মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেছেন-গত ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা শরনার্থী সমাবেশে যারা বা প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের বিষয়ে বহুমুখী তদন্ত চলছে। তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদরেকে অবিলম্বে কঠোর আইনের আওতায় আনা হবে। রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপ করে কাউকে পার পেতে দেয়া হবেনা। বুধবার ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনকালে সেখানে রোহিঙ্গা শরনার্থী সমন্বয় অফিসে অনির্ধারিত এক সভায় বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান একথা বলেন। তিনি বলেন-রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ক্যাম্পের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং তাদের ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলো অচিরেই বাস্তবায়ন করা হবে। এনআইডি কার্ড ব্যতীত রোহিঙ্গা শরনার্থীরা কিভাবে সীম পেলো, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ক্যাম্প থেকে অবাধে যাওয়া আসা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। কোনভাবেই স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে রোহিঙ্গাদের মিশতে নাপারে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনজিও এবং আইএনজিও গুলোর কার্যক্রম আগের মতো আর লাগামহীনভাবে চলতে দেয়া হবেনা। তাদের কার্যক্রমকেও একটা বিধিবদ্ধ নিয়ম শৃখলার মধ্যে নিয়ে আসা হবে। যে সব এনজিও অথবা আইএনজিও বিরুদ্ধে প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতার অভিযোগ উঠেছে, তা পূঙ্খানুপুঙ্খরূপে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোন এনজিও বা আইএনজিও পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষভাবে প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদেরকে প্রত্যাহার করে কঠোর আইনের পরিধির মধ্যে নিয়ে আসা হবে। কোন এনজিও বা আইএনজিও সরকারের সাথে করা শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের কোন ছাড় দেয়া হবেনা। তাদের কোন উস্কানিমূলক বক্তব্য ও রাষ্ট্রের স্বার্থ বিরোধী কাজ সহ্য করা হবেনা। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় অধিকতর নিরাপত্তার জন্য আরো পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। রোহিঙ্গা শরনার্থীরা কিভাবে নগদ টাকা পাচ্ছে, কিভাবে স্থানীয় হাঠ বাজরে আসছে, তারও খোঁজ খবর নেয়া হবে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় রোহিঙ্গা শরনার্থী নিয়ে সম্প্রতিক সংঘটিত বিভিন্ন নেতিবাচক কার্যকলাপ নিয়ে রোহিঙ্গা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশসান, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থার প্রদত্ত সুপারিশ ও প্রস্তাব গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা করা হয় বলে উখিয়ার ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরী সিবিএন-কে জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা শরনার্থীর বিষয়ে সার্বিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত এ সভায় স্থানীয় জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, রোহিঙ্গা শরনার্থীরা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া, রোহিঙ্গা শরনার্থীরা বিভিন্ন অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়া ইত্যাদি আলোচনায় উঠে আসে। সভায় অন্যান্যের মধ্যে পুলিশের চট্টগ্রাম রেন্ঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, উখিয়ার ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরী, উখিয়ার ওসি আবুল মনসুর বক্তৃতা করেন। সভায় ৩২ টি রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের ইনচার্জবৃন্দ, বিজিবি প্রতিনিধি সহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জেলা প্রধান ও প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরী সিবিএন-কে জানান, বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান পরে উখিয়া উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আরেকটি সভায় উল্লেখিত বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে শিঘ্রী অবহিত করা হবে বলে জানান। বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান আরো বলেন, গত ২৫ আগস্টের রোহিঙ্গা শরনার্থী সমাবেশের বিষয়ে দায়িত্বশীল কারো গাফিলতি ও অবহেলা আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনুরূপ ভাবে প্রত্যাবাসনে স্থানীয়ভাবে কোন কৃত্রিম সমস্যা সৃষ্টি করা হচ্ছে কিনা তাও তদন্ত করা হচ্ছে। সব বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নে আশু পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে বলে বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান সভায় জানান। এর আগে বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান ও পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছালে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, ভারপ্রাপ্ত এসপি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, এডিসি (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার (উপসচিব), এডিএম ও এডিসি (সাধারণ) মোহাঃ শাজাহান আলি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আদিবুল ইসলাম, রোহিঙ্গা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকতারা তাঁদেরকে স্বাগত জানান।