ডেস্ক নিউজ:
ফের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে (ইফা)। টানা আন্দোলনের পর মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও গত সপ্তাহ থেকে আবারও অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ইফার মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। এরপরই মহাপরিচালকের আদেশ বাতিল করে পাল্টা আদেশ জারি করেছেন সংস্থাটির সচিব কাজী নূরুল ইসলাম। এ নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আবারও সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনা। ইফা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ইফা সূত্রে জানা গেছে, ১৭ সেপ্টেম্বর মহাপরিচালক বোর্ড অব গভর্নরসের অনুমতি ছাড়াই ৩ জন কর্মকর্তার বদলির আদেশ জারি করেন। অন্যদিকে, ৮ সেপ্টেম্বর সংস্থার সচিব কাজী নূরুল ইসলাম, পরিচালক আফজাল উদ্দিন এবং পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের প্রকল্প পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ারকে সরিয়ে সেখানে পরিচালক বোরহান উদ্দিন মো. আবুল আহসানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় ফের ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর ৩ জন কর্মকর্তার বদলি ও ২ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া এবং কারণ দর্শানোর আদেশগুলো বাতিল করে পৃথক ৩টি আদেশ জারি করেন সচিব।

সূত্র জানায়, জাতীয় মসজিদে বায়তুল মোকাররম মসজিদের পিলার ভাঙার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ও সচিবের মধ্যে কয়েক মাস থেকেই দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ইফার বেশিরভাগ কর্মকর্তা এ ঘটনায় দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে তাদের প্রকাশ্যে বা গোপনে সমর্থন করছেন। তবে বেশিরবাগই সচিবের পক্ষ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ফলে মহাপরিচালকের দেওয়া আদেশগুলো বোর্ডে অনুমোদন হয়নি এমন যুক্তিতে সেগুলোকে বাতিল করে পাল্টা আদেশ জারি করেন সচিব।

এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলেও সামীম মো. আফজালকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

আর বাংলা ট্রিবিউনের প্রশ্নের জবাবে ইফা সচিব কাজী নূরুল ইসলাম বলেন, সরকারি চাকরি বদলিযোগ্য, এটা যে কোনও সময় হতে পারে। কিন্তু মহাপরিচালক বোর্ডের অনুমতি ছাড়া বদলির আদেশ দিতে পারেন না। তিনি (মহাপরিচালক) এমনটা ভুলে করেছেন কিনা তা জানি না। সে কারণে বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে সচিব হিসেবে সে আদেশ বাতিল করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, জাতীয় মসজিদে বায়তুল মোকাররম মসজিদের পিলার ভাঙার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অস্থিরতা শুরু হয়। সোহরাব হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পিলার ভেঙে দোকানের জায়গা বাড়ান। ইফার অনেকেই দাবি করছেন, এ ব্যবসায়ীর সঙ্গে মহাপরিচালকের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ১০ জুন ইফার মসজিদ মার্কেট বিভাগের পরিচালক মহিউদ্দিন মজুমদারকে সাময়িক বরখাস্ত করেন মহাপরিচালক। অভিযোগ রয়েছে, পিলার ভাঙার ঘটনায় দোষীদের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাফতরিক কার্যক্রম শুরু করেছিলেন মহিউদ্দিন মজুমদার, এ কারণে মহাপরিচালক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন বিভিন্ন অজুহাতে। এরপর শুরু হয় আন্দোলন। ১৮ জুন থেকে মহিউদ্দিন মজুমদারকে সমর্থন দিয়ে মহাপরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে সংস্থাটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করেন। এর আগে ১৫ জুন বন্ধের দিনে সামীম আফজাল আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে তার দফতর থেকে বিভিন্ন নথিপত্র সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও উঠে। সে সময় তাকে ইফা’র সচিব কাজী নূরুল ইসলামসহ অন্যরা বাধা দেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে দফায় দফায় বৈঠক করেন ইফা ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ২২ জুন বোর্ড অব গভর্নরসের এক সভায় মহাপরিচালকের ক্ষমতা কমানো হয়। সংস্থাটির প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের বদলি এবং শৃঙ্খলাজনিত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা মহাপরিচালক বোর্ড অব গভর্নসের অনুমতি নেওয়ার বিধান করা হয়। পদত্যাগের দাবি উঠলেও চাকরির মেয়াদকালীন সময় পর্যন্ত সামীম আফজাল থাকবেন বলেও সিদ্ধান্ত হয়।

প্রসঙ্গত সামীম মো. আফজাল ২০০৯ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। দু’দফায় তার চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবে।