সিবিএন ডেস্ক:
রোহিঙ্গা এক নারীর ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সুরক্ষিত সার্ভারে থাকার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। আরও ৪৬টি ভুয়া এনআইডির তথ্য ইসির সার্ভারে পেয়েছে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। নির্বাচন কার্যালয়ের নথিপত্রে এগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে কীভাবে এসব তথ্য সার্ভারে দেখা যাচ্ছে, কে বা কারা জড়িত, তা শনাক্ত করতে পারেনি চট্টগ্রাম পুলিশ কিংবা ইসি।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, ইসির প্রতিটি কম্পিউটারে আলাদা আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) নম্বর রয়েছে। নম্বর জানা না থাকলে ইসির সার্ভারে তথ্য আপলোড করা যাবে না। আর এই কাজ করে থাকেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নিজেদের লোক ছাড়া ভুয়া এনআইডির তথ্য সার্ভারে দেওয়া সম্ভব নয়।

রমজান বিবি নামের এক রোহিঙ্গা নারী ‘লাকী’ নাম দিয়ে স্মার্ট কার্ড উত্তোলনের জন্য তাঁর এনআইডি নিয়ে গত ১৮ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান। সার্ভারে খোঁজ করলে লাকীর যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত আছে বলে দেখা যায়। লাকীর কথাবার্তায় সন্দেহ হলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে জানানো হয়, ভোটার হিসেবে নিবন্ধন কিংবা লাকীর নামে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয়নি। কাগজপত্রে কোথাও কিছু নেই। এ ঘটনায় হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।

ঘটনার পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন কার্যালয় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পাশাপাশি কোতোয়ালি থানা-পুলিশও তদন্ত শুরু করে।

সার্ভার জালিয়াত চক্রটিকে শনাক্তের জন্য কাজ চলছে বলে জানান নগরের কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার রোহিঙ্গা নারীর স্বামী নজির আহমেদকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল থানায় আনা হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল আলমকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আরেক সদস্য হলেন পাহাড়তলী থানা নির্বাচন কর্মকর্তা এম কে আহমদ।

গতকাল দুপুরে তদন্ত কমিটির প্রধান কোতোয়ালি থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. কামরুল আলম তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সার্ভারে এনআইডিগুলোর তথ্য থাকলেও কাগজপত্রে কিছু নেই। এগুলোর সিরিয়ালও এলোমেলো। এনআইডি তৈরির সময় একই ক্রমের ফরম নির্দিষ্ট থানা কিংবা এলাকায় পাঠানো হয়েছিল। অর্থাৎ সব ভোটার একই এলাকার ক্রম অনুযায়ী হবে।

উদাহরণ দিয়ে কামরুল আলম বলেন, নতুন শনাক্ত হওয়া ভুয়া এনআইডির মধে৵ দেখা গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা এলাকার মো. শরীফ ৪১৮৬৩৫৭ নম্বর ক্রমে ভোটার হয়েছেন। তার পরের নম্বরটি ৪১৮৬৩৫৮ হওয়ার কথা। কিন্তু পরের নম্বরটি দেখা যাচ্ছে জেলার সাতকানিয়ার ছোট হাতিয়ার মো. আয়াজ। এর পরেরটি কক্সবাজার টেকনাফের সাবরাং এলাকার আজিম উল্লাহর।

সার্ভারে ভুয়া এনআইডি কীভাবে দেখা যাচ্ছে, তা শনাক্তের জন্য ঢাকা থেকে গঠিত দুই সদসে৵র তদন্ত কমিটি আগামী বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে আসতে পারেন। এমন তথ্য জানালেন চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান। গতকাল তাঁর কার্যালয়ে তিনি বলেন, ৪৬টি ভুয়া এনআইডির বাইরে আরও থাকতে পারে। সংঘবদ্ধ একটি চক্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা এটি করতে পারে।