সিবিএন ডেস্ক:

ভারতের আসামে চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) থেকে বাদ পড়া মানুষদের জন্য বন্দিশিবির নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি বন্দিশিবির নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে সাতটি ফুটবল মাঠের সমান জায়গার ঘন বন সাফ করে ফেলা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত ৩ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে আশ্রয় দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এই বন্দিশিবিরটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বন্দিশিবিরে একটি স্কুল, একটি হাসপাতাল, একটি বিনোদনকেন্দ্র ও নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য আবাসস্থলও থাকবে। বন্দিশিবিরটিকে উঁচু বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখা হবে। বন্দিশিবিরের বাসিন্দাদের নজরদারির মধ্যে রাখার জন্য নির্মাণ করা হবে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারও।

বন্দিশিবির নির্মাণের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে রয়টার্স জানিয়েছে, গত সপ্তাহে প্রকাশিত আসামের নাগরিকপঞ্জিতে নাম নেই অনেক শ্রমিকের। নিজেদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে না পারলে এই শ্রমিকদের অনেকেরই ঠাঁই হতে পারে এই বন্দিশিবিরে।

সাতটি ফুটবল মাঠের সমান বনাঞ্চল সাফ করে নির্মাণ করা হচ্ছে এই বন্দিশিবির। ছবি: রয়টার্সসাতটি ফুটবল মাঠের সমান বনাঞ্চল সাফ করে নির্মাণ করা হচ্ছে এই বন্দিশিবির। ছবি: রয়টার্স

শেফালি হাজং নামের এক নির্মাণশ্রমিক জানিয়েছেন, প্রকাশিত নাগরিকপঞ্জিতে তাঁর নাম নেই। প্রায় ১৯ লাখ মানুষের মতো তাঁকেও এখন নিজের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। দিতে না পারলে নিজের হাতে নির্মাণ করা এই বন্দিশিবিরই হতে পারে তাঁর ভবিষ্যৎ আশ্রয়স্থল। সবকিছু জেনেও পেট চালানোর তাগিদে বন্দিশিবির নির্মাণের কাজ করছেন শেফালি। দিনে ৪ ডলার বা ২৮৬ রুপি পারিশ্রমিক পান শেফালির মতো শ্রমিকেরা। অভাবী ওই এলাকায় এই মজুরিকে বেশ আকর্ষণীয়ই মনে করেন শ্রমিকেরা।

শেফালির মা মালতী হাজংও কাজ করছেন এই প্রকল্পে। কেন নাগরিকপঞ্জিতে নাম নেই, সে ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই তাঁর। নাগরিকত্বের প্রমাণ দেওয়ার জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ নেই তাঁর, এমনটিও জানালেন তিনি। জন্মসনদ না থাকায় নিজের আসল বয়সও বলতে পারেন না শেফালি।

৩৫ বছর বয়সী আরেক নির্মাণশ্রমিক সরোজিনী হাজং। টাকা রোজগারের জন্য তিনিও এখানে কাজ করতে এসেছেন। শেফালির মতো তাঁর নামও নেই নাগরিকপঞ্জিতে, নেই জন্মসনদও। তবুও কেন এখানে কাজ করছেন? জানতে চাইলে সরোজিনীর উত্তর, ‘কী হবে, সে বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কিন্তু আমাদের কীই-বা করার আছে? আমাদের টাকার দরকার।’

শেফালি হাজংয়ের মতো অনেক শ্রমিক পেটের দায়ে কাজ করছেন নির্মাণশ্রমিক হিসেবে। ছবি: রয়টার্সশেফালি হাজংয়ের মতো অনেক শ্রমিক পেটের দায়ে কাজ করছেন নির্মাণশ্রমিক হিসেবে। ছবি: রয়টার্সবন্দিশিবির

নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে আছেন শফিকুল হক নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানালেন, প্রতিদিনই ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন আসছে বন্দিশিবির নির্মাণের কাজে অংশ নিতে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আসামের এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে আসামের কারাগারে থাকা ৯০০ বন্দীকে এই বন্দিশিবিরে আনা হবে। এর আগে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি দল গত বছর আসামের দুটি কারাগার পরিদর্শন শেষে জানিয়েছিল, সেখানকার বন্দীরা অন্য কারাগারের বন্দীদের মতো ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাটুকুও পাচ্ছেন না।

গত ৩১ আগস্ট আসামের এনআরসি প্রকাশিত হয়। ওই তালিকায় চূড়ান্তভাবে ঠাঁই হয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখ মানুষের। আর তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লাখ ৬ হাজার মানুষ। তালিকা প্রকাশের পর এই বিশালসংখ্যক মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেছে।