মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

রোহিঙ্গা শরনার্থী আগমনের পর থেকে তাদের জন্য গত দু’বছরে বিভিন্ন খাতে এনজিও এবং আইএনজিও’র মাধ্যমে খরচ করা হয়েছে মোট ২৭৪৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। তারমধ্যে, রোহিঙ্গা শরনার্থীদের জন্য খাদ্য খাতে খরচ হয়েছে শুধুমাত্র ১৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিবছরে খাদ্য খাতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৮৯ কোটি টাকা করে। এই খাদ্য বছরে দু’দফে মোট ৮ লাখ ৬৭ হাজার ১৯ জন রেজিস্ট্রাড রোহিঙ্গা শরনার্থীকে সরবরাহ দেয়া হয়েছে। এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক এ.কে.এম আবদুস সালাম সিবিএন-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত বৃহস্পতিবার ২৯ আগস্ট কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সিএসপি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মাসিক এনজিও সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে নন ফুড আইটেম আর সরবরাহ দেয়া যাবেনা বলে এনজিও প্রতিনিধিদের জানিয়ে দেন। ফুড আইটেম ছাড়া অন্য কোন আইটেম বিশেষ করে নিড়ানি, দা, কুড়াল, কাঁচি, কুঠার, চুরি, হন্তী ইত্যাদি সরবরাহ দিলে তাদের কঠোর আইনের আওতায় আনা হবে বলে সতর্ক করে দেন। দু’বছরে খরচ হওয়া মোট ২৭৪৮ কোট ৯১ লাখ টাকার মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ ২৯৩ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। বস্ত্র খাতে ব্যয় হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। এছাড়া একই তহবিল দিয়ে ১৬ হাজার টয়লেট, ২২ হাজার টিউবওয়েল স্থাপন সহ সেনিটেশন উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। বাংলাদেশে সর্বমোট ২৬২৫ টি এনজিও এবং আইএনজিও রয়েছে। তারমধ্যে এনজিও হচ্ছে ২৩৬৬ টি এবং আইএনজিও হচ্ছে ২৫৯ টি। রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে কর্মরত ১৮৯ টি এনজিও এবং আইএনজিও’র মাধ্যমে উল্লেখিত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। তারমধ্যে, দেশীয় ১৩৪ টি এনজিও’র মাধ্যমে ১৩২৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং ৫৫ টি আইএনজিও’র মাধ্যমে ১৪৬৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ১০২১ টি প্রকল্পের অনুকূলে এসব অর্থ ব্যয় করা হয়। ১৮৯ টি এনজিও’র মধ্যে ৬ টি এনজিও’র ফান্ড ছাড় করা বন্ধ রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো-মুসলিম এইড ইউকে, ইসলামিক রিলিফ, ইসলামিক এইড, নমিজন আফতাবী ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ চাষি কল্যাণ সমিতি। এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক এ.কে.এম আবদুস সালাম সিবিএন-কে জানান-রোহিঙ্গা শরনার্থীদের জন্য প্রাপ্ত এসব অর্থের বেশীরভাগই জাতিসংঘ, ইউএসএ, ইউরোপীয়ান দেশ, মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামি দেশ গুলো দিয়ে থাকে। এসব অর্থকে ‘এফডি’ অর্থাৎ ফরেন ডোনেশন বলা হয়। তিনি আরো জানান-বিদেশী এসব সহায়তার বেশীরভাগই সরকারিভাবে এসে থাকে। আর ফান্ডের ক্ষুদ্র একটি অংশ সংশ্লিষ্ট এনজিও গুলোর মাধ্যমে আসলেও এসব ফান্ড ব্যয় করতেও সরকারিভাবে নজরদারি করা হয়। সকল এনজিও এবং আইএনজিও’র এই অর্থ ব্যয় করতে সরকারিভাবে বিভিন্ন শর্ত দেয়া হয়। রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও এবং আইএনজিও গুলোর কিছু কিছু এখন সে শর্ত সরাসরি ভঙ্গ করার অভিযোগ উঠেছে। রাষ্ট্রের স্বার্থ, প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। শরনার্থীদের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে কর্মরত ৬১ টি এনজিও প্রত্যাবাসনের বিপক্ষে উস্কানীমূলক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। যা এনজিও গুলো কখনো দিতে পারেনা। নীতি ও শিষ্টাচার লঙ্গন কর এনজিও গুলো এ বিবৃতি দিয়েছে। এটা সরকারের দেয়া শর্তের চরম লঙ্গন বলে উল্লেখ করে এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক এ.কে.এম আবদুস সালাম সিবিএন-কে বলেন-এনজিও গুলোর কর্মকান্ডে আগেও নজরদারী ছিলো, এখন ট্রিপল আরসি এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আরো তদন্ত ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এবিষয়ে ট্রিফল আরসি মোহাম্মদ আবুল কালাম এনডিসি (অতিরিক্ত সচিব) বলেন-এনজিওদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুলো ভাসা ভাসা, সুনির্দিষ্ট নয়। তারপরও অভিযোগের বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তদন্ত করে প্রমানিত হলে তাদেরকে কঠোর আইনের আওতায় আনা হবে। প্রসঙ্গত, উখিয়া ও টেকনাফের মোট ৬৫০০ একর বনান্ঞ্চল কেটে ৩২ টি ক্যাম্প মোট ২ লাখ ১২ হাজার ৬০৭ টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে রোহিঙ্গারা দু’বছরের বেশী সময় ধরে বসবাস করছে।