আতিকুর রহমান মানিক

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক মৎস্য শিকার করছে নিবন্ধনহীন প্রায় ২৭ হাজার ইঞ্জিনচালিত নৌযান। আর এতে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। অনিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা মোট যান্ত্রিক নৌযানের মধ্যে ৮১ শতাংশের বেশি। তবে প্রায় ৬ হাজার যান্ত্রিক নৌযানের নিবন্ধন থাকলেও প্রতি বছর নবায়িত হয় মাত্র দুই হাজার নৌযান। এতে সরকার একদিকে বড় অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে অনিরাপদ হচ্ছে সামুদ্রিক মৎস্য শিকার।

সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট ও সমুদ্র বাণিজ্য অধিদপ্তরের সার্টিফিকেট অব ইন্সপেকশন (সিওআই) জটিলতার কারণে নিবন্ধনে আগ্রহ নেই নতুন তৈরি করা নৌযান মালিকদের। অন্যদিকে ভ্যাট কমিশনারেট ও নৌযান মালিক নেতৃবৃন্দ বলছেন, সাগরে সরকারি নজরদারির দুর্বলতার কারণে নতুনের পাশাপাশি পুরনো নৌযানগুলো নিবন্ধন করছে না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাংলাদেশের সীমানায় মৎস্যশিকার করতে পারে দেশীয় নৌযানগুলো। বর্তমানে সামুদ্রিক জেলের সংখ্যা ৫ লাখ ১৬ হাজার। সামুদ্রিক ইঞ্জিনচালিত নৌযান ৩২ হাজার ৮৫৯টি। এর মধ্যে সাগরে মাছ শিকারে সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিয়েছে প্রায় ৬ হাজার। প্রায় দুই হাজার নিয়মিত নবায়ন হলেও বাকিগুলো নবায়িত হচ্ছে না।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বঙ্গোপসাগর থেকে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮৭ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মৎস্য আহরিত হয়েছে। এর মধ্যে ইঞ্জিনচালিত নৌযান দিয়ে আহরণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬শ মেট্রিক টন। আহরিত সামুদ্রিক মৎস্যের ৮১.৬৬ শতাংশ আহরণ হয় যান্ত্রিক নৌযান দ্বারা। এই যান্ত্রিক নৌযানের মধ্যে প্রায় ২৭ হাজারের নিবন্ধন নেই।
মেরিন হোয়াইট ফিশ ট্রলারস ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অনেক বড় জলসীমা। এ জলসীমায় সরকারি সংস্থাগুলোর নজরদারির অভাব রয়েছে। যে কারণে যান্ত্রিক নৌযানগুলোর একটি বড় অংশের নিবন্ধনে অনীহা রয়েছে। আমরা চেয়েছি, মৎস্য অধিদপ্তর, সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর ও বোট মালিককের স্ব স্ব সংগঠনগুলোর নেতাদের নিয়ে কোস্টাল জোনগুলোতে আলাদা আলাদা ক্যাম্প করে জরিপের মাধ্যমে নৌযানের সংখ্যা নিরুপণ করার দাবী জানান তারা।

সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক সুমন বড়ুয়া বলেন, শুধুমাত্র সিওআই ও ভ্যাট জটিলতার কারণে অনেক নৌযান মালিক সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিচ্ছেন না। এজন্য ১৬ টনের নীচে যান্ত্রিক নৌযানগুলোর সমুদ্র বাণিজ্য অধিদপ্তরের সিওআই সনদ নেওয়ার নিয়ম বাদ দিয়ে সরাসরি সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের অধীনে নিবন্ধন ক্ষমতা দেওয়ার জন্য অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে মাত্র ৬ হাজার যান্ত্রিক নৌযান নিবন্ধিত রয়েছে। এর মধ্যে প্রতি বছর মাত্র দুই হাজার নবায়ন করছে। নিবন্ধন জটিলতা দূর করে নিবন্ধনের বাইরে থাকা নৌযানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা গেলে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আয় করতে পারবে।
তবে, নৌযান তৈরিতে ভ্যাটের কোনো জটিলতার নেই দাবি করে চট্টগ্রাম কাস্টমস এঙাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, আগে টনেজ হিসেবে ভ্যাট নির্ধারিত হতো। এখন রাজস্ব বোর্ডের নতুন পরিপত্র অনুযায়ী নৌযান তৈরিতে যে পরিমাণ নির্মাণ ব্যয় হয় তার ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। ভ্যাট সনদ দেওয়ার পরই নৌযানগুলো নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তর, বিআইডব্লিউটিএ ও সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের সনদ নিতে পারবেন। এখানে জটিলতা নেই।
তিনি আরো বলেন, রাস্তায় যেমন নিবন্ধন না থাকলে যানবাহন চলাচলের সুযোগ নেই। তেমনি সাগরে নৌযানগুলোর তদারকি করার জন্য বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তদারককারী প্রতিষ্ঠানগুলো সদিচ্ছা দেখালেই নৌযানগুলো ভ্যাট দিতে বাধ্য হবেন, প্রয়োজনীয় নিবন্ধন নিতেও সচেষ্ট হবেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিশিং বোট মালিক ও জেলেরা বলেন নিবন্ধন ও নবায়নের ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হওয়ায় অনেকেই নিবন্ধন করেননা।