী গোপনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে ভোটের মাঠে আলাপ আলোচনায় এগিয়ে রাখছেন। তবে বিগত পাঁচ বছরে মানুষের সেবা ও ব্যক্তি ইমেজ নিয়ে পুনরায় বিজয়ী স্বপ্ন দেখছেন জাহাঙ্গীর আজিজ।

সরেজমিনে ভোটারদের সাথে আলাপে জানা যায়, নির্বাচনের এখনো ১২দিন বাকী থাকলেও নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নে নির্বাচনী সভা সমাবেশ তেমন চোখে পড়ছে না। উপজেলা সদরে প্রার্থীদের পোষ্টার দেখা গেলেও নির্বাচনী আমেজ নেই বললেই চলে। এর দুটি কারণ হিসেবে দেখছেন সাধারণ ভোটাররা। সদর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় মেম্বার নির্বাচিত ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে দ্বিমুখী লড়াই হওয়ার কারনে অনেকটা আমেজ হারিয়েছে এবারের ভোট। ঠিক একই ভাবে ৭নং ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় মেম্বার নির্বাচিত হওয়ায় সেখানেও নির্বাচনী আমেজকে ফিকে করেছে বলে ভোটাররা জানিয়েছেন।

নির্বাচনী পরিবেশের বিষয়ে রির্টানিং অফিসার আবু জাফর ছালেহ বলেন- সাধারণ ভোটাররা যাতে নিরাপদে ভোট দিতে পারেন এবং প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণা চালাতে পারেন সে জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আচরণবিধির দিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা।