শাহেদ মিজান, সিবিএন:

টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাফর আলম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহর মধ্যে তীব্র দ্ব›দ্ব বিরাজ করছে। তাদের এই দ্বদ্বের কারণে পুরো উপজেলাজুড়ে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ড হ-য-ব-র-ল হয়ে পড়েছে। বিভক্ত হয়ে পড়ছে নেতাকর্মীরা । সর্বশেষ বাহারছাড়া ইউনিয়ন বিএনপির পাল্টাপাল্টি আহবায়ক কমিটি ঘোষণা তার শেষ চিত্র। তাদের এই দ্বন্দ্বের কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। টেকনাফের বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এই তথ্য জানিয়েছেন।

অভিযোগ মতে, নানা কারণে উপজেলা কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকে সভাপতি জাফর আলম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহর মধ্যে দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। তা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে বহুগুণ! এক পর্যায়ে তা প্রকাশ্য কোন্দ্বল ও বিভক্তিতে পরিণত হয়। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে দলে সাংগঠনিক কর্মকান্ড ঝিমিয়ে পড়ে।এতে তাদের নেতৃত্বে প্রতি নেতাকর্মীরা আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। এতে কোনো কর্মসূচীতে তারা নিজেরাও নেতাকর্মীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। নেতাকর্মীরা নিজেরাও আসছে না।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বদ্বের কারণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দীন আহমদের গুম কর্মসূচী, শহীদ জিয়ার শাহাদাতবার্ষিকী দিবস, ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লব দিবস, দেশনেত্রী খালেদার জিয়ার মামলা, গ্রেফতার ও মুক্তি আন্দোলন কর্মসূচী, আরফাত রহমান খুকুর গায়েবানা জানাযা ও মৃত্যু দিবসের কর্মসূচীসহ ৯০ শতাংশ কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালিত হয়নি। একইভাবে উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক গতিশীলতা সংক্রান্ত কোনো কর্মসূচীও পালিত হয় না। অন্যদিকে দ্ব›েদ্বর কারণে বিভিন্ন ইউনিয়নেও নেতাকর্মীদের মাঝে তৈরি হয়েছে কো›দ্বল-বিভক্তি।

সূত্র মতে, সম্প্রতি সময়ে ঘোষিত সেন্টমার্টিন, টেকনাফ সদর, হ্নীলা, সাবরাং, শাহপরীদ্বীপ, বাহারছড়া (উত্তর) বিএনপির পূর্ণাঙ্গ ও আহবায়ক কমিটি নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এসব কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাল্টাপাল্টি পছন্দের লোকজনকে দায়িত্বে বসানো হয়েছে। ফলে সব কমিটি নিয়ে দুই জনের মধ্যে সৃষ্ট স্নায়ুযুদ্ধ প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে। সালাহ উদ্দীন আহমদের গুম নিয়ে সভাপতি জাফর আলমের পোস্টার-ব্যানার ও এককভাবে কিছু কর্মসূচী দেখা গেলেও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবদুল্লাহর একটি কর্মসূচীও দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে ওইসব কমিটিকে সৃষ্ট সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব এখন নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই বিভক্তির কারণে বাহারছড়া ইউনিয়ন উত্তর শাখা বিএনপি পাল্টাপাল্টি কমিটি দুটি আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ২০ আগস্ট সভাপতি জাফর আলম এককভাবে আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করেন। ওই কমিটি ‘সভাপতির কমিটি’ দাবি করে একদিনের মাথায় ২১ আগস্ট আবদুল্লাহ পাল্টা আহবায়ক অনুমোদন দিয়েছে। একইভাবে ২১ আগস্ট সভাপতি জাফর আলম এককভাবে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে সাথে সাথে। তাই এটিসহ সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ কর্তৃক প্রায় কমিটিতে পাল্টা কমিটি ঘোষণার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যকার দ্ব›দ্ব এখন প্রায় প্রকাশ্য। তাদের মধ্যে সাংগঠনিকভাবে এখন বিশাল দূরত্ব বিরাজ করছে। সাংগঠনিক কর্মকান্ডে এখন তাদেরকে এক সঙ্গে দেখা যায় না। তাদের এই দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়ছে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে। নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তির কারণে সাংগঠনিক কর্মসূচী পালিত হয় না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা বিএনপির জাফর আলম বলেন, ‘আমাদের মাঝে কোনো দ্ব›দ্ব নেই। আমরা দুইজন মিলেমিশে সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছি। কোথাও হয়তো স্থানীয়ভাবে একটু-আধটু সমস্যা হয়েছে। সেটার সাথে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।’

তবে মুঠোফোনের কল না ধরায় সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবদুল্লাহর বক্তব্য জানা যায়নি।

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্ব›েদ্বর কথা নেতাকর্মীরা বলে থাকে। সম্প্রতি কয়েকটি বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে একটু দূরত্ব হয়েছে বলে জেনেছি। তার জন্য দুইজনকে ডাকা হয়েছে। বসে বিষয়টি আমরা সমাধান করে দেবো।’