রিয়াজুল হাসান খোকন, বাহারছড়া, টেকনাফ :

টেকনাফ বাহারছড়ার ঐতিহ্যবাহী শামলাপুর ফুটবল খেলার মাঠ এখন এক ধরণের মানুষরুপী দখলবাজ শকুনের নজরে পড়েছে বলে অভিযোগ। দীর্ঘ দুই বছরে যাবত অত্র এলাকায় একমাত্র ঐতিহ্যবাহী এই খেলার মাঠটি কিছু এনজিও সংস্থার দখলে থাকলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্তা ব্যক্তিদের তেমন কোনো জোরালো ভূমিকা দেখা যায়না বলে ক্রীড়া প্রেমীদের অভিমত। হয়ত তাদের দূর্বল অবস্থানের জন্য এমন অবস্থা বলে সবার ধারণা।

জানা যায় ২০১৭ সালে মায়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন ও রোহিঙ্গা সংকটের সময় দলে দলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের উখিয়া টেকনাফে আশ্রয় নেয়। তার মধ্যে টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর গ্রামে ২০-৩০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। অন্যদিকে এই রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন নিত্যপণ্য সামগ্রী বিতরণের জন্য প্রয়োজন পড়ে একটি স্থানের। তার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন এনজিও সংস্থা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে দখলে নেয় শামলাপুর এক মাত্র ফুটবল খেলার মাঠটি। যদিওবা এই মাঠটি সরকারী খাস জায়গা। কিন্তু এই মাঠটি যুগ যুগ ধরে পুরো বাহারছড়া ইউনিয়নের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রত্যেক বছর আয়োজন হত ফুটবল, ক্রিকেট সহ নানান খেলাধুলার আসর। দর্শকদের আনন্দ চিৎকারে ভরে উঠত পুরো এলাকা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দল এসে আসরকে মাতিয়ে রাখত। এছাড়া প্রতিদিন বিকেলে স্থানীয় যুব ও ছাত্র সমাজ অত্র মাঠে খেলাধুলায় সময় কাটাত। সন্ধ্যায় সময় কাটাত বিভিন্ন পেশার মানুষ। মনো ও নিউরো বিজ্ঞানীতের মতে যুব ও ছাত্র সমাজকে বিভিন্ন অপরাধ মুলক কর্মকান্ড থেকে দুরে রাখতে নৈতিক শিক্ষা ও খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু রোহিঙ্গাদের জন্য বাহারছড়ার ছাত্র ও যুব সমাজ তাদের প্রিয় মাঠে খেলাধুলা করতে না পেরে মানসিক ভাবে অনেকটা বিপর্যস্ত বলে স্থানীয় অনেক খেলোয়াড় জানান। বলতে গেলে মাঠের আকাশ এখন দুঃখের ঘোর অন্ধকার। যেন দেখার কেউ নেই।

অন্যদিকে এই সংকটের শেষ কখন হবে কেউ জানেনা। কবে উদ্ধার হবে শামলাপুরবাসীর প্রিয় মাঠ এমন প্রশ্ন সবার। তার মধ্যে স্থানীয় যুব সমাজ তাদের প্রিয় মাঠটি ফিরিয়ে দিতে প্রশাসনের কাছে আবেদন করলেও তা যেন আবেদনই থেকে গেল। নেয়নি কোনো ধরণের পদক্ষেপ। যার জন্য স্থানীয়রা এই মাঠের জন্য রোহিঙ্গাদের আরো ব্যাপক ভাবে ঘৃণা করতে শুরু করেছে।

এখন সবার একটাই আশংঙ্কা তাদের প্রিয় মাঠটি দখলে থাকতে থাকতে এক সময় যুব ও ছাত্র সমাজ এই মাঠে খেলাধুলা করার আশা ভুলে যাবে। আর সেই সুযোগে হয়ত এক ধরণের প্রভাবশালী মানুষরুপী শকুন এই মাঠ তাদের বলে ঘোষণা করবে। শামলাপুর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হওয়াতে হয়ত বড় একটি হাউজিং প্রকল্প হাতে নিবে। তখন হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী শামলাপুর বাসীর সবার প্রিয় এই মাঠ। যেখানে মিশে আছে যুগ যুগ ধরে স্থানীয় মানুষের স্মৃতি, সুখ, দুঃখ, বেদনা। এখন সময়ের অপেক্ষা কি ভাগ্য নির্ভর করছে শামলাপুর খেলার মাঠের ভূখন্ডে।