শাহিদ মোস্তফা শাহিদঃ

কক্সবাজার সদরের ৬নং চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “পশ্চিম চৌফলদন্ডী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে”র প্রধান শিক্ষক হামিদুর রহৃানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ অভিযোগ দায়ের করেছে অভিভাবকরা।১ সেপ্টেম্বর অভিযোগটি ডাক বিভাগের মাধ্যমে উপ-পরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম -০২ প্রেরণ করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক হামিদুর রহমান ২০১৩ সালে বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি,স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছে। তাছাড়া সরকারী নিয়মনীতি অমান্য করে নিজের ইচ্ছে মত বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছে। বিদ্যালয়ের কর্মরত ৭ শিক্ষকের মধ্য ৪জন শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের শ্যালক,মামা শ্বশুর, মামী শ্বশুড়ী বলে সূত্রে জানা যায়।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক জানান,অপরাপর শিক্ষকরা এসবের প্রতিবাদ করলে তিরস্কার, শ্লীনতাহানীসহ মানসিক নির্যাতন করেন প্রধান শিক্ষক হামিদুর রহমান। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবস গুলো পালন করে না বিদ্যালয়ে।

এছাড়া অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী’কে এস,এম,সি কমিটিতে মাধ্যমিক শিক্ষক প্রতিনিধি, মামা শ্বশুরকে পুরুষ শিক্ষক প্রতিনিধি ও মামী শ্বশুড়ীকে মহিলা শিক্ষক প্রতিনিধি করেছেন স্বয়ং এই দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক নিজেই।বিদ্যালয়ে ভর্তি,বই বিতরণ, পিএসসি রেজিস্ট্রেশন ফি,উপবৃত্তির ছবি তোলা পিএসসি পাশকৃত শিক্ষার্থীদের সনদ বিতরণ, প্রবেশপত্র, ভুয়া সনদ ও প্রশংসা পত্র বিক্রি বাবদ নিজের ইচ্ছেমত অর্থ আদায় করে থাকেন। কোন গরীব শিক্ষার্থী উপরোক্ত ফি দিতে অপারগ হলে প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উক্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন অভিভাবকরা।নৈশ্যপ্রহরী নিয়োগে এক ব্যক্তি থেকে ৭০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহনও করেন বলে জানান স্থানীয় কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি ।

তাছাড়া বিদ্যালয়ের জন্য আসা সরকারী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা উন্নয়নে যথাযথ ব্যয় না করে আত্মসাৎ করেছে সে। উক্ত প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন ভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয়রা।

অভিযোগে আরো জানা যায়, শ্রেণী ভিত্তিক ভর্তি ফ্রি ও বই বিতরণে জনপ্রতি ১শ টাকা থেকে ৩ শ টাকা পর্যন্ত আদায়, পিএসসি রেজিস্ট্রেশনে জনপ্রতি ১৫০ টাকা,পিএসসির প্রবেশ পত্রে জনপ্রতি ২শ টাকা, সনদপত্রে জনপ্রতি ২শ টাকা, প্রশংসা পত্রে জনপ্রতি ২শ টাকা,উপ বৃত্তির ছবি তোলায় জনপ্রতি ৩০ টাকা ও ভুয়া সনদ এবং প্রশংসা পত্র বিক্রি করে ইচ্ছামত। সবমিলিয়ে বিগত ৬ বছরে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা দুর্নীতি করে আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ের রেজিস্টার, অবিভাবক, এমএসসি কমিটির সভাপতি -সদস্যবৃন্দ শিক্ষার্থী এবং অত্র বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষকদের কাছে এসব দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে সত্যতা মিলবে বলে অভিযোগ উল্লেখ করেন।

দুর্নীতিপরায়ন প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ৩নং ওয়ার্ডের সচেতন ৫ জন অভিভাবকের স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রটি দুদক কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। এসব অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হামিদুর রহমানের সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু গনমাধ্যমের সামনে না আসায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে পাওয়া গেলে গুরুত্ব সহকারে ছাঁপানো হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াজ করিম বাবুল জানান, ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক থেকে একাধিক মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদেরকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। এস,এম,সি কমিটির সভাপতি স্থানীয় ৩নং ওয়ার্ডে মেম্বার রাশেদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অভিভাবক মহলের পক্ষে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ দুদকে দায়ের করেছে বলে শুনেছি। অভিযোগ করে থাকলে সংশ্লিষ্টরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবে।