নিজস্ব প্রতিবেদক:

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কক্সবাজারে  মাতৃ স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করে যাচ্ছে হোপ ফাউন্ডেশন। রামুর চেইন্দায় অবস্থিত হোপ হসপিটাল ও জেলার বিভিন্ন স্থানে হোপ বার্থ সেন্টারের মাধ্যমে হোপ ফাউন্ডেশন এই সাড়া জাগানো মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য গরীব ও অস্বচ্ছল এবং দর্গম এলাকার লোকজন হোপ ফাউন্ডেশনের সেবা পেয়ে নিরাপদ জীবন যাপন করছে। এই অগ্রণী স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে ইতোমধ্যে হোপ ফাউন্ডেশন সরকারসহ সর্বমহলে বেশ প্রশংসা অর্জন করেছে। যাঁর স্বপ্নময় উদ্যোগ ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে হোপ ফাউন্ডেশন আজকের এই গৌরবময় আসনে অবস্থান করছে তিনি হলেন কক্সবাজারের কৃতিসন্তান আমেরিকা প্রবাসী চিকিৎসক ইফতিখার মাহমুদ মিনার। তিনি জানালেন, দেশের মাতৃমৃত্যুর হার কমাতেই তিনি এই স্বপ্নযাত্রা করেছিলেন।

তিনি জানান, মাতৃমৃত্যু কমাতে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন সেটার সাথে সংযুক্ত হয়ে নিরলসভাবে কাজ করছে হোপ ফাউন্ডেশন। ইতোমধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে অগ্রণী অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে এই মানবসেবামূলক সংস্থাটি। কিন্তু লক্ষ্য আরো বহুদূর! সেই টার্গেট নিয়ে কার্যক্রমকে আরো প্রসারিত করেই চলেছে হোপ ফাউন্ডেশন। এর অংশ হিসেবে সেবা কার্যক্রম ছাড়াও নানা সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে হোপ ফাউন্ডেশন। এই লক্ষ্য নিয়ে দেশের প্রথম মিডওয়াইফ সম্মেলনের আয়োজন করেছে হোপ ফাউন্ডেশন।  শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের হোটেল লংবীচে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই দিনের এই সম্মেলন। এতে অংশ নিচ্ছে দেশ বিদেশের খ্যাতনামা অন্তত ৫০০ মিডওয়াইফ। সম্মেলন ও মাতৃমৃত্যু রোধ নিয়ে আরো বিশদ পরিকল্পনা সম্পর্কে এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হোপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ইফতিখার মাহমুদ মিনার।

হোপ ফাউন্ডেশনের এই স্বপ্নদ্রষ্টা বলেন, আজ থেকে ২০ বছর থেকে বাংলাদেশের গর্ভজনিত মাতৃমৃত্যুর হার ছিলো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। গর্ভকালীন সঠিক স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে এবং অশিক্ষিত ধাত্রী দিয়ে সন্তান ডেলিভারি করার কারণে অনেক মা অকালের মারা যেতো। এই বিষয়টি আমাকে খুব কষ্ট দিতো। সেই কষ্ট থেকে সুদূর আমেরিকায় থেকেও দেশের জন্য কি করা যায় তা নিয়ে ভাবতাম। সেই ভাবনা থেকে হোপ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম।

মাতৃমৃত্যু রোধ সম্পর্কে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ্য (এসডিজি) নির্ধারণ করেছেন, আগামী ২০৩০সালের বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যুর হার লাখে ৭০ ভাগের নিচে নামিয়ে আনবেন। প্রধানন্ত্রীর এই লক্ষ্যযাত্রায় সঙ্গী হয়েছে হোপ ফাউন্ডেশন। সেই লক্ষ্য নিয়ে ২০১২ সাল থেকে গর্ভজনিত মাতৃমৃত্যু নিয়ে দুর্বার গতিতে কাজ করছে হোপ ফাউন্ডেশন। হোপ হসপিটাল এবং কক্সবাজারের দুর্গম এলাকায় আরো সাতটি বার্থ সেন্টার স্থাপন করে গর্ভবতী নারীদের স্বল্প ও বিনামূল্যে আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে।

আমেরিকা প্রবাসী এই চিকিৎসক জানান, শুধু সেবা দিয়ে বসে নেই হোপ ফাউন্ডেশন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে মাতৃমৃত্যু রোধে নানা পরিকল্পনা ও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গর্ভবতী নারীদের আধুনিক সেবা নিশ্চিত করণ, গর্ভকালীন সঠিক চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করণ, মিডওয়াইফ তৈরি করণ, মিডওয়াইফদের আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রশিক্ষণলব্ধ মিডওয়াইফদের প্রত্যন্ত গ্রামে স্থানান্তর এবং সেখানে সার্বক্ষণিক গর্ভকালীন সেবা নিশ্চিত করণসহ নানা কার্যক্রম চালাচ্ছে হোপ ফাউন্ডেশন। আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা দাতা সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে তিনি এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, গর্ভকালীন সঠিক পরিচর্যা ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকলে মাত্যৃমৃত্যুর হার ৯০ভাগ রোধ করা যায়। তার জন্য গর্ভ শুরু থেকে ডেলিভারি পর্যন্ত গর্ভবতীকে সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ দ্বারা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। সেই সাথে নিয়মিত চেকআপ, প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করাতে হবে। গর্ভকালীন অন্তত ৩/৪বার চেকআপ করাতে হবে। এটা নিশ্চিত করা গেলে অপ্রয়োজনীয় সিজারও রোধ করা যাবে। এই লক্ষ্য অর্জিত হলে এটাকে গোল্ডেন চেইন হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে।

গ্রাম-গঞ্জের গর্ভবতীদের সেবা নিশ্চিত সম্পর্কে ডা. মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে এখনো গ্রামাঞ্চলে পর্যাপ্ত গর্ভকালীন সেবা নিশ্চিত হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০৩০ সালের লক্ষ্য পূরণ (এসডিজি) করতে হলে গ্রামাঞ্চলে আরো সেবা কার্যক্রম বাড়াতে হবে। তার জন্য প্রথম উদ্যোগ হলো প্রচুর প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ তৈরি করণ। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে আরো প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ তৈরি করতে উদ্যোগ নিতে হবে। হোপ ফাউন্ডেশন সে লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে। আমরা প্রতিবছর মিডওয়াইফ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কোর্সভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিবছর ৩০জনের বেশি মিডওয়াইফ তৈরি করছে হোপ ফাউন্ডেশন। বের হওয়া এসব ধাত্রীদের আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে গ্রামাঞ্চলে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

তিনি তার পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, মাতৃমৃত্যু রোধ করতে আমাদের প্রচেষ্টা থেমে নেই। এর অংশ হিসেবে সারা দেশের প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফদের আরো যোগ্য ও সচেতন করে তুলতে দেশের প্রথম মিডওয়াইফ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। এই সম্মেলনে বিশ্বের বহুদেশ থেকে আসা খ্যাতনামা মিডওয়াইফরা প্রশিক্ষণ দেবেন। এই সম্মেলনের লক্ষ্য হলো প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফদের আরো দক্ষ করে গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে দেয়া। এই সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে সম্মেলনে বেশ প্রণোদনা দেয়া হবে। আমার বিশ্বাস আমাদের এই উদ্যোগ সফল হবে। এর মাধ্যমে সারাদেশের গ্রামা-গঞ্জে সেবা দিতে তৈরি হবে আমাদের মিডওয়াইফরা। আমরা তাদের কাছ থেকে সেটাই প্রত্যাশা করবো।