মোঃ ফারুক, পেকুয়াঃ

পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের সবজীবন পাড়া এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মোঃ আজম উদ্দিন। বিগত ২৬ বছর ধরে তিনি নার্সারী করে আসছেন। তার নার্সারীর নাম পেকুয়া ইসলামীয়া নার্সারী।
গাছের প্রতি ভালবাসা এবং দেশকে সবুজ করার প্রত্যয়ে ও বেকারত্বের করুণ পরিণতি হতে মুক্ত থাকার জন্য নার্সারী করে সফল হয়েছেন তিনি।
যৌবনের শক্তি ও সাহসকে কাজে লাগিয়ে ছোট ছোট পরিশ্রমে নার্সারী করে জীবনের দুঃখের গতি পাল্টায়ে সুঃখের গতি বেগমান করেছেন।
এক সময়ের বেকার আজ সফল ব্যক্তি ও সফল উদ্যেক্তা মোঃ আজমের সাথে তার দীর্ঘ ২৬ বছর নার্সারী জীবনের নানা বিষয়ে আলাপ হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার পরিবার ছিল একদম অসহায়। ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচ ও পারিবারিক খরচ বহন করতে পিতা ছিল অসহায়। তখন আমি লেখাপড়া ছেড়ে চট্টগ্রামের একটি নার্সারীতে কাজ শুরু করি। অল্প বেতনে চাকরী করলেও পিতার পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় আমাকে ছাড়েনি। তিন বছর নার্সারীতে চাকরি করার পর নিজে ছোট পরিসরে একটি নার্সারী ব্যবসা শুরু করি। যার পুঁজি ছিল মাত্র
২ হাজার টাকা। একটানা তিন বছর চট্টগ্রামে নার্সারী ব্যবসা করার পর ২০হাজার টাকায় নার্সারীটা বিক্রি করে পেকুয়ায় চলে আসি। ২০০০ সালে ওই ২০হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে পেকুয়ায় একটি নার্সারী শুরু করি। তার নাম দেওয়া হয়
ইসলামীয়া নার্সারী। সেই যেই নার্সারী শুরু আল্লাহর রহমতে তার আয় থেকে পিতার পাশে দাঁড়িয়ে বোনদের বিয়ে দিয়েছি, ভাইকে বিদেশ পাঠিয়েছি। অন্য ভাইদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। বাড়িও করেছি কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে।
বর্তমানে আমার নার্সারীতে ৭/৮জন মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। তাদের ত্যাগ ও পরিশ্রমে ২০হাজার টাকা থেকে ২০লাখ টাকার পুঁজি হয়েছে। পরিবার নিয়ে সুঃখে আছি অনেক।
তিনি আরো বলেন, পেকুয়া উপজেলায় প্রতি বছর বৃক্ষমেলায় অংশগ্রহণ করে আমার ইসলামীয়া নার্সারী। ২০০০সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১বার ছাড়া প্রতিবার প্রথম স্থান অধিকার করেছে। বিক্রি করেছি অন্যান্য নার্সারী চেয়ে অনেক বেশি গাছের চারা। এছাড়াও রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কাপ্তাই ও চকরিয়ায় বৃক্ষ মেলায় অংশগ্রহণ করে সফলতার সাক্ষর রেখেছি। বর্তমানে বাবা মারা গেলেও তার
সব সন্তান সুঃখে আছে।
তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, এখন গাছের চারা লাগানোর জায়গা কমে গেছে। সাধারণ জনগণ গাছের চারা রোপন না করায় পরিবেশও মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে।
তবে মানুষের সচেতনতা বেড়েছে, এর বিকল্প হিসেবে ছাদে বাগান করার প্রচেষ্টা প্রায়ই মানুষের মধ্যে দেখা যায়। একদিকে যেমন বিশুদ্ধ বাতাস ও নির্মল পরিবেশ পাবেন ঠিক পাশাপাশি সেই গাছ হতে প্রাপ্ত ফল আপনাকে প্রশান্তি দেয়ার সাথে কিছু অর্থ ও দিতে পারে। তাই এখন মানুষ দাম দিয়ে ভাল গাছ ক্রয় করে ছাদে বাগান করাই কিছুটা হলে নার্সারী ব্যবসাটা টিকে আছে। নার্সারীর কারণে পরিবেশ রক্ষা হলেও সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা নার্সারী মালিকরা পায়না। তারপরও আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করি গাছের চারা জনগণের হাতে তুলে দিতে। তার আহ্বান গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান। শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে প্রতিটা বাড়িতে অন্তত একটি করে গাছের চারা লাগান।
এদিকে, পেকুয়ায় উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে আয়োজিত বৃক্ষমেলায় তার ইসলামীয়া নার্সারীতে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক রকমের গাছের সমাহার রয়েছে তার
নার্সারীতে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক দামী গাছের চারা নিয়ে এসেছেন।
তারও রয়েছে উন্নত জাতের গাছের চারা যা আগত ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
তার নার্সারী থেকে গাছের চারা ক্রয় করা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে কুলসুম মিনু বলেন, ইসলামীয়া নার্সারী পেকুয়া উপজেলায় সেরা। আর নার্সারী মালিক আজমও গাছ প্রেমী মানুষ। তার কাছে থেকে ভাল ও উন্নত মানের চারা পাওয়া যায়। আমি মনে করি নার্সারী করে আজম অনেক সফল হয়েছে। আমি তার উজ্জল ভবিষ্যত কামনা করছি।
পেকুয়া উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা তপন কুমার রায় বলেন, পেকুয়া উপজেলা বেশ কয়েকটি নার্সারী রয়েছে। এর মধ্যে আজমের ইসলামীয়া নার্সারীতে হরেক রকমের চারা রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি নার্সারী করে সফলতা অর্জনও করেছেন। আমার আহ্বান শিক্ষিত বেকার যুবক ভাইয়েরা নার্সারী করে সফলতা অর্জন করতে পারেন।