জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা এবং স্থানীয়করণ প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিঃ
রোহিঙ্গাদের সংকট মোকাবেলায় তহবিল সংগ্রহের জন্য জাতিসংঘের প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানিয়েছে কক্সবাজার সিএসও এবং এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)।
২৩ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির কোচেয়ার রেজাউল করিম ও আবু মোর্শেদ চৌধুরি যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, নিউইয়র্কে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা সংকট মোকবেলায় তহবিল সংগ্রহের জন্য জাতিসংঘের একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সিসিএনএফ একই সাথে তহবিল সংগ্রহ এবং ব্যবহারে, সর্বোপরি পুরো রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং স্থানীয়করণ নিশ্চিত করারও দাবি জানায়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় কাজ করছে এমন ৫০টি স্থানীয় এবং জাতীয় সিএসও-এনজিওর নেটওয়ার্ক হলো সিসিএনএফ।
জানা গেছে যে, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় ২০১৯ সালের জন্য তৈরিকৃত যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান বা জেআরপি) অনুযায়ী মোট চাহিদা ছিল ৯২০ মিলিয়ন ডলার, তবে প্রায় ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ৩৮% (৩৪৬ মিলিয়ন ডলার) সংগ্রহ করা গেছে। জাতিসংঘ অঙ্গ সংস্থাগুলো উল্লেখিত এই বৈঠকের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের জন্য আবারও চেষ্টা করছে, বাংলাদেশ সরকারও এই উদ্যোগকে সমর্থন করছে।
বিবৃতিতে সিসিএনএফ আরও বলেছে যে, আগস্ট ২০১৭ সালের মধ্যে রোহিঙ্গা আগমন শুরু হওয়ার পর থেকে ত্রাণ সহায়তার স্থানীয়করণ এবং স্বচ্ছতার দাবি ছিল শুরু থেকেই।
২০১৮ এবং ২০১৯ সালের জেআরপি-তে, এমনকি জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থাগুলোও স্থানীয়করণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। তবে এ ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন খুবই নগণ্য। উল্লেখ্য করা যেতে পারে যে, মানবিক সহায়তার স্থানীয়করণ নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা এবং বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক এনজিও (আইএনজিও) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, কারণ তারা তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ২০১৬ সালের মে মাসে এ সম্পর্কিত গ্র্যান্ড বার্গেন নামের একটি সনদে স্বাক্ষর করেছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর ‘গ্লোবাল লোকালাইজেশন টিম’ নামের একটি বিশেষ দল বা মিশন বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সহায়তা কার্যক্রমে স্থানীয়করণের পরিস্থিতি পরিদর্শনে আসেন। আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব রেডক্রস এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত সেই মিশন বাংলাদেশে স্থানীয়করণে নিশ্চিত করতে ১০টি সুপারিশ করে যান। স্থানীয়করণের অর্থ হলো মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে স্থানীয় সরকার এবং স্থানীয় সিএসও-এনজিওদের অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব, এবং এর মাধ্যমে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে পরিচালন ব্যয় কম হবে, এবং সকলের মাধ্যমে উন্নয়ন (হোল অব সোসাইটি) নিশ্চিত হবে। সিসিএনএফ শুরু থেকেই ক্রমাগতভাবে এই দাবিগুলো জানিয়ে আসছে।
মানবিক সহায়তার প্রায় ৬০%-৭০% আসছে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থগুলোর মাধ্যমে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত মোট অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে ১.৩২ বিলিয়ন ডলার (১১,১৩৭ কোটি টাকা) সেই হিসেবে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য বরাদ্দ ছিলো আনুমানিক মোট ৬২১৪ ডলার (৫.২৫ লাখ টাকা)। ২০১৭ সালে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য মাসিক বরাদ্দ ছিলো আনুমানিক ৪৯৮ ডলার (৪২ হাজার টাকা), ২০১৮ সালে প্রতি পরিবারের জন্য বরাদ্দ ছিলো প্রতি মাসে প্রায় ২৫৭ ডলার (২১.৭৪ হাজার টাকা), এবং এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তহবিল অনুসারে ২০১৯ সালে পরিবার প্রতি এই বরাদ্দের পরিমাণ ২০৪ ডলার (১৭.২৩ হাজার টাকা)। এটা স্পষ্ট যে, প্রায় ৫০% সহায়তা কমে গেছে, যা ভবিষ্যতে আরও খারাপ হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে, কারণ বিশ্বব্যাপী দাতারা রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। সিসিএনএফ আশঙ্কা করছে যে, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় অর্থায়নের চাপটা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের উপর পড়বে, যা অনাকাক্সিক্ষত এবং দুর্ভাগ্যজনক।
সিসিএনএফ দাবি করছে যে, (১) মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার এবং স্থানীয় সিএসও এনজিওগুলিকে দিতে হবে, জাতিসংঘ এবং আইএনজিওর ভূমিকা মনিটরিং এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায় সীমিত রাখা উচিত, (২) কক্সবাজারের স্থানীয় সিএসও-এনজিওর বিকাশের স্বার্থে বিশেষ তহবিল গঠন করতে হবে, (৩)ইন্টার সেকটোরাল কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)-তে স্থানীয় সিএসও-এনজিও এবং স্থানীয় সরকারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, এবং বর্তমানে যে জেআরপি ২০২০ প্রস্তুতের প্রক্রিয়া চলছে, সেই প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় সিএসও-এনজিওদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, (৪) রোহিঙ্গা কর্মসূচিতে ব্যয় করা অর্থের কত অংশ পরিচালন ব্যয় আর কত অংশ সরাসরি রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় হয় সেটা স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে।