হাছিব হোছাইন :

আগামী ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফলে সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।

জেলা ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পদক পদে এক ডজন ছাত্র নেতা আলোচনায় আছেন। কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে তারা এখন অনেকটা দ্বিধা-বিভক্ত। অনেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং অনেকে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর আশীর্বাদপুষ্ট বা আনুকূল্য লাভের জন্য ব্যস্ত । তবে বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রয়াত কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের ও আইনজীবী বারের সভাপতির পুত্র শাখাওয়াত হোছাইন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন রাজনৈতিক অনুসারী বলে জানা যায়।

স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং দলের আর্দশকে ধারণ করে এমন ত্যাগী নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হোক। যাতে তারা কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগকে একটি মডেল ইউনিট হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। তবে কোনো অছাত্র, বিবাহিত, মাদক ব্যবসায়ী, মাদকাসক্ত, মামলার আসামি, চাঁদাবাজ ও দখলবাজসহ নানা অপরাধে জড়িতরা যেন কমিটির নেতৃত্বে না আসতে পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।প্রসঙ্গত , কক্সবাজার জেলার বর্তমান কমিটির কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা,কক্সবাজার সুগন্ধা পয়েন্টে দোকান দখলের অভিযোগ এবং বিবাহিত হওয়ার পরেও তারা নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পদক হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত আছেন বলে তৃনমূল ছাত্রলীগের অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে ক্লিন ইমেজের হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে এগিয়ে থাকা শাখাওয়াত হোছাইন তৃনমূল ছাত্রলীগকে আরো গতিশীল এবং সম্মেলেনমূখী করার জন্য গত ৪ই সেপ্টেম্বর রামু চকরিয়া সহ কয়েকটি ইউনিয়নের ছাত্রলীগ কর্মী প্রবীণদের সাথে মত বিনিময় এবং কক্সবাজার-রামু সদর-০৩ আসনের এমপি জনাব সাইমুম সরোয়ার কমল এবং চকরিয়া-পেকুয়া-০১ আসনের এমপি জনাব জাফরে আলমের সাথে দেখা করেন।

মুঠোফোনে শাখাওয়াত হোছাইনের সাথে এই ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান,

দক্ষিন এশিয়ার সর্ব বৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেতৃত্বের প্রতিযোগীতা নিয়েই নেতৃত্ব তৈরী করে এবং সম্মেলন হচ্ছে নেতৃত্ব তৈরীর একটি প্রস্তুতি ।সেই সম্মেলন আয়োজন করা হউক ,যে সম্মেলন হয় তৃনমুল ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়ে ; তাদের মাঝে সম্মেলনের আমেজ তৈরী করে দেওয়া আমার একটি নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং সেই নৈতিক দায়িত্ব থেকেই তাদের কাছে এই আমেজ পৌছানোর চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পদকের উপর সম্মেলনের দায়িত্ব অর্পিত আছে । আমরা আশা করব তারা যথাযথ ব্যবস্থার দ্বারা সম্মেলন সম্পন্ন করবে এবং যদি সম্মেলন আয়োজন করতে ব্যর্থ হয় তবে সেটি অবশ্যই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নির্বাহী সংসদের মাননীয় সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদক বিবেচনা করে একটি সিদ্ধান্ত জানাবে , আমরা আসলে সব কিছুর মূলে কেন্দ্রেয়ী নির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।”

বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রবীণ আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে শাখাওয়াত হোছাইন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে সিদ্ধান্তে আসতে না পারায় কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। তবে পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি ইশতিয়াক আহমেদ জয়কে সভাপতি এবং ইমরুল রাশেদকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ইমরুল রাশেদ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। পরে মোর্শেদ হোসেন তানিমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি গঠনতন্ত্র মোতাবেক বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ নিয়ে পরবর্তীতে তৎকালীন সময়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বর্তমান জেলা কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিলের ঘোষণা দিলেও উদ্ভুদ রোহিঙ্গা সংকট এবং জাতীয় নির্বাচনের কারণে সম্ভব হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় সংসদ বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানের জন্য ৬০ কার্যদিবস নির্ধারণ করে দিয়ে গত ৯ মে নির্দেশনা দিয়েছিল।

কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যতিব্যস্ততায় এ সময়ের মধ্যেও জেলা কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিল আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে এ নিয়ে গত ৩০ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক সভায় আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বর্তমান জেলা কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানের জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় ও সাধারন সম্পাদক মোরশেদ হোসাইন তানিম জানান,

‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির জাতীয় জীবনে একটি কালজয়ী ইতিহাস। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার ছাত্রলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল উপহার দিতে সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’