মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার শহরের কলাতলী মোড়। কক্সবাজার শহরের অন্যতম প্রবেশদ্বার বলা চলে। একটি চৌমুহনী। এই মোড়ে ৪ দিকেই সড়ক যাতায়াত। এই মোড়টিতে ৩ টি ৩ প্রজাতির হাঙ্গর মাছের প্রতিকৃতি বা ভাষ্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। তার একটি হলো বাঘা হাঙ্গর, দ্বিতীয়টি হলো-হাতুড়ী মাথা হাঙ্গর ও তৃতীয়টি হলো-চিতা হাঙ্গর। এ ভাষ্কর্য যাঁরা তৈরি করেছেন, তারাই হাঙ্গর গুলোর প্রজাতিগত শ্রেণিবিন্যাস করেছেন। ঢাকা ব্যাংকের অর্থায়নে হাঙ্গর গুলোর ভাষ্কর্য ও মোড়ের সৌন্দর্যবর্ধন কাজ করা হয়েছে। ২০১০ সালের ৫ জুলাই এই হাঙ্গর ভাষ্কর্যটি উদ্বোধন করা হয়। এ তথ্য ভাষ্কর্যের নীচে পাথরে খোদাই করে লেখা রয়েছে।
দেশী-বিদেশী পর্যটক ও দর্শনার্থীদের আকর্ষন, কক্সবাজারের সভ্যতা, ঐতিহ্য, কৃষ্টি তুলে ধরা ও শহরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য এই মোড়ে নান্দনিক স্থাপত্যটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু মোড়টি ৩ টি হাঙ্গরের ভাষ্কর্য দিয়ে সাজানো হলেও এটির সর্বত্র নামকরণ চলছে ‘ডলফিন মোড়’ বলে। সাইনবোর্ড, ভিজিটিং কার্ড, হোটেল মোটেলের ঠিকানা, বাড়িঘর ইত্যাদিতে হাঙ্গর মাছ গুলোকে ডলফিন মনে করে ‘ডলফিন মোড়’ বলে যত্রতত্র নামকরণ করা হচ্ছে। আবার জনবহুল ও ব্যস্ততম এ এলাকাটি কক্সবাজারের ঐতিহ্যের সাথে কোন ধরনের মিল না রেখে হাঙ্গর ভাষ্কর্য দিয়ে কেন সৌন্দর্য বর্ধন করা হলো, এলাকাবাসী তা জানেনা। যা কক্সবাজারের ঐতিহ্যের ধারেকাছেও নেই এই ভাষ্কর্য। যদি কক্সবাজারের সামুদ্রিক মাছ ও মাৎস্য দিয়ে যদি মোড়’টিকে সাজানো হয়, তাহলে ইলিশ, রূপচান্দা, চিংড়ি, ঝিনুক, শামুক, কাকড়া ইত্যাদির প্রতিকৃতি বা ভাষ্কর্য নির্মান করে এটার সৌন্দর্য বর্ধন করা যেত। এখন মনে হচ্ছে-কক্সবাজার যেন হাঙ্গরের জন্য বিখ্যাত, হাঙ্গর মাছ ধরা যেন কক্সবাজারবাসীর অন্যতম পেশা। অথচ কক্সবাজার মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউটের একজন সামুদ্রিক মৎস্য গবেষক বলেছেন, হাঙ্গর মাছের সাথে কক্সবাজারের ইতিহাস, এতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতির কোন সম্পর্ক নেই। আর হাঙ্গর হচ্ছে-মৎস্য, মাৎস্য ও সামুদ্রিক প্রাণী খেকো একটা হিংস্র ও রাক্ষুসে মাছ। আর হাঙ্গরের ভাষ্কর্য দিয়ে কিভাবে এটা ‘ডলফিন মোড়’ নামকরণ হলো এই এলাকার কেউ সেটা জানেন না। এধরণের বিভ্রান্তিমূলক নামকরণ ভবিষ্যতে কক্সবাজারবাসীকে ভূল ধারণার মধ্যে ফেলে দেবে। যা মোটেও কাম্য নয়। বিভ্রান্ত হবে পর্যটক, দর্শনার্থীরা। বিকৃত হবে কক্সবাজারের ভবিষ্যত ইতিহাস। প্রকৃত ইতিহাস, ঐতিহ্য হয়ত হারিয়ে যাবে। অবশ্য বছরখানেক আগে শোনা গিয়েছিল, হাঙ্গর ভাষ্কর্যটি ভেঙ্গে ফেলে সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষ্কর্য নির্মাণ করা হবে।