মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

এদেশে একসময় ছিলো শীর্ষ রাজনীতিবিদেরা আইনজীবীদের সাথে শলা পরামর্শ করার জন্য আইনজীবী সমিতিতে নিয়মিত আসতেন। কিন্ত এখন তার উল্টো হয়ে গেছে। এটা আইনজীবীদের জন্য নিঃসন্দেহে মর্যাদাহানিকর।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিনকে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে প্রদত্ত সংবর্ধনা ও মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
বিচারপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, কক্সবাজার প্রশাসনিকভাবে ‘এ’ গ্রেডের জেলা হলেও জজশীপ এখনো ‘বি’ গ্রেড রয়ে গেছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এখানকার আইনজীবী ও আইনজীবী সমিতিকে কক্সবাজার জেলা জজশীপকে ‘এ’ গ্রেডে উন্নীতকরণের জন্য জোরালো প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যে আইনাঙ্গন আইনজীবীদের অন্ন, বস্ত্র সহ সবকিছুর সংস্থান করছে, সে আইনজীবী সমিতিকেই কক্সবাজার জজশীপকে ‘এ’ গ্রেডে উন্নীতকরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। জুডিশিয়ারি যখন মাথাউঁচু করে দাড়াবে, তখন আইনজীবীরা মর্যাদা পাবে। বিচারপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, কক্সবাজারে বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে চমৎকার সুসম্পর্ক রয়েছে। যেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। তিনি বলেন, বিচারক মানেই সৎ, আর আইনজীবী মানেই ২৪ ঘন্টা, সপ্তাহে ৭ দিনই কর্মব্যস্থতা। তিনি বলেন, কক্সবাজারে যেভাবে মেঘা প্রকল্পে উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে, এখানে আরবিট্রেশন সহ বিভিন্ন বিশেষায়িত মামলা হতে পারে। সে মামলা সমুহ চালাতে যাতে বাইর থেকে আইনজীবী আনতে নাহয়, সেজন্য কক্সবাজারের আইনজীবীদের এসব বিষয় চর্চা করতে হবে। তিনি বলেন, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কক্সবাজারে সিভিল প্রেকটিশনার আইনজীবী যথেষ্ট রয়েছে। যেটা কক্সবাজার আইনঙ্গনের জন্য খুব ভাল দিক। সিনিয়র আইনজীবীদের সবসময় জুনিয়রদের শেখানোর প্রবণতা থাকতে হবে। আর সিনিয়র ও জুনিয়র আইনজীবীর মধ্যে সম্পর্ক হলো পিতা-পুত্রের মতো।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে সমিতির সভাপতি আ.জ.ম মঈন উদ্দিনের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মোঃ ফিরোজ, জিপি এডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম, আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য এডভোকেট আব্বাস উদ্দিন।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেলের সঞ্চালনায় উক্ত সর্ম্বধনা সভায় বিচারকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২ ও ৩ এর বিচারক (জেলা জজ) যথাক্রমে জেবুন্নেছা আয়শা, মোঃ নুর ইসলাম, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলহাজ্ব মোহাম্মদ তৌফিক আজিজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আবু তাহের, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১ ও ২ যথাক্রমে সৈয়দ মুহাম্মদ ফখরুল আবেদীন ও মাহমুদুল হাসান, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার বিশ্বাস, সিনিয়র সহকারী জজ আলাওল আকবর, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসেন, মোহাং হেলাল উদ্দিন, সহকারী জজ জিয়াউল হক ও প্রচুর সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। প্রসংঙ্গত, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন কক্সবাজার জেলা জজশীপের আদালত সমুহ, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আওতাধীন আদালত সমুহ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সমুহ পরিদর্শনের জন্য গত ২১ সেপ্টেম্বর ৬ দিনের সফরে কক্সবাজার আসেন। বিচারপতি বোরহান উদ্দিন কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি দাওয়া সমুহ তাঁর পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন এবং প্রধান বিচারপতি মহোদয়কে এ বিষয়ে অবহিত করবেন বলে তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ফুল দিয়ে বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও অন্যান্য বিচারকদের বরণ করে নেয়া হয় এবং আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আ.জ.ম মঈন উদ্দিন ক্রেষ্ট দিয়ে বিচারপতি বোরহান উদ্দিনকে সম্ভাষণ জানান। অনুষ্ঠানের শেষে আপ্যায়ন সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রশিদের ব্যবস্থাপনায় অতিথি সহ সকলকে আপ্যায়ন করা হয়।