ডেস্ক নিউজ:

ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ দেশের ১৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। তদন্তের পর কমিশন দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করবে। ইউজিসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত গুছিয়ে এনেছে ইউজিসি। অন্যদের বিরুদ্ধেও তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়মের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে পূর্ণাঙ্গ তদন্তে নামা হবে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার নাসিরউদ্দিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ এবং হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মু. আবুল কাশেম।

অন্য যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশিদ, ঢাকার ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. রোস্তম আলী এবং রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহাম্মদ।

সাবেক উপাচার্যদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম ইমামুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান। এছাড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে।

ইউজিসি সূত্র জানায়, ঢাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে সান্ধ্যকালীন কোর্সে ৩৪ শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে ভর্তি করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রকল্পের কাজের টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, জমি কেনায় দুর্নীতি, অডিট আপত্তিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। শাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগে প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্র্যাজুয়েটদের বঞ্চিত করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়োগ এবং ৫৩ অভিযোগ সম্বলিত বেনামি শ্বেতপত্রের বিষয়ে তদন্ত করা হবে। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণ, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং বাক স্বাধীনতা হরণসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগের তদন্ত চলছে।

এছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, প্রকল্পের কাজে অর্থ লেনদেন, অবৈধ ভর্তি এবং অশোভন আচরণসহ বিভিন্ন রকমের অভিযোগ করা হয়েছে ইউজিসিতে। একজন ভিসির বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিরও অভিযোগ রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভিযোগ তদন্তের পর প্রমাণ হলে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে। অভিযোগ কখনও সত্য হয়, আবার কখনও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় না। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে প্রমাণ খুঁজে বের করা। ইউজিসি থেকে আমরা সে চেষ্টা করছি। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচর্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত গুছিয়ে এনেছি। আমাদের সুপারিশ করার দায়িত্ব, সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘শুধু উপাচার্যই নন, অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসছে। বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত কমিটিগুলোকে শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনও পক্ষপাতিত্ব যেনও না হয় তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’ কমিটিগুলোকে বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্ত করে প্রতিবেদনে সুপারিশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।