আলমগীর মাহমুদ

ওমর ফারুক হত্যার পর রোয়াইঙ্গাদের সমাবেশ।বিদেশ থেকে ভিডিও বার্তা। ১৭৯৮ সালে আরাকানি রিফুইজি পূর্ণবাসনে একজন বৃটিশ কর্মচারীর ভবিষ্যৎবাণীই আমার কল্পনায় কড়া নাড়াচ্ছে।কে যেন অচেতন মনে বার বার বুলিয়ে যাচ্ছে “তুই কি কাশ্মীরি হবি!না ভারতীয় রইবি?… ঠিক সিদ্ধান্ত নেবার সময় এখনই!

রোয়াইঙ্গাদের জন্য কোর্টবাজার কামারের দোকানে দশহাজার দা’ খন্তি (বিশেষ রকমের যা ফেইসবুকে ছবি প্রকাশিত)অর্ডার কক্সবাজারের ভাবনাহীন জনগনকে যুগিয়েছে নুতন আতংক আর টেনশন।আমাকে যুগিয়েছে সেই বৃটিশ কর্মচারীর দূরদর্শিতার বিষ্ময়তা।

সেই বৃটিশ কর্মচারী Francis Buchanan চট্টগ্রাম ও ত্রিপুরায় খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন ১৭৯৮ সালে।তিনি তাঁর বিবরনীতে আরাকানী উদ্ভাস্তুদের সাথে স্থানীয় হিন্দু,মুসলমানদের সম্পর্ক, উদ্বাস্তুদের জীবন প্রণালী ও তাদের নীতি সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছেন।

আরাকানী উদ্বাস্তুদের প্রতি চট্টগ্রামের স্থানীয় হিন্দু, মুসলমানদের বিরূপ মনোভাব ফ্রান্সিস বুকানন লক্ষ্য করেছেন।তার মতানুযায়ী…

আরাকানী উদ্বাস্তুদের নিজস্ব কর্মচারী দ্বারা অর্থাৎ আরাকান অধিবাসীদের দ্বারা পরিচালিত করা প্রয়োজন এবং সম্ভব হলে উদ্বাস্তুদের বসবাসের জন্য একটি ভিন্ন জেলা প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

ফ্রান্সিস বুকানন এ ক্ষেত্রে বারপালং ও নাফনদীর তীরবর্তী অঞ্চলে(উখিয়া, টেকনাফ অঞ্চল,বর্তমানে যেখানে রোয়াইঙ্গারা) এই জেলা গঠনের পক্ষে মত প্রকাশ করেন।অবশ্য এক্ষেত্রে উদ্বাস্তুদের স্থায়ী বসবাসের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার জন্য সামরিক বাহিনী মোতায়েনের উপর ও তিনি সর্বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।১

উল্লেখ করা যেতে পারে যে,আরাকানী উদ্বাস্তুদের বসতিদানের প্রশ্নে কোম্পানির কর্মচারীদের মধ্যে যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছিল তার ভিত্তি ছিল পূর্ব সীমান্তে কোম্পানির নীতি।

পরবর্তী পর্যায়ে আরাকানী উদ্বাস্তুদের বসতিদানের ক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স গৃহীত নীতির সাথে ফ্রান্সিস বুকাননের মনোভাবের সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়।অথচ সরকারী নথিপত্রে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের সাথে ফ্রান্সিস বুকাননের কোন যোগাযোগ লক্ষ্য করা যায় না।

নির্যাতিত জেলা কক্সবাজার। রিফুইজি সমস্যায় পুরো জাতির দায় বইতে গিয়ে হারিয়েছে সব। ১৭৯৮/৯৯ সাল থেকে ২০১৯। আরাকানি রিফুইজি থেকে রোয়াইঙ্গা, মুক্তি মিলেনি।
স্বকীয় সংস্কৃতির ধারিত নাম প্যানোয়া,পালংক্যি,বাকোলী নাম বাদ দিয়ে বৃটিশ ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামটিই জুড়ে আছে কপাল লিখন হয়ে নামকরণে “কক্সবাজার ” তারপরও নেই তার দুঃখ অনুতাপ।যে কোন বিচ্ছেদেই সে জ্বলবে।

রোয়াইঙ্গাদের আরাম কমিয়ে তাঁদের ঘরমুখো সম্ভব নয়।তাদের বিস্তৃতি আমার আপনার বাঁধনের বন্ধনের ভেতর।স্বাধীনতার পর থেকে আজ।প্রশাসনে,বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তারা।তাদের ছারপোকা মনে করে একঘষায় শেষ করতে চাওয়া হবে না বুদ্ধিমানের কাজ।তাঁদের অবজ্ঞা,অবহেলা, মনে করেও না….
আসুন বর্ষার আগেই ঘরের চাল মেরামত করি…!

দোহাইঃ-
1/ Francis Buchanan’s Journey Through Chittagong and Tippera,1798,India office Manuscripts, ADD 19286SCH-65754

2. প্যানোয়া,পালংক্যি,বাকোলী এ তিন পূর্বনামে ছিল আজকের কক্সবাজার।
(চলবে)

লেখক ঃ-বিভাগীয় প্রধান। সমাজবিজ্ঞান বিভাগ। উখিয়া কলেজ। কক্সবাজার।