শ্রীনগরে কাশ্মীরিদের বিক্ষোভ

বিবিসি :

ভারতশাসিত কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসিত মর্যাদা বাতিলের প্রতিবাদে রাজধানী শ্রীনগরে শুক্রবার হাজার হাজার লোকের বিক্ষোভের ভিডিও ফুটেজ বিবিসি-র হাতে এসেছে, যদিও ভারত সরকার দাবি করছে যে ওই রকম কোনও বিক্ষোভ হয় নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, জুমার নামাজের জন্য কারফিউ কিছুটা শিথিল করার সুযোগে মাত্র আধঘন্টার মধ্যেই শ্রীনগরের ঈদগাহ ময়দানের ওই বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে যায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, হাজার হাজার লোকের সেই বিক্ষোভে কাশ্মীরের স্বাধীনতার পক্ষে মুহুর্মূহু স্লোগান উঠছে।

ওই বিক্ষোভে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও ছররা গুলিও নিক্ষেপ করে, যাতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী জখম হয়েছেন।

তবে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট মন্ত্রক শনিবার টুইট করে জানায়, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে যে খবর বেরিয়েছে কাশ্মীরে প্রায় দশ হাজার মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন, সেটা সম্পূর্ণ ভুল খবর। এতে বলা হয় শ্রীনগর বারামুল্লায় কয়েকটি বিক্ষোভ হয়েছে, কিন্তু কোনওটাতেই জনা কুড়ির বেশী মানুষ ছিলেন না।

শুক্রবারের বিক্ষোভের পর থেকেই রাজ্যে কারফিউ বহাল ছিল।

কিন্তু বিবিসির সংবাদদাতা রিয়াজ মাসরুর শ্রীনগর থেকে যে ভিডিও পাঠিয়েছেন, তাতে দেখা যায় শুক্রবার ওই শহরে জুম্মার নামাজের পর কয়েক হাজার মানুষের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের চিত্র।

বিক্ষোভকারীদের কারও হাতে কালো পতাকা, কারও বা সবুজের ওপরে চাঁদতারা আঁকা পতাকা, কারও হাতে ‘উই ওয়ান্ট ফ্রীডম’ লেখা পোস্টার।

মানুষের গলাতেও শোনা যাচ্ছে স্বাধীনতার দাবীতে স্লোগান।

রিয়াজ মাসরুর জানা্ছেন, নিরাপত্তা বাহিনী প্রথমে মানুষকে জড়ো হতে বাধা দেয় নি।

কিন্তু কিছুক্ষণ পরে একজায়গায় প্রথমে শূন্যে গুলি চালায় তারা, তারপরে পেলেট গান থেকে ছররা গুলি ছোঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর।

তার পাঠানো ভিডিওতে বিক্ষোভের ওপরে পুলিশ ছররা গুলি চালানোর পর ছত্রভঙ্গ বিক্ষোভকারীদের ছুটোছুটির দৃশ্যও দেখা গেছে।

ভিডিওতে ধরা পড়েছে গুলি ছোঁড়ার শব্দ, তার পর মানুষ যে যেদিকে পারছেন পালাচ্ছেন, অনেককেই আড়াল খুঁজতে দেখা যাচ্ছে. কেউ কেউ আবার মাটিতে শুয়ে পড়ছেন বা হামাগুড়ি দিয়ে নিরাপদ জায়গার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

ভারতের সংবিধান থেকে কাশ্মীর রাজ্যের স্বায়ত্বশাসন দানকারী ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার পর থেকে রাজ্যটি কার্যত অবরুদ্ধ এবং বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে।

টেলিফোন-ইন্টারনেট সংযোগ ছিন্ন, রাজনৈতিক নেতা সহ শত শত লোক গৃহবন্দী বা আটক অবস্থায় আছেন। রাজধানী শ্রীনগরের পথে পথে ফৌজি টহল ও তল্লাশি চলছে, দোকানপাট বন্ধ, জনজীবন স্তব্ধ ।

কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল চ্যালেঞ্জ হলো আদালতে

অন্যদিকে ভারতশাসিত কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসিত মর্যাদা কেড়ে নেবার সরকারি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে রাজ্যের একটি বড় রাজনৈতিক দল।

ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের কয়েকজন নেতা এই আপিল আবেদন করেছেন। তারা চাইছেন, আদালত যেন সরকারের ওই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক ঘোষণা করে তা বাতিল করে দেয়।

এ ছাড়া ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে যে দুটি কেন্দ্রশাসিত ইউনিয়ন টেরিটরি গঠন করেছে – তাও চ্যালেঞ্জ করেছেন কাশ্মীরের কনফারেন্সের নেতারা।

এই দলটির প্রধান হচ্ছেন ওমর আবদুল্লাহ – যিনি কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এখন কাশ্মীরের আরো শত শত রাজনৈতিক নেতার মতোই গৃহবন্দী আছেন।