ফরিদুল মোস্তফা খান : বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঈদ এটি। প্রতিবছর আরবি জিলহজ মাসের ১০ তারিখে উদযাপিত হয় পবিত্র কোরবানির উৎসব। পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে নিজেদের ভেতরের পশুবিনাশ ঈদুল আজহার প্রধান উদ্দেশ্য। আত্মত্যাগ, শুদ্ধি, শান্তি-সৌহার্দ্য এবং আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে এই ঈদ। দিনটিতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে কোরবানি দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার অধ্যায় শুরু করবেন। পবিত্র ঈদুল আজহার উদ্দেশ্যের ধারা চলমান রেখে শান্তির ধর্ম ইসলাম তার স্থান সুপ্রতিষ্ঠিত রেখেছে। মূলত ত্যাগই এই ঈদের বিশেষত্ব।

এই দিনে নাড়ির টানে সবাই স্বজনদের কাছে ছুটে গেলেও ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে আমরা অনেক সাংবাদিক কাগজ আর কলমে ডুবে আছি। চিকিৎসক, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ অনেক পেশাজীবি মানব সেবক রয়েছেন, যাদের ঈদের ছুটি নাই। আবার হতদরিদ্র অনেকই আছেন, যারা অন্তত: এই দিনটিতেই হলেও এক টুকরো মাংস চায়। তাই মহান কোরবানীর বাস্তবতায় চোখে দেখা পথ শিশু ভব ঘুরে অনহারীর মুখে খাবার দিন। কবরে এসি নাই। দয়া করে কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে ক্ষুধার্তদের ছটফট যন্ত্রনা দেখুন আর সমাধান দিন।

কারণ, ভোগে প্রকৃত সুথ নেই, সুখ ত্যাগে। নিজের খাবার বিলিয়ে দিন অনহারীর মুখে। রাহমানের বান্দাতো তারাই যারা অপরের সুখে হাসতে জানেন।

পবিত্র এই ঈদে মুসলমানরা যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানির ব্যবস্থা করবেন। মসজিদে মহান আল্লাহর দরবারে নামাজ আদায় করে ঈদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ প্রদত্ত পবিত্র কোরআন মজিদে ‘কুরবান’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে কয়েকবার। আর, মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর বাণী হাদিসে ‘কুরবান’ শব্দের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে ‘উজহিয়া’ বা ‘জাহিয়াহ’। কুরবান শব্দের অর্থ নৈকট্য লাভ করা বা কোনো কিছুর কাছাকাছি থাকা। আর জাহিয়াহ শব্দের অর্থ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জবেহ করা। তাই, কোরবানির দিন পশু জবাইয়ের মাধ্যমে প্রত্যেকটি মানুষ পশু প্রবৃত্তি জবাই করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। এই জন্যই এই ঈদের নাম ঈদুল আজহা।

পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদমের (আ.) আমল থেকেই এই প্রথা প্রচলিত। অন্যান্য ধর্মেও কোরবানির বিধান রয়েছে। রীতি আলাদা হলেও মূল উদ্দেশ্য অভিন্ন। ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী, মহান আল্লাহর নবী হজরত ইব্রাহিমের (আ.) আমল থেকেই কোরবানি সমৃদ্ধি লাভ করে। সে সময় মহানুভব আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি দিতে গেলে আশীর্বাদস্বরূপ তার পুত্র বেহেশতি দুম্বায় রূপ নেয়। কঠোর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। সেই থেকেই মানুষ তার পথ অনুসরণের মাধ্যমে নিজের পশুত্বের খারাপ গুণগুলো দূরীভূত করার চেষ্টা করছে।

ঈদের নামাজ আদায়ের সময় দেশ থেকে দুর্যোগ-দুর্ভোগ দূরীভূত হতেও দোয়া চাইতে হবে। একই সঙ্গে আমরা চাই, পবিত্র ঈদুল আজহায় আত্মত্যাগ এবং সম্প্রীতির শিক্ষা বছরব্যাপী অমলিন থাকবে। এই ঈদের আনন্দ বর্ষিত হোক প্রাণে প্রাণে। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, জনতার বাণী বিডি ডটকম, ঢাকা। ই-মেইল : editorjonotarbani@gmail.com