শেষমেষ আবু বক্কর

প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০৩:১০ , আপডেট: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০৭:১৮

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


জিকির উল্লাহ জিকু :
রাজনীতিতেও দেবতার আশির্বাদ কিংবা দেবতার অভিশাপ দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। মাঠের অবস্থা যাই থাকুক দেবতা চাইলে নেতৃত্ব আপনারই। আবার দেবতা যদি চায় নেতৃত্ব আপনার হবেনা। তাহলে জনসমর্থন কোন কাজে আসবেনা। মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সম্মেলনও তাই হয়েছে।  মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সম্মেলন হয়ে গেলো পৌরসভার সিকদারপাড়া গোরকঘাটা প্রাইমারি স্কুলের লাগোয়া মাঠে। সম্মেলনে সেপ্টেম্বর কোন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে তা আঁচ করতে পেরে অনেক অভিমানী নেতা ভেবেছিলেন সম্মেলনে যাবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রায় সকলে সম্মেলনে হাজিরা দিয়েছেন। দেশে কোণ ঠাসা বিএনপি নেতারা এখন আকাশে বিদ্যুৎ চমকালেও ভয় পায়। এই অবস্থায় সভাপতিত্ব করাটাও একটা সাহসের বিষয়। সেই সাহস দেখিয়ে বরাবরই ক্ষমতার বলয়ে থাকা আবু বক্কর ছিদ্দিক সভায় সভাপতিত্ব করেন। শেষমেষ তিনিই সভাপতি নির্বাচিত হন উপজেলা পর্যায়ে প্রথমবার। মেঘ-বৃষ্টি সিগনালের মধ্যে সাগর পেরিয়ে কঠিন দায়িত্ব পালন করতে ছুটে যান জেলা বিএনপির সভাপতি শাহাজাহান চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদের বিশ্বস্ত মহিলা সেনাপতি (সম্মেলনের একজন কাউন্সিলরের মতে) জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. শামীম আরা স্বপ্না। উপজেলা বিএনপির এই দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি সাবেক সংসদ সদস্য শাহাজাহান চৌধুরী আবেগময় কণ্ঠে বললেন,

‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা মানে গণতন্ত্র, রাজনীতি, মানবাধিকার সবকিছুই এখন কারাবন্দি। এখন বাংলাদেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রার গ্যারান্টি নেই। তাই পুরো বাংলাদেশই এখন কারাগারে পরিণত হয়েছে। এই অচল অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।’

যুগ্ম-আহ্বায়ক আমিনুল হক চৌধুরীর ও সাবেক ছাত্রনেতা আকতার হোসেনের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশনে শাহজাহান চৌধুরী আরো বলেন, পুরো বিশ্ব এখন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে সরে আসছে। কারণ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প মারাত্মক পরিবেশ বিধ্বংসী। এই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পুরো মহেশখালীসহ আশেপাশের উপজেলাগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। তখন বিপুল জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যূত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করবে। আমাদের প্রশ্ন- যে উন্নয়ন প্রকল্প মানুষ মারবে সে প্রকল্প কাদের স্বাথের্, জনগণ তা জানতে চায়।’

সম্মেলন শেষে কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি কোন প্রার্থী না থাকায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু বক্কর প্রথমবারের মত উপজেলা সভাপতি নির্বাচিত হন। অবশ্য প্রার্থী থাকলেও সালাহ উদ্দিনের আর্শিবাদপুষ্ট আবু বক্কর চেয়ারম্যানের বাইরে আর কারো মনোনীত হওয়ার কোন সুযোগ ছিলনা। এই দোষ কারোনা। এখন পৃথিবীতে গণতন্ত্র নেতাদের পকেটে ঢুকে গেছে। একজন কাউন্সিলর মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের মত বিএনপি গণতন্ত্রও ‘হাওয়া মে উড়তা হায়’।

আর সাধারণ সম্পাদক পদে ৪জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ঘোষণা না দিয়ে পরে জেলা থেকে পরে জানানো হবে বলে কাউন্সিল অধিবেশ শেষ হয়।

উক্ত দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এটিএম নূরুল বশর চৌধুরী। প্রধান বক্তা ছিলেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক পিপিএড. শামীম আরা স্বপ্না। সম্মেলনের অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এড. নূরুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক মোবারক হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী, সহ-সাংগঠনিক ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এম. মোকতার আহমদ ও আতাউল্লাহ বোখারী, উপজেলা বিএনপি উপদেষ্টা আবু তাহের চৌধুরী ও ডা. আবদুল মোতালেব, জেলা যুবদলের সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জল, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহাদত হোসেন রিপন, সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমান ফাহিম, উপজেলা যুবদলের সভাপতি মোস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি রিয়াদ মোহাম্মদ আরাফাত, কালারমারছড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এখলাছুর রহমান, ধলঘাটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সরওয়ার আলম শাহীন, হোয়ানক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল করিম মেম্বার, কুতুবজোম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ শফি মেম্বার, মাতারবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস্তেফাজুর রহমান, বড়মহেশখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছাবের হোসেন, শাপলাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন।

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত মাধ্যমে এই বর্ণিল সম্মেলন শুরু হয়। জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। সংসদ সংস্য মোঃ রশিদ বিএসহ মহেশখালীর প্রয়াত সকল বিএনপি নেতাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সম্মেলনে সমবেত হয় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। নেতাকর্মীদের পদভারে সম্মেলনস্থল কানায় কানায় ভরে উঠে। সম্মেলনকে ঘিরে ভেন্যুস্থল ও আশেপাশের এলাকা নানা ধরণের পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে যায়। এসব পোস্টার ও ব্যানাওে নানা শ্লোগান সম্বলিত শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও সালাহউদ্দীন আহমদের ছবি শোভা পায়।