মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি :

বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি সরই ইউনিয়ন সদরে রয়েছে কেয়াজুপাড়া নামে একটি বাজার। এক সময় সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে হারিয়ে যেত জনবহুল এই বাজারটি। হারিকেন, কুপি বাতি বা মোমের আলো জ¦ালিয়ে বেচা-বিক্রি করতেন দোকানিরা। সন্ধ্যার পর অন্ধকার ভূতড়ে পরিবেশ বাজারের দোকানিসহ স্থানীয়দেরকে হতাশ করে তুলতো। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। দিন পাল্টে চারদিকে বিদ্যুতের আলো আর আলোর ঝলকানিতে বাজারটি এখন যেন কোন এক মফস্বল শহর। শুধু বাজার নয়, সন্ধ্যা নামলে এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে আশ পাশের ৫ কিলোমিটার এলাকা। এতে প্রাথমিকভাবে ৫০০ গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।পরবর্তীতে আরো প্রায় ৭০০ গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধা পাবেন। এছাড়া ঘরে ঘরে শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কোটি কোটি টাকার কাজ চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি একান্ত প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লামা উপজেলা সদর থেকে উত্তর দিকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত সরই ইউনিয়নের ক্যয়াজুপাড়া বাজার। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ বাজার ফান্ড প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধিন এ বাজারটি। এখানে বিভিন্ন কোম্পানীর বানিজ্যিক ও ব্যক্তি মালিকানাধীন দু শতাধিক ফলদ ও বনজ বাগান, গরু ও মৎস্য খামারসহ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলা সংলগ্ন হওয়ায়, সেখানে সমতল ভূমির অনেক মানুষের যাতায়ত দীর্ঘকাল ধরে। এসবকে কেন্দ্র করে বাজারটি ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়। ফলে নিত্য-নতুন মানুষের আগমন ঘটে এই বাজারে। কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে সেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। সন্ধ্যা নামলেই ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হত বাজারটি। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চুরি ডাকাতির মত ঘটনাও ঘটত সেখানে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ২০১৬ সালে সরই ইউনিয়ন সফরে গিয়ে এলাকাকে বিদ্যুৎতায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন। সে মতে অল্প সময়ের মধ্যেই দুর্গম পাহাড়ি সরই ইউনিয়নকে বিদ্যুতের আওতায় আনেন মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে সুইচ অন করে এ বিদ্যুতায়নের উদ্ভোধনও করেন তিনি। বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগার সাথে সাথে কেয়াজুপাড়া বাজারটি মফস্বল শহরের রুপ ধারণ করে। বিদ্যুত লাইন স্থাপনের কারণে ই্উনিয়ন পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে। তাছাড়াও ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান, কৃষি খামার, সেচযন্ত্র বিদ্যুতের আওতায় আসছে ক্রমেই। ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বহুতল বিশিষ্ট শপিং মল। শপিং মলগুলোতে গ্রাহক সমাবেশও সন্তেষজনক বলে জানান বাজার ব্যবসায়ী মো. সেলিম উদ্দিন ও মইন উদ্দিন। মৎস্যখামারী আবদুর রহিম এবং একই এলাকার বিদূুত গ্রাহক মো. রফিক জানায়, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর এই প্রথমবারের মত সরকারি বিদ্যুত সরবরাহ পাওয়ায় তাদের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল বহুক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব বলেও জানান তারা।

স্থানীয় বাগান ম্যানেজার মো. আরিফ, মো. হারুণসহ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. নুরুল আলম জানান, বিদ্যুতায়নের ফলে মানুষের জীবনমান উন্নতির পাশাপাশি ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার ঘটছে। এ জন্য ইউনিয়নবাসী পার্বত্য মন্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞ।

এ বিষয়ে সরই ্ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফরিদ উল আলম ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিস কোম্পানী বলেন, পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুরের একান্ত প্রচেষ্টায় দুর্গম সরই ইউনিয়নে বিদ্যুতায়ন সম্ভব হয়েছে। বিদ্যুতায়নের ফলে এখন সন্ধ্যা নামলে আলোকিত হয়ে ওঠে বাজারসহ আশপাশ এলাকা। ইউনিয়নের যেসব ওয়ার্ড এখনো বিদ্যুতের আওতায় আসেনি, সেসব ওয়ার্ডেও বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে।

সরই ইউনিয়নে বিদ্যুতায়নের সত্যতা নিশ্চিত করে তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুত সরবরাহ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল বড়–য়া বলেন, সরই ইউনিয়নে বরাদ্দ মোতাবেক বিদ্যুত সরবাহের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ইউনিয়ন সদরের ক্যাজুপাড়া বাজারসহ ৫কিমি এলাকায় প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০০ গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুত সংযোগ প্রদান সাপেক্ষে আরও প্রায় ৭০০ গ্রাহকবিদ্যুৎ সুবিধা পাবেন।