ইমাম খাইর, সিবিএনঃ
এবারের কুরবানির পশুর চামড়ার দামে চরম ধস নেমেছে। ন্যুনতম মূল্যও দেয়নি ক্রেতারা। যত লাখ টাকা দামেরই হোক, গরুর চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে সর্বোচ্চ ৩০০শ টাকায়।
পথে-ঘাটে পড়ে আছে মহামূল্যবান কুরবানির মহেষ ও ছাগলের চামড়া। দাম না পাওয়ার ক্ষোভে অনেকে গর্তে পুঁতে ফেলেছে। আবার অনেকে এতিমখানা, হেফজখানার দান করে দিয়েছে। সেখানেও দাম না পেয়ে হতাশ এতিমখানার কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজার পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের উমিদিয়া হেফজখানা ও এতিমখানার শিক্ষা পরিচালক হাফেজ ক্বারী আতাউল্লাহ গণি কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন)কে বলেন, এবার কুবানির ঈদে ১২০ টির মতো গরুর চামড়া পেয়েছি। যার প্রতি পিচ সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা দামে বিক্রি করতে হয়েছে। মহেষ ও ছাগলের চামড়া বিনামূল্যে নিয়ে গেছে ক্রেতারা।
তিনি বলেন, কুরবানির চামড়ার টাকায় এতিমখানায় পড়ালেখা করানো হয়। কিন্তু এভাবে দাম না পেলে আগামীতে এতিমদের প্রতিষ্ঠানসমূহ কঠিন অবস্থায় পড়বে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় কুরবানির পশুর চামড়া পানির দরে বিক্রি হয়েছে। গরুর চামড়া ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা, ছাগল-ভেড়ার চামড়া বিক্রিও হয়নি। এলাকাভেদে যেগুলো হয়েছে তা ৫-২০ টাকায়।
গত দুই বছর ধরে চামড়া শিল্পে মহাবিপর্যয় শুরু হয়েছে। যে কারণে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নিজের পুঁজি দিয়ে চামড়া কিনে বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছে।
চামড়ার বাজারের মন্দা ভাবের জন্য সরকারের উদাসীনতা ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছে সাধারণ জনগণ।

সংবাদকর্মী মুহাম্মদ নিজাম তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন -‘আমার গ্রামের কোরবানির গরুর একটি চামড়াও বিক্রি হয়নি। বাধ্য হয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয়েছে এই জাতীয় সম্পদ।’
তিনি জানতে চান- ‘আপনার এলাকায় কি অবস্থা?’
ওই স্ট্যটাসের জবাবে অনেকে ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য করেছে।
নুর মোহাম্মদ নামের একজন লিখেন- ‘এতেই স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে এই সরকার গরিব বান্ধব নয়।’
মোহাম্মদ আবদুল আজিজ মন্তব্য করেছেন-‘ আমারটা গরু জবাই করার পর ঐ জায়গায় রেখে এসেছি। আজকে গিয়ে দেখব কেউ পুতে ফেলছে কি না।’
এরশাদ আরিকের কথা-‘জাতীয় অভিশাপ।’
সাহাব উদ্দিন জনির মন্তব্য হলো-‘আমাদের চামড়া এতিমখানায় দান করে দিয়েছি।’

এদিকে, চামড়ার দাম কম হওয়ায় কোরবানিদাতারা হতাশ।
তারা জানান, মাত্র কয়েক বছর আগে একটি গরুর চামড়া দুই থেকে আড়াই হাজারে এবং ছাগলের চামড়া ৫০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পশুর দাম অনেক বেড়ে গেলেও চামড়ার দাম নেই বললেই চলে। এতে বিভিন্ন মাদ্রাসার এতিম শিশুদের হক নষ্ট করা হয়েছে।
এজন্য তারা চামড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছে।
তাদের মতে, গরিবের হক নষ্ট করে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে।
১০টি গরুর চামড়ার টাকায় একজোড়া জুতাও মিলবেনাঃ
সিন্ডিকেট করে এবার একরকম পানির দামে কুরবানির পশুর চামড়া কিনে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এমনকি সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যও দেওয়া হয়নি কোথাও।
জুতা প্রস্তুতকারক ও চামড়া ব্যবসায়ীদের তথ্য থেকে দেখা যায়, বর্তমান বাজারে এক জোড়া ভালো মানের চামড়ার জুতার যে দাম, ১০টি গরুর চামড়ার দামও তা নয়।
কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ সাধারণত মসজিদ-মাদ্রাসা, এতিমখানা ও গরিব-অসহায় মানুষের হক। চামড়া সন্ডিকেটের কারণে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় ও পণ্যের দাম বাড়লেও এই কাঁচা চামড়ার দাম গত এক দশকে অন্তত ৪০০ শতাংশ কমেছে।
জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী গরুর কাঁচা চামড়ার মূল্য ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। খাসির কাঁচা চামড়ার মূল্য সারা দেশে ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির কাঁচা চামড়ার মূল্য সারা দেশে ১৩ থেকে ১৫ টাকা।