সরওয়ার আজম মানিক:
মিয়ানমার থেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা পরিবারগুলো যেন ভালভাবে ঈদ উল আযহা উদযাপন করতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার ও দাতা সংস্থাগুলো।

উখিয়া টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া ২ লাখ ১০ হাজার পরিবারের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত বিতরণের জন্য আড়াই হাজারের মতো পশু পাওয়া গেছে। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় শরণার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশন অফিস ইতোমধ্যে তালিকা প্রণয়ণের কাজ প্রায় চূড়ান্ত করেছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের মাঝেও বিতরণ করা হবে কোরবানির মাংস। ঈদের নামাজের জন্য প্রতিটি ক্যাম্পে থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা।

জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার। তারা ৩২টি ক্যাম্পে বসবাস করছে। তাদেরকে দেখ ভাল করছে দেশি-বিদেশি দুই শতাধিক সংস্থা। এসব রোহিঙ্গা পরিবারগুলো এবারের কোরবানির ঈদ যেন ভালোভাবে করতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছে শরণার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশন অফিস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। প্রতি পরিবারের মাঝে কত কেজি করে মাংস বিতরণ হবে এটি চূড়ান্ত হয়নি। তবে বিতরণের জন্য যত মাংস নির্ধারণ হবে তার ৩০ ভাগ স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। ৭০ ভাগ বিতরণ হবে আশ্রিত রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর মাঝে। প্রতিটি পরিবারই কোরবানির মাংস পাবে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) সামশুদ্দোজা নয়ন বলেন, আমরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য এখন পর্যন্ত আড়াই হাজারের মতো পশু পেয়েছি। সেগুলো একত্রিত করে যেখানে যতটা দরকার ততটা হিসাব করে পাঠানো হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্যাম্প ইনচার্জদের তত্ত্বাবধানে মাংস বন্টন করা হবে। কোরবানির দুই দিন পরও মাংস বিতরণ করা হবে। সেই সাথে প্রতিটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা যেন ঈদের নামাজ আদায় করতে পারে সে লক্ষ্যে থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। তবে পরিবার রয়েছে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় জানায়, তুরস্কভিত্তিক এনজিও ডায়নেট ফাউন্ডেশন ৫০ হাজার কেজি মাংশ বিতরণ করবে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে। ওই এনজিও’র এশিয়ার কডিনেটর ওজোজাহান জানিয়েছেন, বিশ্বের ১৬০টি দেশে তারা কোরবানির মাংশ বিতরণ করে। এতে সর্বোচ্চ বিতরণ হবে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে। এছাড়া রংপুরসহ বাংলাদেশের আরো কিছু এলাকায় ও তারা কোরবানির মাংস বিতরণ করবে তারা।

রোহিঙ্গা ও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে কোরবানির মাংস বিতরণে প্রশাসনিক উদ্যোগের বাইরেও অনেকে বিচ্ছিন্নভাবে মাংস বিতরণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বলে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে। তারা রোহিঙ্গাদের মাঝে গরুর মাংস বিতরণের নামে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করছে। তাদের সেই উদ্যোগের বিষয়ে বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ থাকায়, সেসব কার্যক্রমের স্বচ্ছতা দাবি করেছে স্থানীয়রা।

কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ নিয়ে নিজেদের মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে রোহিঙ্গাদের।

কুতুপালং ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা ফারুক জানান, তারা স্বাচ্ছন্দ্যে কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে চান এবং চাহিদা অনুযায়ী কোরবানির মাংস পেলে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে ভালভাবে খেতে পারবেন। এতে অন্তত ঈদ উদযাপনের মতো আনন্দ একটু হলেও পাবে বলে আশা তাদের।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত দুই বছর আগে ঠিক এই সময় তাদের নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে বাংলাদেশে। এখানে এবার সহ দু’বার আমরা কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছি। শুনেছি প্রত্যেক রোহিঙ্গা পরিবারের মাঝে মাংস বিতরণ করা হবে। যা পাই তাতেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে। রোহিঙ্গারা তো আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয় যে নিজেরা কোরবানি করবে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, এ কোরবানির ঈদে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কেউ যেন কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।