মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

গত ২৫ আগস্ট রোববার উখিয়ার মধুরছড়া রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের এক্সটেনশেন-৪ এর খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত লক্ষাধিক রোহিঙ্গার সমাবেশ সম্পর্কে শরনার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম এনডিসি (অতিরিক্ত সচিব) সিবিএন-কে বলেন, ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সমাবেশ করার জন্য কোন অনুমতি দেয়া হয়নি। ২৫ আগষ্ট রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আগমন দিবস উপলক্ষে রোহিঙ্গাদেরকে স্থানীয় মসজিদ, এবাদতখানা, ক্যাম্পের নিজ নিজ ব্লকে দোয়া ও আলোচনা করার জন্য তারা সম্মতি চাইলে তাদেরকে মৌন সম্মতি দেয়া হয়েছিলো। হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরনার্থী জমায়েত করে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে মহা সমাবেশ করার কোন অনুমতি দেয়া হয়নি। তাছাড়া, দ্বিতীয় দফায় ব্যর্থ হওয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার ২২ আগস্ট পর্যন্ত আমরা ব্যস্ত ছিলাম। পরবর্তী দু’দিন শুক্রবার, শনিবার, ২৩ ও ২৪ আগষ্ট ছিলো সাপ্তাহিক ছুটি। সুতরাং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার ব্যস্ততা ও বন্ধের মাঝে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার কোন সুযোগই ছিলোনা। একই কথা বলেছেন-পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ.কে. আবদুল মোমেন। সোমবার ঢাকার জাতীয় যাদুঘরে এক অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মহাসমাবেশের বিষয়টি সরকারের জানা ছিলোনা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে তিনি জানান। এবিষয়ে উখিয়ার ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরী সিবিএন-কে বলেন-রোহিঙ্গা শরনার্থীরা সমাবেশ করার বিষয়টি জেনেছি। তবে অনুমতির বিষয়টা তিনি জানেননা বলে সিবিএন-কে জানান। উখিয়া থানার ওসি আবুল মনসুর সিবিএন-কে জানান-সেদিন সমাবেশে অপ্রীতিকর কোন কিছু ঘটেনি। তবে সমাবেশের অনুমতির বিষয়টা ক্যাম্প ইনচার্জ জানবেন বলে তিনি জানান।
গত ২৫ আগস্ট রোববার ছিল রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে আগমনের দু’বছর পূর্তি। ২০১৭ সালের ঐদিনে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা শরনার্থী আগমনের ঢল নামা শুরু হয়েছিল। এদিন থেকে পরবর্তী প্রায় একমাস পর্যন্ত প্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে আগমন করে। বাংলাদেশে এর আগে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থী ছিলো প্রায় ৪ লাখ। কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফের ৩৩ টি শরনার্থী ক্যম্পে থাকা এসব শরনার্থীদের মাঝে গত দু’বছরে আরো প্রায় ৯১ হাজার শিশু জম্ম নিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় পৌনে ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে এখন অবস্থান করছে। রোহিঙ্গা আগমনের দু’বছর পূর্তি ও তাদের ৫ দফা দাবিতে প্রকাশ্যে পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা। তাদের দাবির মধ্যে ছিলো (১) রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেয়া, (২) রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বসতভিটা ফিরিয়ে দেয়া, (৩) রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া, (৪) আইসিসি কোর্টে রাখাইনে গণহত্যার বিচার করা ও (৫) রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফ্রি মুভমেন্টের সুযোগ দেয়া। রোহিঙ্গাদের সমাবেশে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা এই ৫ দফা দাবী ও নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দেয় ও অঙ্গীকার করে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে। চট্টগ্রামে আঞ্চলিক ভাষায় দাবী আদায়ের মূহুর্মূহ শ্লোগান, প্লেকার্ড, ফেস্টুন আর ব্যানারে ছেয়ে যায় সমাবেশস্থল। গত রোববার ২৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে উখিয়ার মধুরছড়া শরনার্থী ক্যাম্পের এক্সটেনশন-৪ এর খোলামাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশ হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরনার্থীদের পদভারে কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো। দাবি আদায়ে উত্তাল ছিলো এ সমাবেশ। সমাবেশে বক্তৃতা করেন, আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিচ এন্ড হিউম্যান রাইর্টস (পিআরএপিএইচ) চেয়ারম্যান মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ, সেক্রেটারি নুরুল মাসুদ ভূইয়া, মাস্টার আব্দুর রহিম, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, রোহিঙ্গা নেত্রী হামিদা বেগম সহ অন্যান্য নেতারা। মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আলোচিত প্রিয়া সাহার সাথে ১৭ ধর্মীয় গোষ্ঠীর একজন হিসাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্পের সংঙ্গে রোহিঙ্গা শরনার্থী বিষয়ে সাক্ষাত করে কথা বলেছিলেন। মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ রোহিঙ্গা নেতা হয়েও তাঁর বাংলাদেশের পাসপোর্ট রয়েছে। কিন্তু এসব রোহিঙ্গা নেতারা ক্যাম্প এরিয়ায় প্রবেশের কোন অনুমতি নেয়নি। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে পূর্ব থেকে ঘোষনা দিয়ে এরকম দাবি-দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করায় স্থানীয় জনগণ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ করার বিষয়টতে বিস্ময় প্রকাশ করে অনেকে বলেছেন-এ ধরনের সমাবেশের কারণে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা আরো ভয়ংকর, মারমুখী ও হিংস্র হয়ে উঠবে। যেটা স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও প্রশাসনের জন্য পরে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।