মো.মনজুর আলম , চকরিয়া :

ঈদ-উল আযহার টানা ছৃুটিতে ভ্রমন পিপাসু দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত দেশের প্রথম কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক। ইতোমধ্যে তিনটি অর্থবছরে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে পার্কের আধুনিকায়নে বাস্তবায়ন করা হয়েছে অনেক গুলো উন্নয়ন প্রকল্প। সংগ্রহ করা হয়েছে বিলুপ্ত প্রায় শত প্রজাতির জীববৈচিত্র। ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ যোজাতে পার্কের বিভিন্ন পর্যটন স্পটকে ঢেলে সাজানা হয়েছে। বলতে গেলে পার্কের ভেতরে বাইরে এখন সাজ সাজ অবস্থা বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, চারিদিকে সীমানা প্রাচীরের বাউন্ডারী। ভেতরে হরেক রকমের গাছ-গাছালিতে ভরপুর সবুজ অরণ্য। আঁকাবাঁকা সড়ক গেছে নান্দনিক পর্যটন স্পট গুলোর প্রতিটি অন্দরে অন্দরে। পার্কের নিজস্ব পরিবহনে একসাথে অনেকজন দর্শন করতে পারেন নির্মল পরিবেশে বিলুপ্ত প্রায় বন্যপ্রাণী সমুহের অবাধ বিচরণ। ইচ্ছে করলেই হেঁেট যেতে যেতেও দেখতে পারেন প্রাণীকুলের লাফালাফি ও কিংবা নানা ভঙ্গিমার কসরত। বিলুপ্ত প্রায় বন্যপ্রাণী ছাড়াও দেখতে পাবেন নানা প্রজাতির পাখীর কল-কাকঁলি। পর্যটন স্পটের সব স্থাপনা ও পার্কে সংগ্রহ করা জীববৈচিত্রের মুগ্ধতা নিমিষেই আপনার মন জুড়াবে। ইচ্ছে করলেই পার্কে ১২০ ফুট উচ্চতার অনুবীক্ষন টাওয়ারে উঠে পুরো পার্কের সৌর্ন্দয্য উপভোগ করতে পারেন। বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা, গবেষনা, ইকো-ট্যুরিজম ও চিত্রবিনোদনের জন্য সরকার ১৯৯৮-৯৯ সালে অর্থবরাদ্ধের মাধ্যমে পার্কের অবকাঠামো নির্মাণ ও দেশ-বিদেশ থেকে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী সংগ্রহের পর আনুষ্টানিক উদ্বোধন করা হয় পার্কটি।

জানা গেছে, সাফারি পার্কে দর্শনার্থীদের দেখার জন্য আছে, দেশ-বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা বিলুপ্ত প্রায় (স্থন্যপায়ী প্রাণী) ১৪৯ প্রজাতির। সরীসৃপ জাতের ১৫২ প্রজাতির প্রাাণী ও ৬১ প্রজাতির পাখী। তা ছাড়া পার্কে উন্মুক্তভাবে অবাধ বিচরণে রয়েছে ৮০৬টি বন্যপ্রাণী। স্থন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার (বাঘ), সিংহ, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, হনুমান, বাঁশভাল্লক, বন্যশুকুর, খরগোশ, বনগরু বা গয়াল, বাঘদাসা, বনবিড়াল, মার্বেল বিড়াল, চিতা বিড়াল, বনরুই, সজারু, বাদর, লজ্জাবতী বানর, আসামি বানর, উল্লুক, কালো উল্লুক, সাম্বার হরিণ, শিয়াল, মেছোবাঘ, ওয়াইল্ডবিস্ট, জলহস্তি ও চিত্রা হরিণ। সরীসৃপ জাতের মধ্যে কালিকাইট্টা, রক্তচোষা, কড়ি কাইট্টা, কালো গুই, ছিম কাছিম, পানি সাপ, বোস্থামি কাছিম, তারকা কচ্ছপ, সুন্দী কাছিম, মেটে সাপ, গোখরা, ঢোঁড়া সাপ, টিকটিকি, তক্ষক, বিশাল আকৃতির অজগর, নোনাপানির কুমির, ঘড়িয়াল, মিঠাপানির কুমির, হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ ও উভচর প্রাণী সোনা ব্যাঙ্, গেছো ব্যাঙ্ এবং কুনো ব্যাঙ্ ইত্যাদি। এ ছাড়া দেশ-বিদেশী পাখীর মধ্যে রয়েছে পানকৌড়ি, মাথুরা, ভুতুম পেঁছা, এমু, লক্ষীপেঁচা, ডুবুরি, ক্ষুদে মাছরাঙ্গা, কালোমাথা মাছরাঙ্গা, গু শালিক, কাটমৌর, কালোমাথা ময়না, তিলা ঘুঘু, দাঁড়কাক, সবুজ ঘুঘু, কানাবক, সোনালী ফিজেন্ট, টিয়াপাখি, ধূসর বক, গো-বক, নিশি বক, কোকিল, সিপাহি বুলবুলি, রুপালী ফিজেন্ট, টুনটুনি, ছোট সরালী, শ*খচিল, দোয়েল, সাদা ঈঙ্গল, বনমোরগ, চড়-ঁই, ডাহুক, তিলা মুনিরা, মদন টাক, লালচে কাঠঠোকরা, কালেম, কাঠঠোকরা, কাকাতুয়া, খয়েরি ঈগল, ধনেশ, রাজ ধনেশ, ময়ুর, কালিজ ফিজেন্ট, শ*খচিল, তোতা, লাভবোর্ড, মুনিয়া, লালমোহন তোতা, সাদা ঘুঘু, ভূবন চিল, এমারেলড্ ঘুঘু, তার্কিস ফিজেন্ড, গ্রিফন শকুন, লেজার ফ্ল্যামিংগু, সারস পাখি, সাদা পেলিকন, হাড়গিলা, রঙ্গিলা বক। পার্কে আরো যা দেখতে পাবেন, তার মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় সব ধরণের বনাঞ্চলের গাছ-পালা ও বন্যপ্রাণীর মডেল, ম্যুরাল ও স্টাফিং তৈরী করে আলো ও শব্দ প্রবাহের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী ও বনাঞ্চল সম্পর্কে সম্যক ধারনা পেতে রয়েছে প্রকৃতি বীক্ষনকেন্দ্র। রয়েছে ন্যাচারাল হিস্টি মিউজিয়াম। এতে দুই হাজার নানা জাতের প্রাণীর দেহাবশেষ। এ গুলো সেখানে স্প্যাসিমেন ও স্টাফিং সংগ্রহ করে মিউজিয়ামে সংরক্ষন করা হয়েছে। প্রাণীর পাশাপাশি ৩শত প্রজাতির গাছপালার হারবেরিয়াম সিট তৈরী করে মিউজিয়ামে সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। বন্যপ্রাণী সম্পর্কে গনসচেতনতা বৃদ্দি, শিক্ষা ও গবেষনার সুযোগ সৃষ্টিতে পর্যটন, শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য সহায়ক হবে। এছাড়া ডাটাবেজ থেকে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের ধারনা পাবে। পার্কের প্রধান ফটকের পাশে রয়েছে অর্কিড হাউজ। সেখানে দেশ-বিদেশী অন্তত ৫০ প্রজাতির অর্কিড সম্পর্কে বিশদ ধারনা পেতে পারবে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা। পার্কের বাইরে প্রধান ফটকের পাশে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি নান্দনিক ভার্স্কয। পার্কে বিশ্রামের জন্য রয়েছে একাধিক ছাতা, শেড ও বেঞ্চ। প্রকৃতিক কাজ সারতে রয়েছে পাবলিক টয়লেট।

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা কর্মকর্তা মাজাহারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র ও পর্যটন স্পট সমুহ দেখতে চাইলে পর্যটক-দর্শনার্থীরা সরকার নির্ধারিত ফি প্রদানের মাধ্যমে পার্কের ঢুকতে পারবেন। ভ্রমনের জন্য ১৫বছরের উর্ধ্বে প্রতিজনের জন্য প্রবেশ ফি ২০টাকা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য (১৫বছরের নীচে) প্রতিজন ১০ টাকা। শিক্ষা প্রতিষ্টান থেকে শিক্ষাসফরে আগত গ্রুপ থেকে (৩০ থেকে ১শত জন) ২শত টাকা, একশত জনের উধের্ব চারশত টাকা, বিদেশী পর্যটকদের বেলায় প্রতিজনের প্রবেশ ফি ৫ ইউ.এস ডলার বা সমপরিমাণ বাংলাদেশী টাকা, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য একটি বাস একশত টাকা, কার ও মাইক্রোবাস ৫০টাকা। তিনি বলেন, সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার সরকারী ঘোষনা মতে সাফারি পার্ক বন্ধ থাকে। তবে বিশেষ দিবসে ছুটির দিনেও পার্ক খোলা থাকে। অন্য দিবস গুলোতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পার্কে ভ্রমন করতে পারবে পর্যটক-দর্শনার্থীরা।

চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত ) একেএম শফিকুল আলম চোধুরী জানান , ছুটির দিনে সাফারি পার্কে যাতে দর্শনার্থীরা নিরাপদে ভ্রমন করতে পারে সেই জন্য পার্কের সংশ্লিষ্টদেরকে বলা হয়েছে । তাদের পাশাপাশি আইনশৃ*খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে।