আলমগীর মানিক,রাঙামাটি

খোলা বাজারের নিন্মমানের তেল সংগ্রহ করে নামী-দামী কোম্পানী লোগোর মতো হুবহু নকল লোগো ব্যবহার করে রাঙামাটির হাট-বাজারগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। চিংড়ি, আমানত, মিনার নাম ব্যবহার করে সয়াবিনের আদলে কেমিক্যাল মিশ্রিত পাম অয়েল বিক্রির সাথে জড়িত বিশাল সিন্ডিকেট এর কবলে পড়ে রাঙামাটিতে বসবাসরত জনগোষ্ঠির উল্লেখ্যযোগ্য একটি অংশ এখন নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভালো মানের সয়াবিন তেল থেকে লিটারে ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম কম রেখে অসাধু চক্র প্রার্ন্তিক জনগোষ্ঠির বিশাল একটি অংশের মাঝে এই তেল সরবরাহ করছে। এসব তেল ব্যবহার করে রাঙামাটির বিভিন্ন নাম করা রেষ্টুরেন্টগুলোতেও বিক্রি করা হচ্ছে মুখরোচক বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী। এসব খাবার খেয়ে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এখানকার মানুষজন। বিষয়টি নজরে আসায় রাঙামাটিবাসীকে স্বাস্থ্য ঝুঁিক থেকে রক্ষায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটগণের উপস্থিতিতে তাদেরই সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে এবার মাঠে নেমেছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের নিরাপদ খাদ্য পরিষদ কর্তৃপক্ষ।

বুধবার রাতে শহরের পুরাতন বাস ষ্টেশন ও বনরূপা বাজারে অভিযান পরিচালনা করে নকল ও নাম সর্বস্ব ব্র্যান্ডের লোগো যুক্ত নিন্মমানের সয়াবিন তেল বিক্রিকারি একটি প্রতিষ্ঠানসহ শহরের অন্যতম ফাষ্টফুড বিক্রিকারি প্রতিষ্ঠান বনফুল-ফুলকলি, কাজী ফার্মস, কাশবন, মালঞ্চসহ খাবারের হোটেলগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কয়েকদিনের ব্যবহৃত তেল ব্যবহার করে খাবার বিক্রির চিত্র স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন অভিযান পরিচালনাকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটগণ, স্যানিটারি ইন্সপেক্টরসহ পুলিশের সদস্যরা। এসময় ৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোকে গুনগত মান পরীক্ষার পরবর্তী প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুসারে মামলা দায়েরে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। অভিযানে রাঙামাটিস্থ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট জাহেদ আহম্মদ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট প্রবাল চক্রবর্তী, ব্লাষ্টের আইনজীবি এডভোকেট জুয়েল দেওয়ান, রাঙামাটি সদর উপজেলার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মোছাম্মদ নাছিমা আক্তার খানম, শিক্ষানবিস স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো: মাসুদ রানা, কোতয়ালী থানা পুলিশের এসআই সাগর বড়–য়া উক্ত অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। মূলতঃ বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। রাঙামাটির নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মোছাম্মদ নাছিমা আক্তার খানম জানিয়েছেন, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে সরকার বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ প্রণনয়ন করেছে। এই আইন সম্পর্কে সার্বিকভাবে জনগণকে সচেতন করতে প্রচেষ্ঠার অংশ হিসেবেই উক্ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি জানান, আমরা ইতিমধ্যেই রাঙামাটির বিলাইছড়ি, কাউখালী, শহরের তবলছড়িতে অভিযান পরিচালনা করে ৬টি মামলা দায়ের করেছি। এরই মধ্যে বিলাইছড়ি উপজেলার একটি মামলায় এক ব্যবসায়িকে মাননীয় আদালত দোষী সাব্যস্ত করে দুই লাখ টাকার অর্থদণ্ড প্রদান করেছেন। আরো কয়েকটি মামলা চলমান আছে আদালতে। বুধবারও শহরের আমানত ও মিনার নামক লোগো সম্বলিত সয়াবিল তেল বিক্রিকারি একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, বনফুল, ফুলকলি, মালঞ্চ, কাশবন ও কাজী ফার্মস নামক ফার্ষ্টফুড এর দোকানগুলো থেকে আলামত এবং মালিকদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব আমরা উন্নত পরীক্ষার জন্য পাঠাবো। সেখান থেকে গুনগত মানের রিপোর্ট হাতে পেলে দায়ী সংশ্লিষ্ট্যদের বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ এর অনুকূলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।