ফেসবুক কর্নার 
হুট করে একদিন দেখবেন ভয়ংকর এক দাঙ্গা লেগে গেছে রোহীঙ্গা আর স্থানীয়দের মাঝে। রক্তারক্তি কান্ড হয়ে লাশের পর লাশ পড়ে আছে পুরো উখিয়া-টেকনাফ জুড়ে। শেষান্তে কারফিউ জারি করে সেনারা যখন দাঙ্গা থামাবে, ততক্ষণে বিশ্বমিডিয়া জুড়ে তোলপাড়। আর রোহীঙ্গা বিদ্বেষী আমার ভাইদের জ্বালাময়ী স্টাটস- “শেষ পর্যন্ত আমাদের আশংকাই সঠিক হলো, এই রোহীঙ্গা মানুষ না, এরা পশু। এদের নির্বিচারে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা সময়ের দাবি!”

হ্যাঁ ঠিক এরকম শত শত স্টাটাসে ভরে যাবে কোটি কোটি বেকার মস্তিস্কের টাইমলাইন। খোদা না করুক, বিশ্বমোড়ল’রা সেই সুযোগে বাংলাদেশের না হোক, এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণও নিতে দ্বিধা করবেনা হয়তো!

সেই চিন্তা কল্পনাপ্রসূত। আমি ভাবছি দেশী দ্বিচারী ভাইদের তুঁখোড় বুদ্ধি নিয়ে। তারা সিরিয়ার মুসলিমের জন্যে কাঁদে, বিশ্বজুড়ে শরণার্থী হচ্ছে বলে। তারা কাস্মিরের মুসলিমের জন্যে কাঁদে, ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপে অবরুদ্ধ বলে। তারা পারলে ফিলিস্তিনে গিয়ে যুদ্ধ করে দেশোদ্ধার করে মুক্ত করতে চাই, মুসলমান জাতী নিপিড়িত বলে। আবার সেই তারাই নিজ দেশে আশ্রিত ঘরহারা, স্বজনহারা, দেশহারা রোহীঙ্গাদের প্রচন্ড ঘৃণা করে। পারলে মৃত্যুদণ্ড জারি করে প্রতিমুহুর্তে! Ridiculous. unbelievable Ridiculous. রোহীঙ্গারা কী তবে অমুসলমান? নাকী এখানে ধর্মের কল আর বাতাসে নড়েনা?

মুহিবুল্লাহ নামটি শুনেছেন নিশ্চয়? রোহীঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ? এত বড় অপরাধী আর আছে পৃথিবীতে? নেই নেই। অন্তত আমার ভাইদের জ্বালাময়ী স্টাটাস দেখলে তাই-ই মনে হবে সকলের। কিন্তু সেদিনের সেই সমাবেশে মুহিবুল্লার বক্তব্য শুনেছেন কেউ? কেউ কেউ “হ্যাঁ” বাদবাকী সকলেই “না” এই তো?

“বাংলাদেশকে ধন্যবাদ, তারা আমাদের বিপদের দিনে রক্ষা করেছে। আশ্রয় দিয়েছে। তারা স্থান না দিলে আমরা কোথায় গিয়ে ঠাই নিতাম? আমাদের ঘর নেই, দেশ নেই, আমাদের কোন শিক্ষার ব্যবস্থা নেই, আমরা লাথি খাওয়া জাতি, আমাদের জন্য মানবতা নেই। আমরা ৭৮সালেও শরণার্থী হয়েছি, ৯০/৯২-এ শরণার্থী হয়েছি, ফিরে যেতে অনেক শর্ত দিয়েছি। কোন কাজ হয়নি। আমরা গত দুই বছরে অনেক ব্যানার ফেস্টুন করেছি, কোন লাভ হয়নি। এভাবে কিছুই হবেনা। কোন জাতী তাদের মর্যাদা/অধিকার এভাবে আদায় করেছে বলে পৃথিবীতে কোন নজীর নেই। অধিকার আদায় হয় অন্যভাবে। অন্য উপায়ে। আমাদের সেভাবে যেতে হবে। এ ছাড়া কোন উপায় নেই!” -মুহিবুল্লাহ

(বক্তব্যটি ভাষান্তর করা, কিছুটা এলোমেলো হতে পারে, তবে মূল কথা ইহাই)

হ্যাঁ, এটিই সেদিনের সমাবেশে দেওয়া মুহিবুল্লার বক্তব্য। একবার ভাবুন তো, সে কত বড় অপরাধী। এবার মনে মনে গান ধরুন, মুহিব ও মুহিবরে তুই অপরাধীরে, এমন কথা কেমন করে বলে গেলিরে। অদ্ভুত দ্বিচারিতা! অদ্ভুত প্রোপাগান্ডা! ঠিক যেনো- “কান নিয়েছে চিলে!”

শোষীত-নিপিড়িত বাঙ্গালীর পক্ষে কথা বলে শেখ মুজিবুর রহমান বিপ্লবী। মানবতার কথা বলে জাতোদ্ধারের জন্যে ফিদেল কাস্ত্রোও মহাবিপ্লবী। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন করে নেলসন ম্যান্ডেলাও বিপ্লবী। আরেক বিপ্লবী চে’গুয়েবারের ছবি তো আমরা টি-শার্টে এঁকে বুকে ঠাই দিই নিত্যদিন! কিন্তু রোহীঙ্গার পক্ষে কথা বলা মুহিবুল্লাহ ওপারেও সন্ত্রাসী, এপারেও সন্ত্রাসী। আর আমি? আমি কেবলই হাসি! অনেকে আবার কার সাথে কার তুলনা বলে আমাকে নিয়ে হাসবে। তাদের জন্যেও আমার একচিলতে হাসি। একরাশ হাসি।

আমার ভাবতেই অবাক লাগে, এই রোহীঙ্গারা যখন কাটাতারের ওপারে নির্মমভাবে খুন হচ্ছিলো, পুড়ছিলো, ধর্ষিত হচ্ছিলো, তখন তাদের জন্যে ঠিকই আমাদের মায়া উতলে ওঠছিলো। বাংলাদেশ সরকারের নতজানু সিদ্ধান্তে যখন কোন সুরাহা আসছেনা, তখন আমরা আবার রোহীঙ্গা রোগে মরছি। যার পরতে পরতে কেবলই পরশ্রীকাতরতা, গড্ডলিকা প্রবাহ, চাকরি না পাওয়ার ক্ষোভ, আর দাঙ্গা লাগানোর সুগভীর ষড়যন্ত্র লুকোনো।

যারা এই প্রোপাগান্ডায় জড়িত, তাদের আমি আমন্ত্রণ জানালাম, একবার চলুন কুড়েঘরের সেই রাজপ্রাসাদে। তারা নিজেদের দেশ, গ্রাম, ঘর ছেড়ে এই পাহাড়ি উপত্যকায়, ত্রিফলের রাজপ্রসাদের একেকরুমে চার থেকে দশজন পর্যন্ত মানুষ কত আয়াশি করছে তা দেখতে। আপনি আদতেই তখন তাদের দেখে মন থেকে ঘৃণা করতে পারবেন বোধয়। যারা শত শত বছর ধরে ভয়ংকর নাকবোচা বার্মিজ বুড্ডিস্টদের রোষানলে পড়ে শিক্ষা, চিকিৎসা, বিচার সবকিছু থেকে বঞ্চিত। সেখানে গিয়ে তাদের না-হয় কনসেন্ট শেখাবেন, শুদ্ধবাংলায় কথা বলা শেখাবেন। অথবা চরম আতংক জড়ানো তাদের অসহায় কৌতুহলী চোখের দিকে তাকিয়ে বলবেন- “তোদের সবাইকে গুলি করে মারা উচিৎ। বাঁচার কোন অধিকার তোদের নেই। আমাদের সৃষ্টি করেছে আল্লাহ/ঈশ্বর/ভগবান/বিধাতা, আর তোদের সৃষ্টি করেছে নিশ্চয় কোন মূর্খ স্রষ্টা।” বলতে পারবেননা?
এই যে দেশী-
লোকালয়ে লাগলে আগুন, দেবালয়ে তাপ কম লাগে, নাকি বেশী?

-আকতার নুরএর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া।