মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলোতে ডেঙ্গু টেস্ট কিট, ডেঙ্গু রিঅ্যাজেন্ট এবং প্লাটিলেট ও প্লাজমা কিট সহ ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের অন্যান্য ল্যাব সরন্ঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু জীবানু পরীক্ষার কিছু কীট ও অন্যান্য ল্যাব সরন্ঞ্জাম থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। উপজেলা হাসপাতাল গুলোতে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীরা পরীক্ষা করতে গিয়ে হাসেপাতাল থেকে ফেরত আসছে বলে একাধিক রোগী সিবিএন-কে অভিযোগ করেছেন। অনেকক্ষেত্রে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলো প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষা করে এনে রোগীদের হাসপাতালের সরকারি কাগজে সিল ছাপ্পর দিয়ে রিপোর্ট সরবরাহ দিচ্ছে। ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার কীট ও অন্যান্য সরন্ঞ্জাম অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাঃ আবদুল মতিন সিবিএন-কে বলেছেন, স্বাস্থ্য সদর দপ্তর থেকে রোববার কক্সবাজার জেলার জন্য মাত্র ১২০ ডেঙ্গু টেস্ট কিট, ডেঙ্গু রিঅ্যাজেন্ট এবং প্লাটিলেট ও প্লাজমা কিট পাওয়া গেছে। অথচ পুরো কক্সবাজার জেলার জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছিল ২ হাজার কীট ও অন্যান্য সামগ্রীর। প্রাপ্ত ১২০ টি কীটের মধ্যে অধিকাংশ কীট জেলা সদর হাসপাতালে বরাদ্দ ও যৎসামান্য কীট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ আবদুল মতিন সিবিএন-কে জানান, স্বাস্থ্য বিভাগীয় সদর দপ্তরে জরুরী ভিত্তিতে ডেঙ্গু টেস্ট কিট, ডেঙ্গু রিঅ্যাজেন্ট এবং প্লাটিলেট ও প্লাজমা কিট সহ অন্যান্য ল্যাব সরন্ঞ্জাম প্রেরণের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে এবং নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের কীট ও অন্যান্য ল্যাব সরন্ঞ্জাম পেতে পারেন বলে সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ আবদুল মতিন সিবিএন-কে জানান।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আপাতত ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার কোন কীট সংকট নাই বলে জানিয়েছেন, হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোহাম্মদ মহি উদ্দিন। তবে জেলা সদর হাসপাতালের স্টকে থাকা ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার কীট ও অন্যান্য ল্যাব সরন্ঞ্জাম একেবারে কম বলে তত্বাবধায়ক ডাঃ মোহাম্মদ মহি উদ্দিন সিবিএন-কে জানান। যে গুলো আছে, সেগুলো দিয়ে আপাততঃ দু’এক দিন কাজ চলবে। সরকারি হাসপাতাল গুলো ব্যাতীত কক্সবাজার জেলায় প্রায় ১৬ টি প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ২৮ ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এসব প্রাইভেট স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর সবক’টি সরকার অনুমোদিত না হলেও এসমস্ত প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর দু’একটা ছাড়া বাকি গুলোতে ডেঙ্গু টেস্ট কিট, ডেঙ্গু রিঅ্যাজেন্ট এবং প্লাটিলেট ও প্লাজমা কিট সহ প্রয়জনীয় ল্যাব সরন্ঞ্জাম নেই বললেই চলে। তাছাড়া, গত সপ্তাহে স্বাভাবিকের চাইতে দ্বিগুণ বা আড়াই গুন দামে ও কালোবাজারে ডেঙ্গু টেস্ট কিট, ডেঙ্গু রিঅ্যাজেন্ট এবং প্লাটিলেট ও প্লাজমা কিট পাওয়া গেলেও ঢাকায় কোথাও এসব প্যাথলজি পন্য এখন আর পাওয়া যাচ্ছেনা। তারমধ্যে, আবার সঠিক ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়কারী ‘NS-1′ ডেঙ্গু জীবানু পরীক্ষার কীট মোটেই পাওয়া যাছেনা। অন্যান্য ব্রান্ডের কীট দিয়ে ডেঙ্গু জীবানু পরীক্ষার রিপোর্ট সঠিকভাবে ল্যাব টেস্টে আসেনা বলে একজন বিশেষজ্ঞ প্যাথলজিষ্ট সিবিএন-কে জানিয়েছেন। NS-1 কীটের স্বাভাবিক বাজারদর সাড়ে ৩ শ’ থেকে ৪ শ’ টাকা হলেও গত সপ্তাহে সেগুলো ঢাকায় ৮ শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন সে দামেও কোথাও এগুলো পাওয়া যাচ্ছেনা। চকরিয়া জমজম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কবির সিবিএন-কে জানান, তারা ডেঙ্গু রোগীকে সেবা দেয়াকে একটা পূণ্য ও জনকল্যাণমূলক কাজ হিসাবে নিয়েছেন। ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের ডেঙ্গু চিকিৎসক টিম সার্বক্ষনিক কাজ করে যাচ্ছেন। জমজম হাসপাতালের এমডি গোলাম কবির সিবিএন-কে আরো জানান-কোন বাণিজ্যিক চিন্তা ভাবনা নাকরে তারা অধিক মূল্যে মানসম্মত ডেঙ্গু টেস্ট কিট, ডেঙ্গু রিঅ্যাজেন্ট এবং প্লাটিলেট ও প্লাজমা কিট ক্রয় করে হাসপাতালে মজুদ রেখেছেন। এমডি গোলাম কবির সিবিএন-কে আরো বলেন, যে কোন রোগী কিংবা যেকোন জায়গার রোগী হউক আমরা সার্বক্ষনিক ডেঙ্গু ও অন্যান্য সর্বোচ্চ সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। এজন্য জমজম হাসপাতালে ৮ জন নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ডিপ্লোমা নার্স সহ অন্যান্য লোকবল, উন্নত প্যাথলজী, ল্যাব পণ্য ও অন্যান্য সুবিধাদির ব্যবস্থা রয়েছে।
এদিকে, সরকার ডেঙ্গু টেস্ট কিট, ডেঙ্গু রিঅ্যাজেন্ট এবং প্লাটিলেট ও প্লাজমা কিটের ক্ষেত্রে কর ও শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষনা দিয়েছে। ডেঙ্গু শনাক্তকরণ সরঞ্জামের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর, আগাম কর এবং অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সোমবার ৫ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ফলে ডেঙ্গু টেস্ট কিট, ডেঙ্গু রিঅ্যাজেন্ট এবং প্লাটিলেট ও প্লাজমা কিটের ক্ষেত্রে এসব কর আর প্রযোজ্য হবে না। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, অনুমোদিত পরিমাণ পণ্য আমদানিতে এ সুবিধা কার্যকর হবে। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এ নির্দেশ বহাল থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।