তানভিরুল মিরাজ রিপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস নিয়ে বিশুদ্ধ বই বের হয়েছে খুব কম। সম্প্রতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তার এক বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরোধীতা করা নিয়ে কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি। কিন্তু দেশের  ওপর তলার এক শ্রেণীর ব্যক্তিবিশেষগণ প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্টাকালীন সময়ের  বিরোধীতাকারী হিসেবে। প্রসঙ্গত নওয়াব সলিমুল্লাহকে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পূর্নভাবে প্রকাশ করতে পারছে না তার সত্য কারন প্রকাশ না করে ঈর্ষাকাতর হয়ে কিছু ভুল তথ্য দিয়ে জনমানুষকে মুসলমানিকরণ এবং ইতিহাসকে মুসলমানিকরণ করতে চাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করা হচ্ছে।

ইতিহাসের নিজস্ব একটি পথ ও গঠনভিত্তিক বৈশিষ্ট্য আছে। ইতিহাসের জাত নেই,মৌলিকতা আছে তা দুটো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সত্য ও মিথ্যা,শাসক শোষিত,নির্যাতনকারী ও নির্যাতিত। ইতিহাস ধর্ম অধর্ম ব্যাখ্যা করে না।ইতিহাস ঘটে যাওয়া ঘটনার সত্যতা ব্যাখ্যা করে।  পূর্ব বাংলা যখন দিন দিন তৎকালীন ভারতের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর একটি হয়ে যাচ্ছিলো তখনই দিন দিন এলিট থেকে আরো এলিটে পরিণত হচ্ছিলো পশ্চিম বাংলার হিন্দু ও মুসলামনরা। কারন ইংরাজ শাসিত অখন্ড ভারতের রাজধানী ছিলো কলকাতা।  এখানকার হিন্দুরা যেমন দরিদ্র ছিলো, গোঁড়াবাদী ছিলো,তেমনই মুসলমানরাও দরিদ্র ও গোঁড়াপন্থি ছিলো। কারন তাদের ভেতর নগরায়নের প্রভাবও পড়েনি,শিক্ষার প্রভাবও আসেনি। সে কারনে কোলকাতা কেন্দ্রীক বাঙালি এবং জাহাঙ্গীরনগর তথা ঢাকা কেন্দ্রীক বাঙালিদের মাঝে বিস্তর তফাৎ সৃষ্টি হওয়াতে মধ্যিখানে একটি সংকটের সৃষ্টি হয়। যা পড়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছে।

পশ্চিমবাংলায় এখনো একটা বিষয়ে তুখোড় তর্ক চলে।বাংলাদেশ থেকে দেশ ভাগের সময় যাওয়া পূর্ব বাংলার বাঙালীদেরর কোলকাতার এলিট বাঙালিরা তাচ্ছিল্য করে বলেন বাঙাল,আর ওরা নিজেদের দাবি করেন ঘটি। ঘটি বাঙাল দ্বন্দ এখনো চলে। ঘটি বাঙাল দ্বন্দে হিন্দু মুসলমান মুখ্য যতটা নয়,তার চেয়ে মুখ্য ছিলো পূর্ব বাংলা,ভূখন্ড,পিছিয়ে থাকা জনজাতি।

সম্প্রতি পশ্চিমবাংলার জনপ্রিয় সংগীত রিয়েলিটি শো সারেগামাপা থেকে সেকেন্ড রানার-আপ হওয়া নোবেল  বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত নিয়ে একটি সামঞ্জস্যহীন তুলনা করেছেন প্রিন্স মাহমুদের বাংলাদেশ গানটি নিয়ে। নোবেল বলতে চেয়েছে, বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে হাজারগুন বেশি ‘ বাংলাদেশ ‘ গানটি, জাতীয় সংগীত বাংলাদেশকে কম রিপ্রেজেন্ট করে। জাতীয় সংগীত রাজনীতির ওপরের স্থরে থাকে, যেগুলো নিয়ে মন্তব্য করার কোনো অপশন নাই। সেটা কে রচনা করেছে এটা বিষয় একদমই নয়,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কে দিয়ে প্রশ্ন করলে, অনেক গুলো উত্তর আসবে, অনেক বেশি উত্তর আসবে। রবীন্দ্রনাথকে তাচ্ছিল্য করার সুযোগ একদমই নাই। হয়তো রবীন্দ্রনাথের কথাটাকে অনেকে মানতে পারেন না ” সাত কোটি বাঙালির হে মুগ্ধ জননী,রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করোনি। ” কথাটি যে একদমই অসত্য বলেননি তা আজকেও বুঝতে পারা যায়।

বলিউডের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী মোনালী ঠাকুরের পরিবারের সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ আছে। ওনার বড় বোন ফ্যাশন ডিজাইনার, মেহুলী গোস্বামী ঠাকুরের সাথে আমার বড় দিদি আর ছোট ভাইয়ের মতোনই সম্পর্ক। সে সুবাধে মোনালীর পরিবারের সম্পর্কে আমার আর দশজনের থেকেও অনেক কিছু জানার সুযোগ হয়েছে। মোনালী শুধু সংগীত শিল্পী নয়,তিনি অভিনেত্রীও বটে। বলিউডে,সিরিয়ালে অভিনয় করেও তিনি নাম কামিয়েছেন। পুরো পরিবার উস্তাদজি পরিবার বলা চলে। কোনো অপেশাদার পরিবার থেকে সে যেমন উঠে আসেননি তেমনই সংগীত সাধনাকে সে নিয়মিত সাধনা ও অধ্যবসায় ধরে নিয়ে ক্যারিয়ারেরর তুঙ্গে আছেন। ইউটিউব বা টিআরপি রাজনীতির দাবার চাল হয়ে উঠে মোনালী আসেননি প্রকৃত মেধা তার আছে। না হয় বলিউডের মতো প্রতিযোগিতাময় স্থানে লড়ে যাওয়া এতো সহজ মোটেও নয়। নোবেল তার সাথেও বেয়াদবি করেছে, এটা অপেশাদ্বারিত্ব কিংবা জনপ্রিয়তাকে সে স্থায়ী কিছু বলে ধরে নিয়েছেন। যা তাকে খুব সহজে তলিয়ে নিয়ে যাবে। অডিয়েন্স পাল্স এতো সহজে স্থির থাকে না। কয়েকটা মানুষ ছিনলো,চেনা সুরের কিছু গান কভার করে গায়লে যে কাউকে শিল্পী বলতে হবে সেটার পক্ষে আমি নয়। শিল্পী ও শিল্প অনেক উঁচু বিষয়, সাধনারতো বটে। কালের কন্ঠে এক সাক্ষাৎকারে মোনালিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, দশ বছর বাদে মোনালীকে উচিত জবাব দিবে।কি নিয়ে দিবে? যার মৌলিক গানই হলো না,সে মোনালীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ার মানে হলো সে শিল্পকে ধারন করতে পারেনি যতটা সে জনপ্রিয়তাকে ধারন করেছে।

একটা লাইভ অনুষ্ঠান চলছে কোলকাতায়,ফিল্ম ফেস্ট। সেখানে গাইছেন মৌসুমি ভৌমিক। মৌসুমি ভৌমিক সহজিয়ার ছোট পাখি গানটা গাওয়ার অনুমূতি চেয়ে নিয়েছেনও। তিনি স্টেজে তার ক্রেডিবিলিটি স্বীকার করছেন। সহজিয়ার ছোটপাখি গান টা। গান একটি সৃজনশীল শক্তি যা যে কারো দ্বারা সম্ভব নয়। সুতরাং  শিল্পীকে গানের জন্য ক্রেডিট দিতে হবে। এবং এটার অনুমতি নিতে হবে। এটির প্রচলন খুবই জরুরি।

জনপ্রিয়তা,পেশাদ্বারিত্বের দুই হাজারগুন নিচে। জনপ্রিয়তা পেশাদারদেরর জন্য মাত্রই বিড়ম্বনা। নোবেলর এই জায়গাটা ধরে রাখতে হলে বিনয়ী তো হতে হবে, আর পেশাদারিত্বও শিখতে হবে। পেশা ইউটিউব চ্যানেলের ভিউ, আর সাবস্ক্রিপশনেরর মতো টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া যায় না। এটা শিখতে হয়,না হয় যারা আজ ফ্যান হয়ে নোবেলকে কয়েকদিন বাদে বলবে। নো-বল নো-বেল।