জিকির উল্লাহ জিকু :
সব ঠিকঠাক থাকলে ৭ সেপ্টেম্বরের মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এই সম্মেলনের মাধ্যমে সৃষ্ঠ নেতৃত্বও ভবিষ্যত নিয়ে নেতা-কর্মীদের আশংকা হরর মুভির ‘তুম্বার’এর মতনই আরাধনায় লিপ্ত হবে ওই কমিটি। যা সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর। সম্মেলন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা মুলত সেদিন সেখানে হস্তর চরিত্র প্রতিষ্ঠা হবে। তাই মহেশখালীতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপ্রিয়তা থাকা বিএনপি নামক এই দলটির মহেশখালী বিএনপিতে সুনির্দ্দিষ্ট কারণে তৃণমূল বিএনপিতে এই সম্মেলন ঘিরে তৈরি হয়েছে (বাদ পড়ার) ভয়-ভীতি, হতাশা ও আতংকের পরিবেশে।এই সম্মেলনকে ঘিরে তৃণমুল নেতাকর্মী এবং এমনকি শীর্ষ পর্যায়ের অনেকই দিনাতিপাত করছে ‘হরর’ মধ্য দিয়ে। জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন মন্তব্য করে উপরোক্ত কথাগুলো দৈনিক বাঁকখালীকে বলেন। তিনি আরো বলেন, শুরু থেকেই বর্তমান আহবায়কের স্বেচ্ছাচারিতা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাদ, এককভাবে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত এবং বর্তমানের সময়-সুযোগের সদ্ব্যবহার করে পারিবারিক বলয় সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত চেম্বারের পাশে বর্তমান আহবায়কের নেতৃত্বে সম্মেলন মানেই একটি তুম্বার মুভির চিত্রনাট্য চিত্রায়ন।

অন্যদিকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির মতে, রাজনীতির মাঠে সমালোচনা থাকবে যেহেতু প্রতিপক্ষ আছে। অভিযোগ খন্ডন করে বলেন, আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের সম্মেলন হবে দুর্দিনে বিএনপির কান্ডারী তৈরির সফল মিলনমালা। যে সম্মেলনের জন্য হাজার হাজার নেতা-কর্মী মুখিয়ে আছেন উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে।শহীদ জিয়ার আদের্শ দীক্ষিত ত্যাগী ও প্রকৃত বিএনপি কর্মীদের নিয়ে এই সম্মেলনের মাধ্যমেই সৃষ্টি করা হবে পুরো মহেশখালী উপজেলায় একটি বিএনপি পরিবার।

যেখানে প্রত্যেক কাউন্সিলর তাঁর নিজস্ব মতামত ও অভিমত স্বাধীনভাবে ব্যক্ত করতে পারবেন আগামী নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য। যার দরূন প্রতি ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটির সকল সদস্যকেও কাউন্সিলর হিসেবে ডেলিগেট করা হয়েছে। অতীতের সব অভিযোগ দূর করে সুদূর প্রসারী এই সম্মেলনের মাধ্যমে মহেশখালী বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে দীর্ঘ দিনের সুদৃঢ় নেতৃত্ব খুঁজে পাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারী এড.নুরুল আলম ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিকের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে একই বিবৃতিতে আবু বক্কর ছিদ্দিককে আহবায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট মহেশখালী উপজেলা কমিটি ঘোষণা করে কক্সবাজার জেলা বিএনপি। ওই আহবায়ক কমিটিতে এডভোকেট সালামত উল্লাহ রানা ও এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, অপর দুইজন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল শাখার সাবেক জিএস, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদলের সহ সম্পাদক ফরিদ মিয়া আরমান এবং শাপলাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমিনুল হক চৌধুরী। সভাপতি থেকে বাদ পড়া এড.আলম জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ পান। তখন থেকেই তাঁদের উভয়ে মাঝে দূরত্ব বাড়তে। এড. আলম কয়েকদিন আগে ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে পুলিশের একটি কৌতুকের কথোপকথনের উদারহণ দিয়ে বলেন, “এদিক হানি ওই দিক হায় স্যার এখন আমি কোনাই যাই” (নোয়াখালির ভাষায়) লেখাটি বেশ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এবং ঈদুল আযহার পরে হোয়ানকের সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহের চৌধুরীর বাসায় সাবেক এমপি আলমগীর ফরিদ সহ এক দাওয়াতে একসাথে দেখা গেলে অনেক নেতা-কর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। এটিকে আলমগীর ফরিদ পন্থি লোকেরা বিএনপির মিলন মেলা বলে প্রচার করে অপর দিকে এড. আলম পন্থী লোকের মতে এটি শুধুমাত্র সামাজিক অনুষ্ঠান। এতসবের দীর্ঘদিন আগে তাঁহারা দুইজনই সাবেক প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ পন্থী হিসেবে মহেশখালী উপজেলায় শক্ত ভূমিকা রাখেন। এখনো পর্যন্ত জানাযায়নি এই মনোকষ্টের কারণ কী ? উপজেলা বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকরই সাথে কথা হলে অভিযোগে জানান, বর্তমান আহবায়ক দলকে স্বেচ্ছাচারীভাবে পরিচালনা, এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন, শুধুমাত্র যুগ্ম আহবায়ক আমিনুল ইসলামের মতামত বাদে অন্য তিন জনকে কোন গুরুত্ব দেন না। উদাহরণ তুলে বলেন, প্রত্যেক ইউনিয়ন কমিটি করার সময় শুধুমাত্র বর্তমান আহবায়ক নিজেকে প্রাধান্য দিয়ে কমিটি করেছে। যার ফলে ইউনিয়নে মেধাবী ও জনপ্রিয় নেতা সৃষ্টি হয়নি। এমন অবস্থায় উক্ত সম্মেলনে নেতৃত্ব সৃষ্টি মহেশখালী বিএনপির জন্য সফলতা আনবেনা।

অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় আহবায়ক আবুবক্কর ছিদ্দিকের সাথে। তিনি বলেন, “বিএনপি একটি দল, এককভাবে পরিচালনার সুযোগ নেই, আমি চর্চাও করিনা। আমাকে দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ব্যক্তি ইমেজে সাধারণ জনগন নির্বাচিত করেছেন। বিএনপির এই দুর্দিনে কেউ দায়িত্ব নিতে চায়না। তবুও আমি বিএনপি ভালবাসি তাই ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছি। আমার প্রতিপক্ষরা আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সমালোচনা ছড়ায়। আমি সকল সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত দলের সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে নিতে সবসময় চেষ্টা করি। কেউ যদি না আসে আমার কী করার আছে? এটা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দল, বেগম খালেদা জিয়ার দল এবং কক্সবাজারে দলের বিষয়ে সালাহ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্ব মেনে চললে মহেশখালী বিএনপির দরজা সবার জন্য খোলা। অন্য পথে বন্ধ। তাই সবার অংশ গ্রহণে একটি সফল সম্মেলন উপহার দিতে তৃণমূলের সকলের অংশগ্রহণের জন্য ইউনিয়ন কমিটির সকলকে কাউন্সিলর হিসেবে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। যাতে নেতৃত্ব বেঁচে নিতে পারে। আমাকে যদি একশ এক নম্বর সদস্য রাখলেও আমি খুশি। আমি নেতা নয় কর্মী হিসেবে নিজেকে ধন্য মনে করি।” শেষে সম্মেলন সফল করতে সকল বিএনপি পরিবারের সদস্যরে প্রতি সহযোগিতাও কামনা করেন আহবায়ক আবু বক্কর।

মাতারবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আরিফুল কাদের তাঁর প্রতিক্রিয়া আসন্ন সম্মেলন ওকাউন্সিল বিষয়ে বলেন, এখনো পর্যন্ত মাতারবাড়ির নেতা-কর্মীরা সম্মেলন সফল করতে উৎসব মুখর, আনন্দচিত্তে রয়েছে। সম্মেলন হবে সম্মেলনের মত গঠনতন্ত্র মোতাবেক। কালারমারছড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রবীন বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা শুনা যাচ্ছে। তবুও একজন প্রবীণ বিএনপি হিসেবে মহেশখালীতে বিতর্কমুক্ত পরিচ্ছন্ন গতিশীল নেতৃত্ব আশা সম্মেলনের সফলতা কামনা করেন।কুতুবজোম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ শফি মেম্বার বলেন, সম্মেলনের পরিবেশ থাকলে তিনি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হবেন। তাঁর মতে তৃণমুলের নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচিত হলে সাধারণ নেতা-কর্মীরা মূল্যায়িত হবে। দল চাঙ্গা হবে এবং সুদৃঢ় নেতৃত্ব উঠে আসবে তাই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণমূলক সম্মেলন ও কাউন্সিল তিনি আশা করেন।

তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হলে বেশীর ভাগই নেতৃত্ব বর্তমান আহবায়কের কিছু সাংগঠনিক আচরণের প্রতি সন্তুষ্ট নয়। তারপরও বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবাতায় সময়ের প্রতিকূল পরিবেশের কারণে বিকল্পও ভাবতে পাচ্ছেনা। অন্যদিকে এই প্রতিকূল পরিবেশে পারিবারিক রাজনীতির সুবিধা তাকে বিতর্কমুক্তও রাখতে পারছেনা। তারপরও ৭ সেপ্টেম্বর সিকদার পাড়া প্রাইমারী মাঠে মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে তৃণমূলের অভিমত বিতর্কমুক্ত কর্মীবান্ধব নেতৃত।যেই কমিটি ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে সবাইকে নিয়ে একটি বিএনপি পরিবার গড়ে তুলবে।