এম আবু হেনা সাগর, ঈদগাঁও:

টিভির পর্দায় ক্রিকেট খেলা দেখে সদরের বৃহত্তর ঈদগাঁওর তরুণ ও যুব সমাজ ক্রিকেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিল। ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথমেই ক্রিকেটের চর্চা শুরু হয়। ১৯৯৭ সালে সর্বপ্রথম আনুষ্টানিক ক্রিকেটের যাত্রা হয় ঐতিহ্যবাহী এ খেলার মাঠ থেকে। ক্রিকেট পাগল ব্যাক্তি, ধারাভাষ্য কার সাকলাইন মোস্তাকসহ আরো কজনের নেতৃত্বে আয়োজন করে বিজয় দিবস ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট। পরবর্তীতে ঈদগাঁওর ক্রিকেটারেরা কক্সবাজার, চকরিয়া, রামুসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্রিকেট টুর্ণামেন্টে খেলতে যান। ক্রিকেট ভক্তদের জন্য মাঠ ব্যবহারের ক্ষেত্রে যাদের আন্তরিকতা ছিল, ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রয়াত প্রধান শিক্ষক সলিম উল্লাহ্, প্রয়াত গোপাল শর্মা, ক্রিড়াবিদ আব্দুল মজিদ খাঁনসহ আরও অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে অনুপ্রানিত করতেন। এছাড়াও এই ক্রিকেট যাত্রায় অনেক প্রতিভা সম্পন্ন ক্রিকেটার উঠে এসে ছিলেন। কিন্তু যথাযর্থ পরিচর্চার অভাবে বিভাগীয়, জাতীয় পর্যায়ে পৌছতে পারেনি। কালক্রমে অকালে ঝড়ে গেছে বহু মেধাবী ক্রিকেটার।

জেলার গর্ব মুমিনুল হক সৌরভ যিনি আজকে জাতীয় ক্রিকেটদলের হয়ে ক্রিকেট বিশ্বে আলোডন সৃষ্টি করে জেলার সম্মান বয়ে আনছে দিনের পর দিন। তিনিও ঈদগাঁওর সে ঐতিহ্য বাহী মাঠে খেলেছিলেন। বিশাল এলাকায় বহু প্রতিভাবান ক্রিকেটার থাকা সত্তেও বিভাগীয় কিংবা জাতীয় পর্যায়ে ঈদগাঁওর ক্রিকেটার দের খেলার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। এমনকি মাঠের প্রতিভা মাঠেই শেষ। বহুবছর পার করলো ঈদগাঁওর ক্রিকেট। অনায়াসে বিলুপ্তির পথে এই ক্রিকেট। তবে বৃহত্তর ঈদগাঁওর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কিশোর-যুবরা ফসলী জমিতে ছোট ছোট ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট আয়োজন করে পূর্বের ঐতিহ্যকে কোন মতেই ধারণ করে থাকে প্রতিবছর। একসময়ে ঈদগাঁও এলাকার মেধাবী ক্রিকেটারেরা রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে নিজেদেরকে ক্রিকেট থেকে আড়াল করে রেখেছে। তেমনিভাবে ফুটবল খেলোয়াড়দের একই অবস্থা। এককালের পুরনো খেলোয়াড়গন এখন নানা কারনে ক্রীড়াঙ্গন থেকে পিছিয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন বা স্কুল ভিত্তিক ফুুটবল টূূূূর্নামেন্টে কিছু কিছু প্রতিভাবান ক্ষুদে খেলোয়াড় উঠে আসলেও তাদের সঠিক ভাবে গাইড বা পরিচর্চা করার মত কেউ এগিয়ে আসছেনা। এক কথায় অভিভাবক শুন্যতায় ভোগছেন ঈদগাঁওর ক্রীড়াজগৎ। ফুুটবলে প্রতিভা থাকলেও প্যাকটিসের পুরোপুরি সুবিধা পাচ্ছেনা তারা। যার কারনে ঐসব উঠে আসা তরুন প্রজন্মের ফুটবলারেরা মাঠে আসার সাহস হারিয়ে ফেলছে। সেটি ধরে রাখার মত যেন কেউ নেই। পূর্বে বৃহত্তর ঈদগাঁওতে নামকরা কৃতি ফুটবলারও ছিল। কিন্তু নানা কারনে খেলার মাঠ থেকে তারা অনায়াসে হারিয়ে গেছে। যে কারনে মাঠের প্রতিভা মাঠেই রয়ে যাচ্ছে।

ক্রীড়াব্যাক্তিত্ব সাকলাইন মোস্তাক জানান,অবহেলিত ঈদগাঁওর ক্রিকেটের দূরাবস্থার জন্য অভিভাবক শূন্যতা,পৃষ্টপোষকের অভাব, ছোট বড়দের সম্ময়হীনতা,সিনিয়র ক্রিকেটারদের আন্ত: কেন্দ্রিক মনোভাবের কারণে ক্রিকেটের বেহাল দশা বললেই চলে। বলতে গেলে ঐতিহ্যবাহী ঈদগাঁও মাঠের ক্রিকেট গায়েব! ক্রিকেটের দীর্ঘ বছর পর্যালোচনায় বিপন্ন ক্রিকেট। বর্তমান এই তরুণ সমাজ ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি বিপন্ন হয়ে হরেক রকমের কাজে কর্মে জড়িয়ে পড়ছে।

সাবেক জাতীয় ফুটবলার ইসলামপুরের সন্তান ছৈয়দ করিম এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বর্তমান সময়ে খেলাধুলার ছেয়ে ইন্টার নেট মুখীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তরুন প্রজন্মরা। ক্রীড়াঙ্গন থেকে হারিয়ে ফেলছে মনমানসিকতা। ক্রীড়া জগতে অনেকেই তাদের উজ্জল ভবিষ্যৎ দেখছেননা। আবার যারা গ্রামীন জনপদে মাঠে ঘাটে খেলে উঠে আসছে, তারাও সঠিক গাইড লাইন বা তাদের দেখভালের জন্য দক্ষ অভিভাবক না থাকায় মাঠে আসার সাহস হারিয়ে ফেলছে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে অভিভাবক শুন্যতায় মুল কারন।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সদস্য ইসলামাবাদের সন্তান মিজানুর রহমান কক্সবাজার প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, বর্তমানে এলাকার যুব সমাজ ফেইসবুকে আসত্ত হয়ে পড়েছে। দক্ষ পৃষ্ট পোষকতার অভাবে মাঠমুখী হচ্ছেনা গ্রামগন্জের ছেলেরা। আবার বৃহত্তর ঈদগাঁওতে একটি মাত্র খেলার মাঠ রয়েছে। সেটিও সংস্কার থেকে পিছপা। ক্রীড়াকে ধরে রাখার মত যোগ্য অভিভাবক না থাকার দরুন মাঠ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে খেলোয়াড়েরা। তাদের প্রতিভা যেন মাঠে থেকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লীগ ( বিপিএল)এর খেলোয়াড় ঈদগড়ের কৃতি সন্তান দিদার জানিয়েছেন,গ্রামগজ্ঞ থেকে ফুটবলের মাঠ গড়ানো তার সুযোগ হয়নি। তার খেলা দেখে কক্সবাজার ষ্টেডি য়ামে ক্রীড়া ব্যাক্তিত্ব এক বড়ভাই তাকে সাহস ও পথ দেখিয়েছেন। তিনি বর্তমানে কক্সবাজার পেরিয়ে চট্রগ্রাম ও ঢাকার মাঠে ফুটবলে মাতিয়ে তুলছেন বলেও জানান।

সাবেক ঈদগাঁওর ক্রিকেটার রাজিবুল হক চৌধুরী রিকো, মামুন সিরাজুল মজিদ ও জিকু দাশ সুব্রতের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।