তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রামে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুপালী ইলিশ। বৃহত্তম মৎস্য অবতরণকেন্দ্র নগরীর ফিশারি ঘাটে এখন প্রাণচাঞ্চল্য। জেলেদের হাক ডাকে মুখর এখন ফিসারি ঘাট। সকাল থেকে নৌকা ভর্তি করে ইলিশ মাছ নিয়ে নগরীর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ফিরছেন জেলেরা। দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সাগরে প্রচুুর মাছ ধরা পড়ায় খুশি তারা। কাঙ্খিত রুপালী ইলিশ ধরা পড়ায় এ হাসি ট্রলার মালিক ও আড়ৎদারদের মুখেও।

ফিসারি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, নৌকা ভর্তি ইলিশ নিয়ে পাড়ে ভিড়ছে জেলেরা। মাছ ভতি ট্রলার পাড়ে ভিড়লে শুরু হয় জেলেদের হাঁক ডাক। তারপর চলে বিকিকিনি। ভোজন রসিকরাও ভোরে চলে আসেন ফিসারি ঘাটে। দাম একটু বেশি হলেও পছন্দের মাছটি নিয়ে বাড়ি ফিরছে। ফিশারিঘাটে ছোট-বড় মাছ প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ১২-২২ হাজার টাকায়। এছাড়া বড় আকারের ইলিশের মন প্রতি ২৫ হাজার থেকে ২৯ হাজার টাকা। ৩০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি পাচঁশ থেকে ছয়শো টাকায়। আর এক কেজির ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। প্রায় প্রতিটি ট্রলারেই প্রতি ট্রিপে ৩ থেকে ৬ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করছে। এ ইলিশগুলো ফিসারি ঘাট মৎস্য আড়ৎ থেকে রপ্তানীকারকরা ট্রাকে করে দেশের বিভিন্নস্থানে বাজারজাত করছেন। এছাড়া চট্টগ্রামের কাট্টলী, সীতাকুন্ড ও পতেঙ্গা উপকূলীয় এলাকায়ও ইলশ প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।

গভীর সমুদ্র থেকে ফিরে আসা ট্রলারের মাঝি মকবুল হোসেনসহ আরো কয়েকজন মাঝি জানান, সাগরে এখন প্রচুর পরিমাণ ইলিশ মাছ আছে। আমরা প্রত্যেকটা ট্রলারে অল্প করে জাল ফেলতে পেরেছি তাতেই ৩ হাজারের মতো মাছ পেয়েছি। ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে বেশী সময় থাকতে পারিনি ঘাটে চলে আসতে হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে আমাদের ট্রলারে বেশি মাছ জালে ধরা পড়তো। দামও পেতাম অনেক বেশি।

তারা আরো জানান, আমাদের দেশে ৬৫ দিন অবরোধ দেয়ার কারণে ভারতীয় ট্রলারগুলো বাংলাদেশী সীমানায় এসে মাছ ধরেছে। এই অবরোধ যদি ভারতের সাথে একত্রে দেয়া হতো তবে আমরা আরো বেশী মাছ ধরতে পারতাম।

ফিশারীঘাটের আড়তদার মা মৎস্য ভান্ডারের ব্যবস্থাপক অনিল দাশ জানান, ইলিশের ভরা মৌসুম এটি। গত শুক্রবার পূর্ণিমার জো থাকায় বঙ্গোপসাগরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ। ফিশারীঘাটে প্রতিদিন চার শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার ইলিশ নিয়ে ঘাটে ভিড়ছে। তিনি বলেন, যেসব ইলিশ ধরা পড়ছে সেগুলো ফিশারীঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া ক্রেতারা নিজে গিয়েই নৌকা থেকে মাছ কিনে নিচ্ছেন। তাতে জেলেরা মাছ বিক্রি করে নগদ টাকা পাচ্ছেন। ক্রেতারাও বাজারের চেয়ে কম দামে ইলিশ কিনতে পেরে অনেক খুশি।

মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি ট্রলার ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করেছে। বর্তমানে স্থানীয় আড়তগুলোতে গ্রেড অনুযায়ী প্রতিমণ ইলিশ ১৮ থেকে ২৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে গভীর সমুদ্রে জেলেদের সাইনজালসহ অগভীর জলে খুটা জালেও পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ছে। গভীর সমুদ্র থেকে তীরে ফিরে আসা প্রতিটি ট্রলার অনেক পরিমাণে মাছ নিয়ে এসেছে। অগভীর সমুদ্রেও খুটা জালে বড় সাইজের অনেক ইলিশ ধরা পড়ছে। মৎস্য অধিদফতরের কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনায় ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

এদিকে একটি সমিক্ষায় দেখে যায়, দেশে ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ টন ছাড়িয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। মাত্র এক দশকের ব্যবধানে উৎপাদন বেড়েছে ২ লাখ টনের বেশি। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। ইলিশের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও চট্টগ্রামের বাজারে দাম কিছুটা বেশি।

নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজার, কাজিড় দেউড়ি বাজার, বহদ্দার হাট, চকবাজার, কর্ণফুলী বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশে দাম পাঁচশো টাকা, ১ কেজি দামের ইলিশের দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, সরবরাহ বেশি থাকলেও আড়ৎদারদের কাছ থেকে আনা পর্যন্ত দাম পড়ে অনেক বেশি। এজন্য দামটা কিছুটা বাড়তি।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কার্যালয়ের সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞার ফল পাচ্ছেন জেলেরা। যেভাবে এখন ইলিশ ধরা পড়ছে তাতে নিষেধাজ্ঞার সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সময় লাগবে না। বিষয়টি জেলেরাও বুঝতে পারবেন।

তিনি বলেন, বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে ইলিশের গতিপথ। পুরো মৌসুমজুড়ে কাঙ্খিত বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় এবার ইলিশের সরবরাহ থাকবে বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, নদীতে সৃষ্ট বহু চর ও ডুবোচর এবং পদ্মা ও মেঘনার নাব্যতা হ্রাস পাওয়ার কারণে সমদ্র্র থেকে ইলিশ মিঠা পানিতে আসতে বাধা পাচ্ছে। তবুও পূর্ণিমার জোয়ারে নদীর মিঠা পানিতেও ইলিশ ধরা পড়বে। এতে বাজারে অনেক কমমূল্যে ইলিশ পাওয়া যাবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।