মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

গত প্রায় ১৫/১৬ দিন ধরে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ আশংকাজনক ভাবে বেড়ে গেছে। কোনভাবেই সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান গুলো ডেঙ্গু রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেননা। বরং ডেঙ্গু রোগ বাড়ার গতিকে কোন ভাবে থামানো যাচ্ছেনা। শুধু বেড়েই চলছে। এ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ডেঙ্গুর মরণ থাবায় চিরবিদায় নিয়েছে প্রায় শ’খানেক আদম সন্তান। কক্সবাজারও এর থেকে পিছিয়ে নেই। কক্সবাজারে প্রায় অর্ধশত লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও একজনকে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে নাফেরার দেশে চলে যেতে হয়েছে। কক্সবাজার সহ সারাদেশে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর ডেঙ্গু রোগ অনেকটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অর্থাৎ এবার রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অতীতে যেকোনও সময়ের তুলনায় বেশি। স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. জাহিদ মালিক ডেঙ্গু রোগের বিষয় তদারকী নাকরে স্বপরিবারে মালয়েশিয়া গেলেও দ্রুত ফিরে আসতে হয়েছে তীব্র সমালোচনার মুখে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে হবিগন্ঞ্জের সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের উপসচিবের স্ত্রী, চিকিৎসক, পুলিশ কর্মকর্তা, কলেজ শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র ছাত্রী সহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন রয়েছেন। সারাদেশের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে পরিপূর্ণ। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারে লম্বা লাইন। হাসপাতাল গুলোতে তৈরি করা হয়েছে ডেঙ্গু ব্লক ও ডেঙ্গু রোগ চিকিৎসার বিশেষ টিম। ডেঙ্গু রোগ আক্রান্ত সন্দেহে আসছেন জ্বর হলেই। তাদের সবাই ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত নন। সন্দেহবশত: আসছেন তারা। কারণ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে শরীরের অবস্থা চরম খারাপ হয়ে যাওয়ার আগেই চিকিৎসার আওতায় আসতে চান তারা। প্রিভেন্টিভ নিতে চান। তাই ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় করার জন্য লোকজন প্রচন্ড ভীড় করছে হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে। কাজ করছেনা, ঘাতক এডিশ মশা মারার ওষুধে। বিদেশ থেকে এডিশ মশা মারার ওষুধ আনতে গিয়ে মন্ত্রণালয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে গত ১ আগষ্ট বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে স্বশরীরে আদালতে ডেকে নিয়ে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন। সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে দেশব্যাপী পুরোদমে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকবে। এরপর ট্রিপল ‘ই’ নামক আরেকটি ভয়াবহ রোগ বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বাতিল করা হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, ঢাকার দু’সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের ঈদুল আযাহা সহ সব ধরনের ছুটি। চিকিৎসকেরা বার বার বলছেন, ডেঙ্গু জীবানু বিস্তারকারী ঘাতক এডিশ মশা নাকি দিনের বেলায় কামড়ায়, রাত্রে কামড়ায় না। ক্ষুদ্র এডিশ মশা এখন মানুষের জন্য বাঘ-ভাল্লুকের চেয়ে অনেক বেশী আতংকের প্রাণী। এই অবস্থায় ডেঙ্গু রোগ আতঙ্কের মধ্যে রাজধানীর একটি সড়কে মশারি পরে মোটরসাইকেল চালানোর একটি ছবি এবং মশারী পরে হেঁটে যাওয়ার আরো একটি ছবি ভার্চুয়াল জগতে ভাইরাল হয়ে গেছে। ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যম সহ সর্বত্র। ছবি দু’টি কাদের, কে বা কারা, কখন ছবি দু’টি তুলেছে, তা কিন্তু জানা সম্ভব হয়নি। এদু’টি ছবির একটির মধ্যে এক ব্যক্তিকে দেখা যায় মশারি দিয়ে মাথা, শরীর ও বাহন ঢেকে মোটরসাইকেল (স্কুটার) চালাচ্ছেন। মনে হচ্ছে, এ সময় কেউ একজন ছবিটি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। আর একটিতে দেখা যাচ্ছে, পুরো শরীর মশারী গায়ে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। ছবি গুলো দেখে কেউ কেউ বলছেন, ডেঙ্গু রোগ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ার বিরুদ্ধে এটি একটি নীরব প্রতিবাদ। আবার অনেকে বলছেন, দেশে যখন একটা ইস্যু তৈরী হয়, ক্রাইসিস সৃষ্টি হয়, তখন ভার্চুয়াল জগত ও রসিকজনেরা ইস্যু ভিত্তিক বিভিন্ন কর্মকান্ড তৈরী করেন, যেগুলো মানুষের হাসি ও বিদ্রুপের খোরাক হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থান পায়। নাকি ডাইনী এডিশ মশার হিংস্র কামড় থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসকদের পরামর্শ মতে, তারা দিনের বেলায় মশারী পরে রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানো কিংবা মশারী গায়ে দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সারতে হেঁটে যাচ্ছেন, নাকি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য এমন ড্রেসে সেজেছেন, তা কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা। তবে এভাবে রাস্তায় চলাচলকারী দু’ব্যক্তিই ভাল জানবেন, তারা কেন এভাবে রাস্তায় চলাফেরা করছেন।
(লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা)।