বার্তা পরিবেশক:

অবশেষে কক্সবাজারের মহেশখালীর আলোচিত-সমালোচিত প্রতারক ইয়াবা কারবারী ফরিদুল আহমদ প্রকাশ ফরিদুল আলম কারাগারে। ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার মহেশখালী দলিল জালিয়তির মামলায় আদালতে জামিন নিতে গেলে মহেশখালীর বিশেষ দায়িত্ব প্রাপ্ত সিনিয়র বিচারক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এখবর মুহুর্তের মধ্যে মহেশখালীতে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসে বিধায় অনেক ভুক্তভোগী মিষ্টি বিতরণ করে এবং আছরের নামাজের পরে বড় মহেশখালীতে বিভিন্ন মসজিদে মোনাজাতের মাধ্যমে দোয়া পূর্বক মহান আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করেন।
জানা গেছে-মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের ফকিরাঘোনা এলাকার আলী হোসেনের ছেলে প্রতারক ফরিদ আহাম্মদ প্রকাশ ফরিদুল আলমের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। বহু মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে প্রতারক ফরিদ সবসময় সাধারণ মানুষকে কোন না কোনভাবে জিম্মী করে হয়রানী করে টাকা আদায় করে আসছিল। তাকে মাঝে-মধ্যে সরকারি দলের নেতাদের নাম ব্যবহার করে নিজেকে জাহির করে হরেক ধান্দায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত।
মহেশখালীর অসংখ্য সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে বড় মহেশখালী ইউনিয়নের ফকিরাঘোনা এলাকার ফরিদুল আলমের বহু কু-কর্মের কথা।
অভিযোগে জানা গেছে-মহেশখালীর হেতালিয়া মৌজার ৯৩.৮০ একর জমির জাল পাট্টা সৃজন করে তা দখল করায় বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন ব্যুরো ঢাকার স্বারক নাম্বার-২৫৪-২০০১ কক্সবাজার ১২৬৩, তারিখ ০৯/০৭/২০০১ ইং। তৎকালীন দূর্নীতি দমন ব্যুরো কক্সবাজারের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন তৎকালীন জেলা দুর্নীতি দমন অফিসার রাম মোহন নাথ কে ২৫/০৭/২০০১ ইং তারিখ চিঠি দেন। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে ফকিরাঘোনা এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে মো: ফরিদ সহ অপর ২ জন মিলে প্রতারনার মাধ্যমে জাল পাট্টা সৃজন করে সরকারি সম্পদ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সরকারী ৯৩.৮০ একর জমির মূল্য ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং ১৯৭৮ সাল হতে উক্ত জমির সরকারী ইজারা মূল্য ৩৩ লাখ ৭৬ হাজার ৮০০ টাকাসহ মোট ১ কোটি ২৭ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা আত্মসাতের দায়ে দন্ড বিধি ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪০৬/১০৯ ধারা মতে মামলা রুজু করার মতামত দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিএসবি পরিদর্শক মো: ইকবাল হোসেন সুষ্ঠু তদন্তে উক্ত বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানা যাবে।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, প্রতারক ফরিদুল আলম যেকোন সাধারণ মানুষের জমি দখল, সামান্য কারনে সন্ত্রাসী বাহিনি দিয়ে হামলা করে টাকা আদায় সহ সব সময় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল। সে এবং তার বাহিনী চিংড়ী ঘের দখল করা, অন্যের জমি দখল করে বিচারের নামে টাকা আদায় থেকে শুরু করে নানা অপরাধে জড়িত এবং মরননেশা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। তার এক সহযোগি মৌলানা নুরুল হক ঢাকায় ইয়াবাসহ আটক হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। এ ঘটনায় প্রতারক ফরিদুল আলমকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ইয়াবা ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপক তথ্য বেরিয়ে আসবে।
প্রতারক ফরিদুল আলম সহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে যার মধ্যে মহেশখালী থানার জিআর মামলা নাং ১০/২০০১, ৩৪/২০০৪, ১২২/২০০৬,২৩০/২০১০,১৯/২০০৭, ২২৫/২০১১, ২১৬/২০০৬, ৭৯/২০১৩, ০২/২০১৮, এছাড়াও চলতি বছরে ফরিদ সহ তার বাহিনির বিরুদ্ধে জিআর ১৪২/১৯, জিআর ৭৭২/১৯ সিআর ২৯/১৯ এবং দলিল জালিয়তি প্রতারনা মামলা ০৩/২০১৯ বিচারাধীন ও তদন্তাধীন আছে।
প্রতারক ফরিদুল আলম বিভিন্ন মানুষ থেকে জমি বিক্রি করার জন্য বায়না করে টাকা নিয়ে আর রেজিস্ট্রি দেয়নি। পরে আবার সেই জমি অন্যকে রেজিস্ট্রি দিয়ে প্রতারণা করেন যার প্রমান ২২/১০/৭৫ সালের ৯৭৬৩ নং দলিলে মোট জমির পরিমান ছিল.৭৯ একর কিন্তু তদস্থলে ফরিদুল আলম জালিয়াতি করে সেই দলিলকে সম্পূর্নভাবে নতুন ভাবে জাল দলিল তৈরি করে সাব-রেজিষ্ট্রার সহ সকল সীল জাল করে ১.৭৯ শতক জমি দেখিয়ে আরো একটি দলিল সৃষ্টি করে। আবার সেই জাল দলিল দিয়ে ২৪/৪/২০১৩ সালে ৭ জনের কাছে জালিয়াতি করে ১.৬৯ শতক জমি ৯ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে অথচ উক্ত জমি ইতি পূর্বে তার বড় ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করে দেয়।
অভিযোগে আরো জানা গেছে-উক্ত ফরিদুল আলম ছোট মহেশখালী এলাকার হাজী ছৈয়দ কবিরের ছেলে প্রবাসী মাও: মোহাম্মদ ইউনুচের সাথে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর বিএস ২০৮, ২১৩ নং খতিয়ানের বিএস দাগ ১৪৩১, ১৪৩০, ১৪৩৪, ১৪৩৩, ১৪২৯ দাগাদির ৩০ কড়া জমির বায়না করে সে অনুযায়ী স্বাক্ষী গনের স্বাক্ষাতে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা গ্রহন করে বাকী ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিলেই জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা। কিন্তু সেই জমি বারবার রেজিস্ট্রি দেওয়ার কথা বললেও ফরিদ কোন ভাবেই দখল ও দেয়নি রেজিস্ট্রিও দেয়নি। বরং রেজিস্ট্রি দিতে চুক্তির বাইরে টাকা দাবী করে। তার দাবীকৃত চুক্তির বাইরে টাকা দিলে সেটাও আত্বসাৎ করে জমি রেজিস্ট্রি দেয়নি। সে কারনে মাও: মোহাম্মদ ইউনুচের শশুর মৌ: জিয়াউল হক মহেশখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করে যার নাম্বার সিআর ২৬/১৯।
তিনি ৩/১৫১ সহ একাধিক মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানাপ্রাপ্ত আসামী হওয়া সত্বেও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে প্রকাশ্যে বীরদর্পে ঘুরাফেরা করেছিল। ইতিপূর্বে প্রতারক ফরিদের বিরোদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে মহেশখালীর আইন শৃংখলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন সময়ে অভিযানও চালায়। পরিশেষে আইন শৃংখলা বাহিনীর চাপের মুখে আদালতে আত্বসমর্পন করতে বাধ্য হয়। আদালত তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন। ন্যায় বিচারের স্বার্থে প্রতারক ফরিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন এলাকার শান্তি প্রিয় মানুষ।