আজাদ মনসুরঃ
বর্তমান বিশ্বে তথ্য প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি ও উৎকর্ষের সুবাদে দ্রুত বদলে যাচ্ছে মানব সভ্যতার দৃশ্যপট। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারণা ও কৌশলগুলোতে পরিবর্তন এসেছে। একুশ শতকের আগে সংবাদপত্র কেন্দ্রিক রিপোর্টিং কাজ ছিল মূখ্য প্রবণতা। সেই রিপোর্টিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়েই এ পর্যন্ত এসেছে। সাম্প্রতিককালে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার রিপোর্টিং করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিগত সময় রিপোর্টিং এর জন্য কাগজ, কলম, নোটবুক, আর ম্যানুয়াল ক্যামেরা নির্ভর ছিল। এখন তা বদলে দিয়েছে ল্যাপটপ কম্পিউটার, ডিজিটাল ক্যামেরা, এমনকি মোবাইল ফোন ও মাল্টিমিডিয়া নির্ভর যন্ত্রকৌশল। আর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে’র অনলাইন নিউজ পেপার, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এর ব্যাপক বিস্তার।

এখানে সাংবাদিকতার পেশায় অবশ্যই শিক্ষা-জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। তবে শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা থাকলেই সাংবাদিকতার পেশাকে মানসম্মত করা যাবে না। এর জন্য ব্যবহারিক শিক্ষা প্রয়োজন। একজন সাংবাদিক ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম অর্থাৎ পৃথিবীর এবং পৃথিবীর বাইরের জানা অজানা সবরকম তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ ও তার সংবাদ প্রকাশ করে থাকে কল্যাণের জন্য। সাংবাদিকতা কোন গন্ডির মধ্যে সীমাব্ধ নয়। এমন কি কোন বিশেষ ক্ষেত্রের জন্যও নয়। সাংবাদিকতা হচ্ছে সার্বজনিন। একজন প্রকৃত সাংবাদিকের পরিচয় তার লিখনিতেই ফোঁটে উঠে।

এক কথায় ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হলুদ সাংবাদিকতা। মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও ভয়-ভীতি সৃষ্টি, অনৈতিক উপায়ে অর্থ উপার্জন, সমাজের উপর হীন প্রভাব বিস্তার যা সত্যিকার সাংবাদিকতার পেশাকে কলুশিত করা। এমনও দেখা যায় একজন ব্যাক্তি সামাজিক অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে সাজা পাওয়ার পর মুক্তি পেয়ে সমাজে যখন গ্রহণযোগ্যতা হারায় তখন পূর্বের পরিচিতি ঢাকতে এবং অনৈতিক উপায়ে অর্থ উপার্জনের জন্য সাংবাদিকতা পেশা বেছে নেয়। আবার সাংবাদিকতার পেশার অন্তরালে পুলিশ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদকের ব্যবসা, কালোবাজারি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কালো টাকা উপার্জনের প্রবণতার কথা অস্বীকার করা যায় না। কক্সবাজারের সাংবাদিকতার যতকথা’র আজকের আঠার পর্ব।

পাঠক, যা বলছিলাম-দেশের বহুল প্রচারিত পত্রিকায় সুযোগ না পেলেও অনিয়মিত পত্রিকায় এমনকি যে পত্রিকার নামও কেউ জানে না এমন পত্রিকার কর্তৃপক্ষ মহোদয়ের নিকট থেকে একটা সংবাদদাতা বা প্রতিনিধির পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে সাংবাদিক বনে যায়। আবার জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে নিজেকে ভাবতে শুরু করে কত বড় একজন সাংবাদিক হয়ে গেলাম এখন আর ঠেকায় কে? তখন সে পরিচয়পত্র পকেটে নিয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে পরিচয়পত্র দেখিয়ে নানা বাহানায় সংবাদ প্রকাশের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে টাকা আদায় শুরু করে। এমন অনেক সহজ সরল মানুষ ওই সাংবাদিকের প্রতারণা না বুঝতে পারলেও মান-সম্মানের ভয়ে এবং ঝামেলা এড়ানোর জন্য টাকা দিতে বাধ্য হয়। আবার কোন কোন পত্রিকার মালিক সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে হলুদ সাংবাদিকতায় সহযোগিতা করে তাদের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে থাকে, এমন তথ্যও পাওয়া যায়।

তারা সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুসরণ করে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকেন। অনেক সময় আপ্যয়ন করাতে চাইলে তা গ্রহণ করেন না। এর বাইরে যারা সাংবাদিক পরিচয় দেয় তারা কোন ধরণের সাংবাদিক জানতে চান ওই সরকারি কর্মকর্তা। ব্যবসায়ী মহল জানায়, কিছু সংখ্যক সাংবাদিক মাছের বাজারে গিয়ে মাছ বিক্রেতাকে ফরমালিন মেশানো মাছ বিক্রির অভিযোগ খাড়া করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় অথবা মাছ নেওয়া, ভেজাল তেল বিক্রির অভিযোগ খাড়া করে তেল বিক্রেতার কাছ থেকে উৎকোচ আদায়।
এছাড়াও গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনাকে হত্যা বলে পুলিশের ভয় দেখিয়ে স্বামীর নিকট থেকে টাকা আদায়, এমনকি কোন রেস্তোরায় খাবার খেতে গিয়ে খাবার শেষ করেছে কিন্তু মজার বিষয় হলো তরাকারি নষ্ট হয়েছে বলে তাক লাগিয়ে দেন রেস্তোরা কর্তৃপক্ষকে। শেষমেষ দেখা গেলো খাবারের টাকা নিলো না ওই ভুয়া সাংবাদিক থেকে। এ ধরনের ঘটনা রীতিমত চর্চা হচ্ছে এবং অনেক ধরনের তথ্য পাওয়া যায় ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে। হলুদ সাংবাদিকের কাজই হলো টাকা উপার্জন ও সুবিধা আদায়ের জন্য মানুষের দোষ খোঁজা, কেন ভাল দিকগুলো নয়? কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পর্যায়ে ভাল দিক নিয়ে লেখালেখি করলেও বিভিন্ন সুবিধা আদায় করা সম্ভব।

এ ধরণের সাংবাদিকতা বন্ধ করা দরকার। এ জন্য প্রথমে সংবাদ পত্রের কর্তৃপক্ষকে সজাগ হওয়া, প্রকৃত সংবাদ কর্মীদের সম্মিলিত ভাবে প্রতিবাদ করা, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী বিভাগের আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। হলুদ সাংবাদিকতাকে বন্ধ করা না গেলে এর ব্যাপক বিস্তার ঘটলে সত্যিকার সাংবাদিকদের লোক সমাজে পরিচয় দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। সমাজও আক্রান্ত হবে, সাংবাদিকদের প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে।

এক সময় মানুষের জীবন বলতে অস্তিত্ব রক্ষাই প্রধান বিবেচ্য ছিল, গণমাধ্যমের স্বরূপ জানা ছিলো না। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে এ দেশে আধুনিক ধারার সংবাদপত্রের বিকাশ শুরু হয়েছে। পত্রিকার বিষয়বস্তুতে বৈচিত্র্য এসেছে, নানা ধরনের নিরীক্ষা যোগ হয়েছে। সব শ্রেণির মানুষ আরো বেশি খবরের কাগজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। সাংবাদিকতার মানও বেড়েছে। এরপরও সংবাদপত্র শিল্প নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে চলেছে এর একমাত্র কারণ হচ্ছে কিছু কিছু সাংবাদিকদের উল্টা হাঁটার কারণে। চলবে…

লেখকঃ আজাদ মনসুর (এম.এ, এলএল.বি) শেষবর্ষ
আইটি স্পেশালিষ্ট, প্রণেতা-কক্সবাজার সাংবাদিক কোষ, সভাপতি-কক্সবাজার সাংবাদিক সংসদ (সিএসএস)
azadcox90@gmail.com ০১৮৪৫-৬৯ ৫৯ ১৬