নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি ও কক্সবাজার বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি শ্রমিক নেতা জহিরুল ইসলাম সিকদার বলেছেন, দীর্ঘ ১৭ ১৮ বছর ধরে কক্সবাজার বাস-মিনিবাস মালিক সমিতিকে লুটেপুটে খেয়েছে সালাম-মইন উদ্দীন গং। এই দীর্ঘ সময়ে তারা সাধারণ বাস মালিক শ্রমিকদের সঞ্চয়ের অন্তত কোটি টাকা আত্মাসাৎ করেছেন। এই উদ্ধারের বিচার চলছে। তাই তাদের আত্মাসাৎ করা টাকার উদ্ধারের এই প্রক্রিয়া ধামাচাপা দিতে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে নেমেছে সালাম- মইন উদ্দীন গং।

বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে কক্সবাজার বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

জহিরুল ইসলাম সিকদার আরো বলেন, কক্সবাজার বাস-মিনিবাস মালিক সমিতিটি দীর্ঘদিন ধরে লুটেরা ও আত্মসাৎকারীদের কাছে জিম্মি ছিলো। ওই চক্রটি দীর্ঘদিন এই সমিতিকে কুক্ষিগত করে সমিতির কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছে। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ওই লুটেরা চক্র থেকে কক্সবাজার বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি মুক্ত হয়েছে। বাস মালিকেরা ওই আত্মসাৎকারীদের বয়কট করেছে। সমিতিকে দুর্দশা থেকে মুক্ত করতে এবং গতিশীল করতে বাস মালিক ও শ্রমিকদের একতা এবং সমন্বয়ে সম্প্রতি আমাকে কক্সবাজার বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সালাম-মইন উদ্দীন গং। তারা এখন আমি ও সমিতির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের লিপ্ত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত ২২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের কয়েকটি পত্রিকায় আমার নামে সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেছে। ওই সংবাদগুলোতে তারা আমার বিরুদ্ধে সমিতির টাকা আত্মসাৎ, জমি দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছে। তাদের এই জঘন্য মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি আমি।

অভিযোগের বিষয়ে জহিরুল ইসলাম বলেন, দৈনিক বাস প্রতি ৪৫০ টাকা সমিতির জন্য চাঁদা ধার্য্য রয়েছে। ওই টাকা শুধু আমি নয়; অন্য কোনোভাবেও তছরুপ হয় না। সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক ওই টাকা হিসাব মতে সমিতির নানা খাতে খরচ এবং অবশিষ্ট টাকা ফান্ডে জমা রয়েছে। প্রতি বাস যে ৪৫০ টাকা চাঁদা দেয় তার মধ্যে ৫০ টাকা শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে জমা হয়ে যায়। অবশিষ্ট ৪০০টাকার মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভার পার্কিং ফি, পৌরসভার অফিস ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল দেয়া হয়। একইভাবে টেকনাফ পৌরসভার পার্কিং ফি, দুটি কাউন্টারের মাসিক ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, সিট প্ল্যানিং ওয়াবিল, ১০ জন লাইনম্যান, লিংকরোড থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পথিমধ্যে আরো তিনটি কাউন্টার ভাড়া এবং অফিস খরচ বাবদ খরচ করার হয়। এছাড়াও বাস পরিচালনার মধ্যে যে সমস্ত দুর্ঘটনা ঘটে তা সমাধানের জন্য খরচ করা হয়। সব খরচ করে যা অবশিষ্ট থাকে তা সমিতির তহবিলে জমা থাকে। সেখান থেকে শ্রমিক ও মালিকদের ঈদবোনাস প্রদান করা হয়। গত রমজানে ইফতার মাহফিল পরবর্তী (হোটেল ফিশওয়ার্ল্ড মিলনায়তনে) গাড়ি প্রতি ৫০০০ টাকা ঈদ বোনাস প্রদান করি আমি। যা উক্ত সমিতিতে আমিই প্রথম চালু করি।

নিজের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রসঙ্গে জহিরুল ইসলাম সিকদার আরো বলেন, কক্সবাজার বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির নিয়ে ষড়যন্ত্রের মূলহোতা মইন উদ্দীন ঝিংলজা ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহŸায়ক। তাদের গংটি জামায়াত-বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে কক্সবাজার বাস-মিনিবাস মালিক সমিতিকে আঁকড়ে রেখেছিল। তারা দীর্ঘ সময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক কোনো নেতাকর্মীকে কক্সবাজার বাস-মিনিবাস মালিক সমিতিতে ঘেঁষতে দেয়নি। আমি (জহিরুল ইসলাম) যখন বাস মালিক ও শ্রমিকদের সমন্বয়ে এই সমিতিকে জামায়াত-বিএনপির রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করতে কাজ করছি তখনই তারা আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার শুরু করেছে। মূলত তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারাদেশে চলমান শুদ্ধি অভিযানকে আমার বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে সুযোগ নিতে চাচ্ছে। যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। এরই অংশ হিসেবে তারা আমাকে, আত্মসাৎকারী, চাঁদাবাজ এবং ভূমিদস্যূ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। কিন্তু আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, একজন নেতা হিসেবে আমি সব সময় নিজেকে অত্যন্ত স্বচ্ছ রাখতে চেষ্টা করি। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমারও একটি প্রশ্ন তৈরি হলো। তা হলো- আমি যদি প্রতিদিন ৪৭ হাজার টাকা এবং মাসে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করি তাহলে সালাম, মইন উদ্দীন, তাহের, গিয়াস গং গত ১৭ বছরে কত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তা সাধারণ মালিক ও শ্রমিকেরা জানতে চায়।

সালাম-মইন গংয়ের টাকা আত্মাসাৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতীতে সাধারণ বাস মালিক ও শ্রমিকদের জিম্মি করে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সালাম, মইন উদ্দীন, তাহের, গিয়াস, সাজ্জাদ ও জসিম গং। উক্ত গং ঢাকা থেকে কক্সবাজার গমণকারী বাসগুলো থেকেও মালিক সমিতির নামে চাঁদা আদায় করে তা আত্মসাৎ করে আসছে। যা সাধারণ মালিকেরা পাওয়ার কথা। অন্যদিকে অতীতে তাহের সিকদার ও গিয়াস উদ্দীন গং ৬৭ লাখ টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত। সালাম, মইন উদ্দীন, জসিম, সাজ্জাদ গং ৩৩ লাখ সাধারণ মালিকদের সঞ্চয়কৃত টাকা আত্মসাৎ করেছে। তারা এভাবে ২০০১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সাধারণ মালিকদের জিম্মি করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। যা মাননীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের নিকট বিচারাধীন। টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত হয়ে এই গং সাধারণ মালিক কর্তৃক প্রত্যাখান হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সাধারণ মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যা শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমি সমিতির সকল সদস্যদের সমন্বয়ে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং সুষ্ঠুভাবে সমিতি পরিচালনা করছি। আমি দৃঢ়তার সাথে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি- সমিতির তহবিল থেকে আজ পর্যন্ত একটা টাকাও আত্মসাৎ করিনি। যদি তা কেউ প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমি স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করে আমার দলকে সম্মানিত করবো।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ আনসারী, বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি এস.এম এনামুল হক, সহ-সভাপতি নূর হোসেন, নাজির হোসেন কোং, শাহনেওয়াজ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ খুইল্যা মিয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সিরাজী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক এহছান উল্লাহ, অর্থ সম্পাদক খোরশেদ আলম, সদস্য আবুল কালাম সুমন, মোহাম্মদ লুৎফর কোং, আবদুল গফুর সওদাগর, আবদুল গফুর কোং প্রমুখ।