ডা: মোহাম্মদ লোকমান

পুটিবিলার চুড়ার পাড়ার দরিদ্র সিএনজি চালক এনামুল হকের ছেলে তাসিব।
জন্মের পর পরেই ধরা পড়ে তার হার্টের সমস্যা। বাড়ির পাশ দিয়ে কুল কুল করে বয়ে যাওয়া ডলু নদীর মত দুরন্তপনা শৈশব কাটানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার এই ত্রুটিপূর্ণ হৃৎপিণ্ড। অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে প্রতিনিয়ত। বাধাগ্রস্ত হয় তার স্বাভাবিক বেড়ে উঠা।

ডাক্তার বলেছে অপারেশন করালে সুস্থ হয়ে যাবে। মা-বাবা স্বপ্ন দেখে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে তাদের তাসিব।
কিন্তু মোটা অংকের খরচের কথা শুনে তারা চোখেমুখে অন্ধকার দেখে, স্বপ্ন গুলো মিশে যায় ডলু নদীর জলে।

হিলফুল ফুজুলের কথা লোকমুখে শুনতে পেয়ে তারা আমাদের সাথে দেখা করে।
যথারীতি মানবিক সহযোগিতা কামনা করে আমরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মানব দরদী ভাইদের ব্যাপক সাড়া পাই।

এরপর আমরা তাকে ঢাকার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটালে পাঠাই, যেখানে জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত ইয়াসিন ও আদিলের সফল অপারেশন হয়েছিল। কিন্তু তার পিতামাতাকে হতাশ করে ডাক্তার বললেন যথেষ্ট ঝুঁকি থাকায় অপারেশন সম্ভব নয়। একবুক হতাশা নিয়ে তারা ঢাকা থেকে ফিরে আসে।

বিভিন্ন মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার কথা শুনে তারাও নতুনভাবে স্বপ্ন দেখে তাসিবকে ভারতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর। তাদের আশা এবং বিশ্বাস ছিল ডা: দেবী শেঠির কাছে নিয়ে যেতে পারলে তাদের তাসিব ভাল হয়ে যাবে।

তাদের ইচ্ছের কথা আমাদেরকে জানালে আমরা তাদের স্বপ্ন পূরণের সারথি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সে অনুযায়ী সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আবার পোস্ট দিলাম, আবারো ব্যাপক সাড়া পেলাম।

সবার সর্বাত্মক সহযোগিতায় হার্টের জন্মগত ত্রুটি সারাতে আমরা তাসিবকে ভারতে পাঠাতে সক্ষম হলাম, আলহামদুলিল্লাহ্‌।

ওখানে প্রায় ১৫ দিন অবস্থান কালে ডাঃ দেবী শেঠীর নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে তার চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করেন।

সর্বশেষ ডাঃ দেবশেঠীর তত্বাবধানে ৭ জন ডাক্তার বোর্ড মিটিং করে সিদ্ধান্ত জানান।।।

তার হার্টের ইকোকার্ডিওগ্রাম + কার্ডিয়াক ক্যাথেটার করে দেখা গেছে তার হার্টের ৩ টি ভাল্বেই সমস্যা+ হার্টের ওয়ালেও সমস্যা।।।

অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, তারা সিদ্ধান্ত জানিয়েছে এমতাবস্থায় তাসিবের অপারেশন অসম্ভব।
চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, অপারেশন তার জন্য একেবারেই অনিরাপদ। অর্থাৎ এত বড় অপারেশনের জন্য সে মোটেও ফিট নয়।।।
এখন ওষুধের মাধ্যমেই যতদুর সম্ভব চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে, বাকিটা রব্বুল আলামীনের ফয়সালা, নিশ্চয়ই রব্বুল আলামীন যা করবেন, মঙ্গলের জন্যই করবেন।

তবে আমাদের সফলতা হচ্ছে, আমরা আমাদের সাধ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি‌‌।
তাসিবকে যদি ইন্ডিয়া পাঠাতে না পারতাম তাহলে তার অসহায় পিতামাতার মনে আক্ষেপ থেকে যেত।

আমরা তাদের সেই আক্ষেপকে দূর করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ্‌। তাদের মন বুঝ পেয়েছে। এখন তাদের মনে আর কোন আক্ষেপ নেই, হতাশা নেই।

তাসিবের চিকিৎসা সহায়ক তহবিলের একটা অংশ ওষধ খরচ চালানোর জন্যে তার বাবার হাতে তোলে দিয়ে অবশিষ্ট অর্থ পরামর্শক্রমে আমরা অন্য অসহায় রোগীদের জন্যে ব্যয় করব, ইনশাআল্লাহ।

ইতিমধ্যে জন্মগত অসম্পূর্ণ হৃদয় নিয়ে রাজিন নামের ৯ বছরের আরেক শিশু আমাদের কাছে এসেছে।
সে দক্ষিণ সুখছড়ি পেটান সিকদার পাড়ার মোহাম্মদ ইলিয়াসের কন্যা, পেশায় যিনি একজন সিকিউরিটি গার্ড।

আগামী সপ্তাহে রাজিনকে আমরা ঢাকার ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হসপিটালে পাঠাব ইনশাআল্লাহ।

আমরা যারা এই মাসুম বাচ্চা তাসিবের জন্য অর্থ দিয়ে, শ্রম দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে চেষ্টা করেছি, রব্বুল আলামীন যেন আমাদের সকল প্রচেষ্টাকে কবুল করেন এবং তিনি যেন তার সুস্থতাকে দীর্ঘস্থায়ী করেন।

লেখক –
ডা: মোহাম্মাদ লোকমান,
মেডিকাল অফিসার, চকরিয়া পৌরসভা।