আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
তিন ঘন্টার জন্য স্তব্ধ ছিলো রাঙামাটি। কোনো গাড়ির চাকা যেমন ঘুরেনি, খোলেনি কোনো বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কেউ কোনো কাজ করেনি। এই তিন ঘন্টা সময় নিশ্চল থাকার জন্য কেউ কাউকে বলতেও হয়নি। কারফিউর মতো পরিবেশ সৃষ্টি করে এভাবেই প্রতিবাদ জানিয়েছে রাঙামাটিবাসী। এই প্রতিবাদ অযৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে। ভিত্তিহীন আদিবাসী স্বীকৃতি দাবির বিরুদ্ধে এভাবেই রাজপথে নেমে নীরব প্রতিবাদ জানায় রাঙামাটিবাসী। পরে অনুষ্ঠিত হয় মহাসমাবেশ।

সচেতন পার্বত্যবাসীর ব্যানারে অনুষ্ঠিত এই মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য নারী নেত্রী ফিরোজা বেগম চিনু। শিক্ষাবিদ জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান হাবিবের সঞ্চালনায় উক্ত সমাবেশে তবলছড়ি ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি হাজী জহির আহাম্মেদ সওদাগর, রিজার্ভ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার মিয়া বানু, রাঙামাটি আসবাবপত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক-আব্দুস শুক্কুর, অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম, নারী নেত্রী মনিকা আক্তার, বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মোমিন, শ্রমিক পরিষদের আহবায়ক মোঃ রাসেল, বরকলের ব্যবসায়ি নেতা আব্দুল জলিলসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ি সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, শ্রমিক সংগঠনসহ সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপজাতীয় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজীতে লিপ্ত আঞ্চলিক দলগুলোর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই বলে সরকারীভাবে প্রজ্ঞাপন জারির পরেও তথাকথিত আদিবাসী দিবস পালনকে কেন্দ্র করে আবারো পাহাড়ের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করা পায়তারা করছে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের লালন-পালনকারিরা। এতে করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পাহাড়ের পরিবেশ। রাষ্ট্র কর্তৃক পরিপত্র জারির পরেও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আদিবাসী দিবস পালনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই প্রকাশ্য ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চুক্তি করার সময় কোনো আদিবাসী নেই বলে সন্তু লারমা প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলো। এরপর থেকেই রাষ্ট্রীয় পতাকা লাগিয়ে এসি পাজেরো জীপে চড়ার পাশাপাশি সরকারী ভবনে থেকে রাষ্ট্রের খেয়ে সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা। এই ধরনের নিমকহারামী চরিত্র একমাত্র মীর জাফরের বংশদররাই করতে পারে মন্তব্য করে বক্তারা অভিলম্বে সন্তু লারমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার মাধ্যমে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে আরো বেশি পরিমানে নিরাপত্তা বেষ্টনী বৃদ্ধির মাধ্যমে অত্রাঞ্চলের অখন্ডতা রক্ষাসহ এখানকার অধিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিও জানিয়েছেন।

এরআগে সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাঙামাটি শহরের পৌরসভা প্রাঙ্গনে সকাল দশটা থেকেই জমায়েত হতে থাকে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো মানুষজন। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় সম্মুখে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় শহরজুড়েই বন্ধ হয়ে যায় সকল প্রকার যানবাহন। প্রায় তিন ঘন্টা সময়ধরে অবরুদ্ধ ছিলো রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক।