সিবিএন ডেস্ক:
ঘূর্ণিঝড় ডোরিয়ান আঘাত হানতে যাচ্ছে—এই আশঙ্কায় গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাসহ দক্ষিণের একাধিক অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দারা ছিলেন আতঙ্কে। অথচ এমন দিনে তাঁদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিনা মজে ছিলেন গলফ খেলা নিয়ে।

ঘূর্ণিঝড়টি ইতিমধ্যে প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ বাহামায় আঘাত হেনেছে। এরপরই দানবীয় বেগে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের একাধিক অঙ্গরাজ্যের দিকে ধেয়ে যেতে থাকে।

গত শনিবারই অবকাশ কাটাতে ভার্জিনিয়ার ন্যাশনাল গলফ ক্লাবে চলে যান ট্রাম্প। সে খবর গোপন থাকেনি। অধিকাংশ টিভি চ্যানেল একদিকে ডোরিয়ানের খবর, অন্যদিকে ট্রাম্পের গলফ খেলার সচিত্র বিবরণ প্রচার করে।

আসন্ন দুর্যোগের মধ্যে ট্রাম্পের গলফ খেলা নিয়ে সমালোচনা করেছেন একাধিক ডেমোক্রেটিক নেতা। সিনেটর কমলা হ্যারিস বলেছেন, এ থেকে প্রমাণিত হয়, সাধারণ মানুষের প্রতি ট্রাম্পের কোনো সহানুভূতি নেই।

হোয়াইট হাউস থেকে অবশ্য জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধির ওপর নজর রাখছেন ট্রাম্প। ফ্লোরিডার গভর্নরের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি।

তবে গতকাল কেবল গলফ খেলা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন না ট্রাম্প; তিনি যথারীতি টুইটারেও সক্রিয় ছিলেন। কখনো টুইটে অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, কখনো কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের সাবেক প্রধান জেমস কোমির ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। আবার কখনো অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যানের বোধবুদ্ধি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এদিন টুইটারে সাংবাদিকদের প্রতি তাঁর বিষোদ্‌গারও থেমে থাকেনি। এমনকি আবহাওয়া দপ্তরের সঙ্গেও টুইটারে ঝগড়া বাধিয়ে বসেন তিনি।

গত রোববার থেকেই টুইট-ঝড় শুরু হয় ট্রাম্পের। প্রথমে এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ঘূর্ণিঝড় ডোরিয়ান ফ্লোরিডা ছাড়াও সাউথ ও নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও আলাবামায় আঘাত হানবে। ক্যাটাগরি ফাইভের এই ঘূর্ণিঝড় ভয়াবহ হতে পারে। তাই সবাইকে তিনি সাবধানে থাকতে পরামর্শ দেন।

ট্রাম্পের এই টুইট নিয়ে সমালোচনা, কারণ, আলাবামায় ডোরিয়ানের আঘাত হানার কোনো আশঙ্কা নেই।

ট্রাম্পের টুইটের পরপরই আবহাওয়া দপ্তর নিজেদের এক টুইটে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, আলাবামায় ডোরিয়ান আঘাত হানবে না।

টিভি ভাষ্যকারেরা এ নিয়ে ঠাট্টা করতে বিলম্ব করেননি। তাঁদের সে সমালোচনার পাল্টা জবাব দেন ট্রাম্প। আরেক টুইটে তিনি বলেন, ‘সব ফালতু আবহাওয়া প্রতিবেদন। আমি ঠিকই বলেছিলাম, আলাবামায় ডোরিয়ান আঘাত হানতে পারে। প্রথমে সে রকমই ভাবা হয়েছিল।’

ট্রাম্প ফের বলেন, কোনো ঘূর্ণিঝড় যে ক্যাটাগরি ফাইভ হতে পারে, এমন কথা তিনি কস্মিনকালেও শোনেননি।

অথচ গত এক বছরে পরপর দুটি হ্যারিকেন ছিল ক্যাটাগরি ফাইভের। পুয়ের্তো রিকোতে যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, সেটি ক্যাটাগরি ফোর হওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্প তাকে ক্যাটাগরি ফাইভ বলে টুইট করেছিলেন। ট্রাম্পের এই অজ্ঞতায় বিস্ময় প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট লেখে, ‘ব্যাপারটি ভয়ের। কারণ, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বপ্রস্তুতি ও পরবর্তী সময়ে উদ্ধারকাজে সব নির্দেশ তাঁর কাছ থেকেই আসে। তাঁর এই অজ্ঞতার ফলে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা ও উদ্ধারকাজে বড় ধরনের অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হতে পারে।’

ব্যস, এতেই ওয়াশিংটন পোস্টের ওপর রেগে যান ট্রাম্প। পত্রিকাটিকে একহাত নেন তিনি। পরে তিনি চলে যান অন্য প্রসঙ্গে। চারজন অশ্বেতকায় নারী কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণবাদী—সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্ট এমন একটি প্রতিবেদন ছেপেছিল। সে কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প টুইটে লেখেন, ‘মূলধারার এসব পত্রপত্রিকা একদম পাগল হয়ে গেছে। আমি নই, এই চারজন কংগ্রেস সদস্যই আমাদের দেশের ওপর বর্ণবাদী আঘাত হেনেছেন।’

এ ছাড়া গতকাল ট্রাম্পের টুইটার–ঝড়ের অন্য ‘টার্গেট’ ছিলেন নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান। ট্রাম্পের সমালোচক হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক টাইমসের নিয়মিত কলাম লেখক ক্রুগম্যান। প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার তীব্র সমালোচনা করে একাধিক টুইটও করেছিলেন তিনি। তাঁর উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘ক্রুগম্যান (অর্থনীতির) কিছুই বোঝেন না। অর্থনীতির ব্যাপারে আমার পরামর্শ না শুনে ক্রুগম্যানের কথা শুনলে এখন দেশের মানুষ তাদের হাত কামড়াত।’