কুতুব উদ্দিন :
‌ছোট বেলা থেকে সপ্ন ছিলো সারা পৃথিবী ঘুরবো কিন্তু কালের পরিক্রমায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়াটা যে কত কঠিন তা বুঝতে দেরী হলো না। চেষ্টা চলতে থাকে আমার ইচ্ছাকে বাস্তবে রুপ দেওয়ার জন্য।এমনি সময় আমি শুরুকরি আমার চাকরি জীবন একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে। পরপর দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করার সুযোগ পায়।২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে আমার প্রিয় আস্থাভাজন UNHCR -এর সিনিয়র সহকারী ফিল্ড অফিসার,কক্সবাজার (বর্তমান ILO হেডকোয়ার্টারে কর্মরত) মাহানাম ভাই আমাকে একটি ওয়েবসাইটের লিংক শেয়ার করলে আমি আবেদন করি।নেদারল্যান্ডসের কিলিংডিয়াল ইন্সটিটিউটের হিউমেনিটেরিয়ান নেগোসিয়েশন এর উপর ৪ দিনের কোর্স ছিল এটি নেদারল্যান্ডসের ফরেন মিনিস্ট্রিরির ইন্সটিটিউট।ডিসেম্বরের ১২ তারিখ আমি একটি ইমেইল পায় আমাকে তারা সিলেক্ট করেছে।তারপর ঢাকাস্থ ভিএফএস অফিসে ভিসার আবেদন করি কারণ বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের এম্ভাসী নেই। আমার ট্রেনিং ছিল জানুয়ারির ২৯-০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মোট ৪ দিন।ভিসা আবেদন আগেভাগে করলেও আমি ভিসা পায় ২৭ জানুয়ারি তারপরও তড়িঘড়ি করে বিমানের টিকেট করে রওনা হই।২৮ তারিখ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬ টায় এমিরেটস এয়ারলাইন্স এর ফ্লাইট বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার বিভিন্ন বিরক্তিকর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রওনা হলাম বিমানের দিকে মনের ভিতর যেমন খুশিতে আত্মাহারা তেমনি কিছুটা ভয় ও বেদনাও কাজ করেছিলো।দীর্ঘ ২০ ঘন্টার বিমান ভ্রমণ শেষে ২৯ জানুয়ারি সকাল ১১ টায় নেদারল্যান্ডসের রাজধানী এমাস্টাডমে পৌঁছায়।বিমান থেকে নামার আগে পাইলট ঘোষণা দিলেন আজকে নেদারল্যান্ডসের টেম্পারেচার ২ ডিগ্রি আমি অবশ্যই শীতের কাপড় নিয়ে গিয়েছিলাম।

বিমানবন্দরে আমার জন্য ইন্সটিটিউটের পাঠানো গাড়ি অপেক্ষা করছিলো। গড়িতে উঠে আবার হেগের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম ১ ঘন্টা কার জার্নি শেষে পৌঁছালাম কিলিংডিয়াল ইন্সটিটিউটে।যাওয়ার সাথে সাথে একজন সুন্দরী মহিলা আমাকে স্বাগত জানিয়ে আমাকে ইন্সটিটিউটের ভিতরে নিয়ে যায়।আমি অনেক খুদার্ত ছিলাম মহিলাটি আমাকে জিজ্ঞেস করলো কফি খাবো কিনা আমি হ্যাঁ বলায় ব্লেক কফি দিলো(অবশ্যই এতো তেতো ছিল খাওয়া গেলো না)। আমি পৌঁছাতে পৌঁছাতে ট্রেনিং এর ৪ ঘন্টা অতিক্রম করেছে তাই আমি কিছু বিষয় মিস করি।সন্ধ্যায় খাবারের পালা বিভিন্ন রকমারি খাবার কিন্তু কোনটাই বাঙালি স্বাদ পায় না।আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ১৬ জন অংশগ্রহণ করি।অংশগ্রহণ কারী দেশ গুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ , নেপাল, পাকিস্তান , আফগানিস্তান , ফিলিস্তিন , ইয়েমেন, তুরস্ক , ইটালি , ইতোওপিয়া, নেদারল্যান্ডস।

প্রথম দিন ট্রেনিং শেষ করে ইন্সটিটিউটের গাড়ি এসে আমাদের হোটেলে নিয়ে গেল।বাইরে প্রচুর ঠান্ডা চারদিকে বরফে ঢাকা, যেদিকে তাকাই সাদা আর সাদা দেখে মনটা ভরে গেল।অবশেষে হোটেল পৌঁছালাম একটু ফ্রেশ হয়ে সবাই বললো রাতের হেগ শহর ঘুরে দেখবে। দশ মিনিট পর সবাই বেরিয়ে হোটেল থেকে ঠান্ডায় যেন জমে যায় তারপরও সবাই ঘুরার নেশা পেয়েছে। চার্জ, সী বিচ সব কিছু দেখে একটি বারে ঢুকলাম সবাই বিয়ার অর্ডার করলো আমি আর ফিলিস্তিনের একজন আমরা কফি অর্ডার করলাম।আর্শ্চযের বিষয় বিয়ার ৪ ইউরো কিন্তু কফি ৫ ইউরো! হোটেলে ফিরে গিয়ে পরের দিন আবার বেরিয়ে গেলাম ইন্সটিটিউটের উদ্দেশ্যে। হেগ শহরের অবাক করা একটি বিষয় হচ্ছে প্রত্যেকটি বাড়িতে বাইসাইকেল আছে এবং রাস্তায় বাইসাইকেল এর জন্য একটি আলাদা লেন আছে।প্রত্যেকটি বাড়ি ও রাস্তার পাশে ফুলের বাগান সবাইকে বিমোহিত করে। হেগ শহরের কৃষি ব্যবস্থা খুবই উন্নত তারা বছরে তিনবার ফসল ফলাই।হাজার হাজার একর জমি নিয়ে এক একজনের ফার্ম হাউজ সবকিছুই সাজানো এবং বিষ্ময়কর। অবশেষে চার দিনের ট্রেনিং শেষ করে আরো দুই দিন ঘুরাঘুরি অতঃপর হেগ শহরকে বিদায় জানিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।