ইমাম খাইর, সিবিএনঃ

বিগত ৭ বছরে কক্সবাজারে কি কি উন্নয়ন হয়েছে? কত টাকার কাজ হয়েছে? তার হিসেব চেয়েছেন জয় বাংলা বাহিনী ৭১ এর সভাপতি, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে পাকিস্তানের দানব বাহিনী থেকে দেশকে স্বাধীন করেছি। যে পরিমাণ দুর্নীতি লুটপাট চলছে তার জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি।
তিনি বলেন, কয়েকজন মিলে দুর্নীতি করবে তা বরদাশত করা হবেনা। কিছু নেতা চোর ডাকাতদের উৎসাহিত করছে। নেতারা চুরি করবে, আর জানগণ বসে থাকবে তা হবেনা। চেয়ারগুলোতে যে পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে তা ক্ষমা করার মতো নয়।
রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদেন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী এসব কথা বলেন।
শহরের লালদীঘির পশ্চিম পাড়ের সড়কে আয়োজিত সমাবেশ প্রধান অতিথি বলেন, কক্সবাজারের বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। সময় মতো সব দুর্নীতিবাজের চেহারা উন্মোচিত হবে।
কক্সবাজার জেলাজুড়ে সড়কের বেহাল অবস্থা, কক্সবাজার পৌরসভার রাস্তাসমূহ সংস্কার, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ ও রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনের দাবীতে এই সমাবেশের ডাক দেন কক্সবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ।
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সৈকতের সম্পাদক মাহবুবর রহমান।
তিনি কক্সবাজারের বিরাজমান সমস্যাসমূহ অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করেন।
সমাবেশের সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমিন সিকদার বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা হচ্ছে। তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করুন। ৭২ ঘন্টার মধ্যে কক্সবাজারের প্রধান সড়ক সংস্কারের ঘোষণা চাই। সদর হাসপাতালের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
মঙ্গলপার্টির চেয়ারম্যান কবি জগদীশ বড়ুয়া পার্থের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেস অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক মুফিজুর রহমান বলেন, আমরা ভোট কিভাবে দিয়েছি? তা ভাবিনা। আমরা নিজের অধিকার ফিরে পেতে চাই। কক্সবাজারকে বাঁচাতে সংগ্রামে নেমেছি। কাউকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মাঠে আসিনি।
জাপা নেতা মুফিজ বলেন, শহরের সড়কগুলোতে হাঁটতে গেলে শরীরে ভাইব্রেশন তৈরী হয়। কোন উন্নয়ন নেই। প্রধান সড়কের করুণ দশা।
দৈনিক বাঁকখালী পত্রিকার সম্পাদক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চারিদিকে ‘খাইখাই’ অবস্থা। ডিসির ভবনেই দিনরাত দুর্নীতি। কমিশন ছাড়া ক্ষতিপূরণের টাকা কপালে জুটেনা।
কক্সবাজার কে চালায় প্রশ্ন করে সম্পাদক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের সেবার নাম দিয়ে ৭০% টাকা পকেটে ঢুকিয়ে ফেলছে। কোন মানবতা নয়, পকেটের ভাবনা নিয়ে কাজ করছে।
মান্ধাতার আমলের নেতৃত্ব পরিবর্তন করতে হবে বলে জানান সাইফুল ইসলাম চৌধুরী।
সমাজসেবক আলহাজ্ব ডাক্তার মোহাম্মদ আমিন বলেন, কক্সবাজারকে আমরা মহৎ শহর হিসেবে দেখতে চাই। সড়কে আবর্জনা দেখতে চাইনা। সবাইকে এক কাতারে এসে কক্সবাজারের পক্ষে কাজ করতে হবে। পৌরসভার নুরপাড়াসহ অনেক জায়গায় বৈদ্যুতিক খাম্বা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। তা সরিয়ে না নিলে ভবিষ্যতে বিপদাশঙ্কা রয়েছে।
সাবেক পৌর কমিশনার আবু জাফর সিদ্দিকী প্রশাসনের কর্তাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা কার দায়িত্ব পালনে চেয়ারে বসেছেন? জনগণের টায় সরকারের চাকুরি করেন। জনদুর্ভোগ নিয়ে চিন্তা করুন। রোড শো নয়, আমরা কাজ চাই। সবকিছুর আগে প্রধান সড়ক নিয়ে ভাবুন। কক্সবাজারের এক ইঞ্চি জায়গাও যেন আর দখল না হয়। এনজিওদের লাগাম টানতে হবে।
পৌরসভার সড়ক উপসড়ক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে মেয়রের প্রতি আহ্বান জানান আবু জাফর সিদ্দিকী।
কক্সবাজার শহর জাপার সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন বলেন, কক্সবাজার মহা সমস্যায় জর্জরিত। কক্সবাজারকে বাংলাদেশের পর্যটন নগরী বলা হলেও এটি ডাস্টবিনের শহরে পনিণত হয়েছে। চারিদিকে খানাখন্দে ভরে গেছে। কোন গর্ভবতী মহিলা সড়ক দিয়ে গেলে গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার অবস্থা। আমাদের নির্বিঘ্ন চলাচলের পথের নিশ্চয়তা চাই। সদর হাসপাতালে রোহিঙ্গারা যত্নের সাথে চিকিৎসাসেবা পেলেও স্থানীয়রা উপেক্ষিত। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজনে আলাদা হাসপাতাল করা হোক।
তিনি বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতকে সুন্দর করার পরিবর্তে নেতারা নিজেদের নামে ঝুপড়ি দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন। কক্সবাজারের প্রয়োজনে বিতর্কিত বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি ভেঙে দেয়া হোক।
প্রশাসনের কারণেই কক্সবাজারের অবস্থা করুণ মন্তব্য করে নাজিম উদ্দিন বলেন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নামে কক্সবাজারের জমিগুলো বরাদ্দ দিয়ে দিচ্ছে প্রশাসন। কিছু সু্িধাবাদি নেতার কারণে আমরা অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছি। সমাবেশে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন ও বিতর্কিত এনজিওগুলোকে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার দাবী জানান তিনি।
কক্সবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সদস্য জহিরুল আলম কাজল বলেন, কক্সবাজারের কোথায় কি উন্নয়ন হচ্ছে? তা আমরা চোখে দেখছিনা। শহরের প্রধান সড়কে ১০ ফুটও সমতল নেই। সব ভেঙে খানখান। মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা দেখারও যেন কেউ নাই। হাসপাতাল সড়কের করুন চিত্র। চারিদিকে ডাস্টবিনের দুর্গন্ধ। রোগিদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কের প্রায় সড়কে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে।
সড়কের উন্নয়ন না করে পুকুর উন্নয়ন করছে, এ কেমন উন্নয়ন? মানুষের কষ্ট বিবেচনা করুন। না হলে জনগণ মাঠে নামতে বাধ্য হবে।
সাংবাদিক এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন,৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলার পরও কেন মানুষকে রাজপথে নামতে হলো? যে উন্নয়ন হচ্ছে তা লুটপাটের, নেতাদের পকেটের উন্নয়ন। স্বাস্থ্য নগরী আবর্জনার নগরীতে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজার লুটপাটের নগরীতে রূপ নিয়েছে। সাগর পাড় দিনদিন দখল করে নিচ্ছে নেতারা।
নজরুল বলেন, সাগরপাড়ের সমস্ত অবৈধ স্থাপনা দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে। যেখানে যেন কোন প্রশাসনের স্থাপনা গড়ে না ওঠে।
এশিয়ান হাইওয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে লাভ নাই জানিয়ে তিনি বলেন, কক্সবাজারের কঠিন দশার জবাব একদিন নেতাদের দিতে হবে। কেউ পার পাবেনা। সাগর পাড়ে সার্কিট হাউজ করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে সেখানে প্রস্তাবিত শিশুপার্ক নির্মাণ করতে হবে।
সাংবাদিক আমিনুল হক বলেন,
আমরা একটি উন্নয়নের কক্সবাজার চাই। ভাঙাচোরা রাস্তা, নালা নর্দমা চাইনা। আমরা কক্সবাজারকে একটি মডেল এলাকা হিসেবে উপহার দিতে চাই। কক্সবাজারের উন্নয়নে যে যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হতে হবে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন -কক্সবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ইমাম খাইর, শ্রমিক নেতা এমএউ বাহাদুর, সাইমুন সংসদের সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আবছার সিকদার, মোঃ আমিন, সাংবাদিক মাহবুবুল আলম, আবদুশ শুক্কুর, সাংবাদিক হাজি ইলিয়াস, এইচএম আবু ছিদ্দিক, সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম, হাফেজ আহমদ জিসান, রিফাতুল ইসলাম, মোঃ আলমগীর, ডাঃ অাশীষ সিকদার, মোঃ সোলতান, সাব্বির আহমদ, জাহাঙ্গীর আলম, সাইফুল ইসলাম, হানিফ, রাজিব, মোঃ মুবিন উদ্দিন, হাফেজ জাকের হোসেন প্রমুখ।