ইব্রাহিম খলিল মামুন,কক্সবাজার :

জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেছেন,বাঁকখালী নদী অবশ্যই দখলমুক্ত করা হবে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতও দখলমুক্ত করা হবে। এ নদীকে রক্ষায় আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে হবে হাইড্রোলজিক্যাল ম্যাপ অনুসরণ করে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন যে ৪২০ জন দখলদারের তালিকা করেছে তাদের উচ্ছেদ করতে হবে। এটি হতে পারে বাঁকখালী নদী রক্ষার প্রথম ধাপ। দখলদারের প্রকৃত সংখ্যা ৪২০ জনের স্থলে ৪ হাজার জনের বেশিও হতে পারে। সীমানা নির্ধারণের পর আরও যেসব দখলদার চিহ্নিত হবে তাদেরও পরবর্তীতে উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এই বাঁকখালী নদী যদি আমরা দখলমুক্ত করতে না পারি তা হবে আমাদের সুশীলসমাজের ব্যর্থতা, স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতা, আমাদের আগামী প্রজন্মের ব্যর্থতা, সভ্যতার ব্যর্থতা।’

রোববার দুপুরে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর আয়োজনে কক্সবাজার শহরের একটি অভিজাত হোটেলে ‘দখল ও দূষন থেকে বাঁকখালী নদী রক্ষায় করনীয়’ বিষয়ে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার আরও বলেন, ‘নদী দখলদারের তালিকায় অনেক প্রভাবশালীর নাম আছে। সরেজমিনে বাঁকখালী নদীর বর্তমান অবস্থা দেখে আমি রীতিমত বিস্মিত হয়েছি। আমি ষ্পষ্টভাবে বলতে চাই, নদী দখল করে কেউ আগামীতে কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না, জনপ্রতিনিধি হতে পারবেন না। উচ্চ আদালতের আদেশ অনুসারে, নদী দখল ক্রিমিনাল অফেন্স। যারাই নদী দখল করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নদী রক্ষার প্রশ্নে কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না।’

‘কক্সবাজার এ দেশের মুখমন্ডল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের নামে নদী হত্যা করা যাবে না। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ঠিক রেখেই উন্নয়ন করতে হবে। হাইড্রোলিক ম্যাপ না করে, নদীর সীমানা নির্ধারণ না করে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁকখালী নদী ড্রেজিংয়ের যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তা উচিৎ হয়নি। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হাইড্রোলিক ম্যাপ না করা অপরাধ। তারা সরকারি অর্থের অপচয় করেছেন।’

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসাননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষনিক সদস্য আলা উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আবছার,বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোললন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা,পরিবেশ অধিপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক নুরুল আমিন, দৈনিক প্রথম আলোর কক্সবাজার অফিস প্রধান আব্দুল কুদ্দুস রানা, ইঞ্জিনিয়ার কানন পাল, ইয়ুথ এনভায়রণমেন্ট সোসাইটির প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ মামুন, জেলা জাতীয় পার্টির নেতা মফিজ উদ্দিন, সিনিয়র আইনজীবী রমিজ উদ্দিন, আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের সমন্বয়ক নাজিম উদ্দিন, কলিম উল্লাহ, নেজাম উদ্দিন, দৈনিক সকালের কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক মহসীন শেখ, এইচএম নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

সেমিনারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাঁকখালী নদীর অবস্থা যদি সংকটাপন্ন হয়ে থাকে তবে এ নদীকে কেনো প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষনা করে সকল সংস্থার সমন্বয়ে একটা উদ্ধার পরিকল্পনার ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ঢাকাতে আমরা যে নদীগুলো দেখি, সেগুলো কিন্তু আদালতের আদেশেই প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষিত হয়েছে। কোন নদী যখন ইসিএ ঘোষিত হয়ে যায় তখন সব পক্ষকে এক জায়গায় নিয়ে আসে।’

নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষনিক সদস্য আলা উদ্দিন বলেন, ‘বাঁকখালী নদী দিয়ে আদালতে ৮টি রিট রয়েছে। দেশের আর কোন নদী নিয়ে এত রীট নেই। বাঁকখালী নদী দখল হওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের দুর্বলতা আছে। আছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা। অনেক প্রভাবশালী নদী দখলে জড়িত। একদিনে এ নদী দখল হয়নি। আমি মনে করি, বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের কখনোই পুনর্বাসন করা উচিৎ হবে না। অবৈধ দখলদার হিসেবেই তাদের উচ্ছেদ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন বলুন, আর রাজনৈতিক নেতৃত্ব বলুন প্রত্যেকেই কোন না কোনভাবে দখল প্রক্রিয়ায় যুক্ত। অনেক জমির খতিয়ান হয়েছে, নামজারি হয়েছেÑএটি কিভাবে হলো?’###