ইমাম খাইর, সিবিএনঃ

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আটটার দিকে দুই ছেলে মোরশেদ ইসলাম আঁখি ও মোহাম্মদ সাউদ কাইয়ুম আদিলকে প্রতিদিনের মতো প্রাইভেট পড়িয়ে বাড়িতে দিয়ে গিয়েছিল নুরুল হক নুরু। আদর সোহাগও করেছিল দুই সন্তানকে। কে জানতো এটাই বাবা-সন্তানের শেষ দেখা?
দুঃখের বিষয়, তরতাজা মানুষটির জীবিত দেহে বাড়িতে আর ফেরা হলো না। ফিরলো লাশ হয়ে। চিরবিদায় নিয়ে পাড়ি জমালো ওপারে।
ময়নাতদন্ত শেষে সাদা কফিনে জড়িয়ে যখন নুরুর নিথর দেহ গ্রামীণ মেঠোপথ পেরিয়ে বাড়ির উঠোনে তোলা হলো, ঠিক তখন চারিদিকে শুরু হয়ে যায় হাউমাউ। স্বজনদের বুক ফাটা কান্নার আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস।
হতভাগা নুরুর মা-স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছে বারবার। অঝোর নয়নে কাঁদছে পাড়াপড়শিরাও। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই কারো।
একদিন আগেও যেই বাবার টমটমে চড়ে বাড়িতে এসেছিল আঁখি ও আদিল, সেই বাবাকে আজ সাদা কফিনে বন্দী করা হয়েছে। পিতার নিথর দেহ শায়িত দেখে নির্বাক চেয়ে আছে দুই কলিজার টুকরা সন্তান মোরশেদ ইসলাম আঁখি ও মোহাম্মদ সাউদ কাইয়ুম আদিল।
নুরুর শেষ গোসলের পর আত্মীয়-স্বজনের যখন তাকে শেষবারের মতো দেখছে, তখন অনুভূতি হারিয়ে ফেলে দুই সহোদর আঁখি ও আদিল। গরীবের উঠোনে এতগুলো মানুষের পদচারণায় তারা হতবিহবল! ভাবতেও পারেনি কেন এমন হলো? কোন অপরাধে তাদের বাবাকে খুন করা হলো?
মোরশেদ ইসলাম আঁখি বাঁশকাটা নুরানী তা’লীমুল কুরআন মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। মোহাম্মদ সাউদ কাইয়ুম আদিল একই মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণীতে পড়ে।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে দশটার দিকে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও দক্ষিণ মাইজপাড়ায় (সিদ্দিকের বাপের পুকুর পাড়) নুরুল হক নুরুকে গুলি করে হত্যা করে জোহান নামের এক সন্ত্রাসী।
পেশায় টমটম চালক নুরু কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর মধ্যম নাপিতখালী ৪ নং ওয়ার্ডের আব্দুস ছবির ছেলে।
ঘাতক জোহানকে অবৈধ অস্ত্র ও কার্তুজসহ ওইদিনই ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে ঈদগাঁও দক্ষিণ মাইজপাড়ার বাসিন্দা সামরিক বাহিনীর সাবেক লেঃ কর্ণেল এহছানুল্লাহর ছেলে।
ইতিপূর্বে সে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ কক্সবাজার কলাতলীতে আটক হয়ে দীর্ঘদিন কারা ভোগ করছিল। জামিনে এসে পুরোদমে নেমে পড়ে মাদক ব্যবসায়।
সন্ত্রাসী জোহান প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে বলেও জানা গেছে।

উল্লেখ্য, নুরুল হক নুরুর নামাজে জানাজা রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) আসরের নামাজের পর কৈলাশেরঘোনা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় শোকার্ত জনতার ঢল নামে। শেষে নুরুকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।